পুতুলের জন্মদিন

মা-বাবার সঙ্গে মেলায় গিয়েছে ওরা দুই ভাইবোন। এখন ঢাকা শহরের মেলাতেও গ্রামীণ আবহ ফুটিয়ে তোলার জন্য পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হয়।

জ্যোৎস্নালিপিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2019, 06:12 AM
Updated : 19 Jan 2019, 12:54 PM

ওরা দুজন মেলায় ঘুরে ঘুরে খেলনাপাতি আর হরেক রকম সামগ্রী দেখে, যা ঢাকা শহরের মার্কেটগুলোয় সচরাচর দেখা যায় না। এই যেমন মাটির হাঁড়িপাতিল, মোয়া-মুড়কি, বাতাসা, বিন্নিধানের খই, চালভাজা, পাঁপড় ভাজা, মুড়ির মোয়া ইত্যাদি। ঢাকা শহরে বাস করাতে এসব খেলনা সামগ্রী, খাবারদাবার আর এসব গ্রামীণ বিনোদন উপাদানগুলোর সঙ্গে পরিচয় নেই ওদের। ওরা খুবই উচ্ছ্বসিত।

মা প্রথমে ওদের নাগরদোলায় চড়ায়। তিতি বলে, মা শিশুপার্কে তো এই দোলনা অনেক বড়, সুইচ টিপে দিলেই চলে; এখানে কেনো হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চলছে। মা বলে, আগে তো আমাদের দেশের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, তাই মানুষ এগুলো হাত দিয়েই চালাত। দুই ভাইবোন নাগরদোলাতে চড়ে খুব মজা পায়। নাগরদোলা যখন উঁচুতে ওঠে তখন পুরো মেলা দেখা যায়। তিতি বলে, ভাই আমার মাথার মধ্যে কেমন বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। তুতুন বলে, আমার তো হিসু পেয়েছে বুনু, এখন কি হবে। তিতি বলে, হিসু পেলে করবি বলে ফিক করে হাসে।

এবার ওদের দেখার পালা বায়েস্কোপ। তিতি ও তুতুন দুইজন একটা বাক্সের মুখে ওদের চোখ রাখে, কী অবাক করা কাণ্ড! বুড়ো দাদুটা বাইরে থেকে কথা বলে যাচ্ছে আর ভেতরের মানুষগুলোর অনেক বড়ো বড়ো ছবি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের কথা বলছে না। ভারি মজার ব্যাপার তো।

এবার তুতুন মাকে বলে, মা বায়োস্কোপ তো অনেকটা টিভির মতো, আবার নয়ও। তিতি বলে, কেন? ওখানে বুড়ো দাদুটা বাইরে থেকে কথা বলে। কিন্তু ছবিগুলো কোনো কথা বলে না। নড়াচড়া করে না। এমন কেন? মা বলে আমাদের দেশে যখন টিভি ছিল না, তখন তো এভাবেই আমরা ছবি দেখতাম। মনে করো এটা এক ধরনের টেলিভিশন। তোমার দাদুদাই, দিদুভাই তারাও তো একসময় তোমাদের মতো শিশু ছিল, তারা এগুলো দেখেই বড় হয়েছে। আমরাও দেখেছি। কিন্তু আমাদের সময়ে সাদাকালো টিভি চলে এসেছে আমাদের বাড়িতে।

তিতি বলে, মা চলো আমরা এবার পুতুলনাচ দেখবো। মা এবার ওদের পুতুলনাচ দেখাতে নিয়ে এসেছে। মায়ের কাছে আগেই গল্প শুনেছে পুতুলনাচ কী। তাই তো সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ওদের পুতুলনাচে। ওরা একটা উঁচু জায়গায় চেয়ারে বসে। একজন কথা বলছে শোনা যায়। এবার দুটো পুতুল আসে কথা বলে চলে যায়। ওরা উচ্ছ্বসিত হয়।

এরপর একটা বাঘ আর একজন শিকারি আসে, সেটাও একজন ধারাভাষ্যের মতো করে বলে দেয়। শিকারি বাঘকে মেরে ফেলে ওরা চলে যায়। পুতুলনাচ চলতে থাকে ওদের। তিতি-তুতুনের চোখে বিস্ময়! তিতি বলে, আমি পুতুল নেব। তাতান বলে আমিও!

মেলা থেকে মা ওদের দুই ভাইবোনের জন্য কাপড়ের পুতুল কিনে দেয়, অনেকটা পুতুলনাচের পুতুলগুলোর মতো দেখতে। পুতুল পেয়ে দুজনেই মহাখুশি। বাসায় ফিরে মাথার মধ্যে খেলে যায় নতুন ভাবনা। যথারীতি বায়না নতুন পুতুল এলো ঘরে, তাদের জন্মদিন করতে হবে না! মা এতো করে বলছে, পুতুলের আবার জন্মদিন কী। মায়ের কতো কাজের ব্যস্ততা। কোনো কথাই শুনছে না তারা। পুতলের জন্মদিন তো করতেই হবে! তিতি বলে, মা আমার জন্মদিন আর ভাইয়ের জন্মদিন তো একই দিনে। তাহলে এই যে তুমি আমায় নতুন পুতুল দিলে আর ভাইকেও দিলে তাহলে ওদের জন্মদিন কেন হবে না।

মা বলে, পুতুলের জন্মদিন তো হয় না। ওদের তো প্রাণ নেই। প্রাণ কেন নেই? ওদের প্রাণ দাও তাহলে। প্রাণ তো দেয়া যায় না মা। তিতি কিছুতেই বুঝতে চায় না। প্রাণ তো দিতেই হবে। তাহলে আরেকটা পুতুল যে মামা দিয়েছে ওটার তো প্রাণ আছে, পুতুলটা কথা বলে, গান করে। এটারও প্রাণ দিয়ে দাও, তাহলে কথা বলবে, গান করবে।

মা ওদের বাবাকে বলে, কী মুশকিলে পড়া গেল, কী করি এখন! তাতান কিছু বলে না, চুপিচুপি শোনে; কিন্তু বোঝা যায় কিছু একটা চিন্তা করছে সে। এবার সে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, মেলায় পুতুলনাচের পুতুলগুলো কাপড়েই ছিল। ওরা কথা বললে আমাদের পুতুলগুলোও কথা বলবে। মা, তুমি ওদের জন্মদিনের কেক আনো, তাহলেই ওরা কথা বলবে। কেক আনছো না বলে ওরা রাগ করে কথা বলছে না।

তিতিরও ভাইয়ের কথার সঙ্গে একই মত। সেও বলে, কেক এনে দাও তাহলে কথা বলবে। মা বলে, আজ তো আর সম্ভব না কাল জন্মদিন হবে। কারণ কাল শুক্রবার সবার অফিস ছুটি। কাল তোমাদের স্কুলও ছুটি। এবার তিতি-তুতুন দুজনেই বলে, তাহলে আমাদের বন্ধুরা সবাইকে আসতে বলো, সবাই না এলে জন্মদিন হবে কেমন করে। তারপর তো বেলুন দিয়ে ঘরও সাজাতে হবে।

সময়মতো কেক বেলুন ফুল চলে আসে। তাতান-তিতির তিন মামা আসে। আসে তাদের বন্ধুরাও। মোমবাতি জ্বালানো হয়। ওদের দুজনের হাতে মেলা থেকে কেনা সেই দুটো পুতুল। কেক কাটা হয়। ওরা সবাই বেলুন ফাটিয়ে মজা করে। তাতান-তিতি সবাইকে বলে রেখেছে জন্মদিনের পর তাদের পুতুল কথা বলবে। ওদের বন্ধুরা সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, কখন পুতুলেরা কথা বলবে। কিন্তু পুতুল কথা বলে কোথায়! তারা দুজনের হাতে দিব্যি চুপচাপ আছে। এর মধ্যে দুটি পুতলের নামও ঠিক হয়ে গেছে। তাতানের পুতুলের নাম ‘মম’ আর তিতির পুতুলের নাম ‘মিম’।

ওদের সবচেয়ে পছন্দের মামা নয়ন। দুজনেই এবার মামার কোল ঘেঁষে দাঁড়ায়। তাদের নয়ন মামা বলে, তোমাদের পুতুল কিন্তু এবার কথা বলবে। তিতি বলে, সত্যি বলবে। মামা বলে দেখই না কী কয়। সবার চোখে বিস্ময় আর খুশি। এবার অন্য দুই মামা পুতুলদেরও সুতা আর কাঠির সঙ্গে সুন্দর করে বাঁধে। ঠিক পুতুলনাচের পুতুলদের মতো। আর নয়ন মামা কণ্ঠ নকল করে দুই পুতুল ভাষায় কথা বলে। বলে আজ আমাদের জন্মদিন। তোমরা সবাই একসঙ্গে বলো আজ মম-মিমের জন্মদিন। ওদের সঙ্গে অন্য শিশুরাও খুব খুশি হয়।

তারপর সবই বুঝিয়ে বলে নয়ন মামা। মামা বলে, এই হলো পুতুলনাচ। পুতুলেরা তো কথা বলতে পারে না, কারণ ওদের জীবন নেই। মানুষেরাই পুতুলের মতো করে কথা বলে। আর প্রাণীরাই শুধু কথা বলতে পারে। ভাষা বিনিময় করতে পারে। কিন্তু মানুষ শুধু নিজেদের ভাষা বুঝতে পারে। প্রাণীদের হয়তো নিজস্ব ভাষা আছে কিন্তু মানুষেরা তাদের ভাষা বুঝতে পারে না। তাতান, তিতি আর ওদের বন্ধুরা খুব মজা পায়। ওরা সবাই হুলোর করে বলে, আজকে হলো মজার দিন, আজ পুতুলের জন্মদিন।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!