মানুষ পোষা

ভূতের বাচ্চা কিটকিটি তার বাবার কাছে বায়না ধরেছে তাকে একটি মানুষ ছানা কিনে দিতে হবে। পাশের বাসার টিনটিন ভূতের বাবা গত জন্মদিনে তাকে একটি মানুষ উপহার দিয়েছে। এটা দেখে কিটকিটিরও একটি মানুষের ছানা পোষার শখ হলো।

জাফর সাদেক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 06:40 AM
Updated : 2 Dec 2018, 06:40 AM

কি সুন্দর জামাকাপড় পরা মানুষ, স্বচ্ছ বোতলের ভেতর খেলা করছে। গুনগুন করে গান গাচ্ছে, আমি বন্দি কারাগারে..., কারার ওই লৌহকপাট...। মানুষের এ গুনগুন ভূতদের বোঝার কথা নয়। মানুষের এই গুনগুন-কিচিরমিচির তাদের বেশ পছন্দ। অনেকেরই এখন ঘুম ভাঙে এমন কিচিরমিচিরে।

বোতলের ভেতর মানুষ পোষা শৌখিন ভূতদের একটি আজব শখ। তাই ভূতলোকে পোষা মানুষের  সংখ্যা নেহায়াত কম নয়। যদিও সম্প্রতি মানুষ পোষাটাকে অভৌতিক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভূত কমিশন। অভৌতিক মানে যে কাজ ভূতের জন্য জঘন্য এবং অনেকটা ফৌজদারি অপরাধের মতো। কিন্তু এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি বিধায় মানুষ পালন এবং মানুষের ব্যবসা জমজমাটই আছে। মানুষ পোষার একটি অন্যতম প্রধান কারণ এ জীবগুলো সহজে কথা শিখে যায়। ভূতদের সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করে। বিভিন্ন খাবারের বায়না ধরে। এ বিষয়গুলো ভূতরা খুব উপভোগ করে।

মানুষের থাকার বোতলটাও অনেক মানুষের বসবাসের উপযোগী করে বানানো। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মানুষদের রাখা হয়, এতে করে তাদের রোগ বালাই কম হয়। রোগ বালাই হলে প্রাণীসম্পদ বিভাগে ফোন করলে ভূতডাক্তার এসে চিকিৎসা করে যায়। মানুষ মারা গেলে ভূতরা মানুষকে মমি বানিয়ে রেখে দেয়।

প্রথম শিকারি ভূতরা যখন মানুষ শিকার ধরে নিয়ে আসে, তখন বেশ টানা-হেঁচড়া করে মানুষেরা। কিন্তু ভূতদের মুঠোর ভেতর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বশে চলে আসে। কোনো ভূত পছন্দ করে বাচ্চা মানুষ, কোনো ভূত পছন্দ করে বয়স্ক মানুষ। বয়স্ক মানুষদের পোষ মানানো সমস্যা। এরা বোতলে ঢুকানোর পর সারাক্ষণই বোতল ভাঙ্গার চেষ্টা করে, পালাতে চায় অনেকে, অনেকে খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে। এমন আজব প্রাণী ভূতলোকে আরেকটিও নেই।

ভূতলোকে আফ্রিকান, মঙ্গোলিয়, ককেশিয়, লেটিন, টার্কি, বিভিন্ন জাতের মানুষ আছে। আফ্রিকান জাতের চাহিদা বেশি ও দামি। তাদের কোকড়া চুল ভূতরা বেশ পছন্দ করে। ল্যাটিন মানুষ ভালো গান করে। অনেকে ভূতেরই তাই ল্যাটিন মানুষ পছন্দ। কিটকিটির পছন্দ পিগমি জাতের মানুষ। সে তার বান্ধবীর বাসায় একজোড়া পিগমি দেখেছে। এগুলো আকারে বেশ ছোট হওয়ায় ভূতের বাচ্চারা সহজে যত্ন নিতে পারে। কিন্তু এই জাতের মানুষ খুবই দুষ্প্রাপ্য। পৃথিবী নামক গ্রহের ক্যামেরুন কঙ্গো অঞ্চলে এদের বাস। ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা কমে আসছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ওপর ভূতদের আগ্রহও অনেক বেশি।

কিটকিটির বাবা ভূতবাজারে গিয়ে একটি মানুষের দোকানে গেলো। মানুষের দোকানে গিয়ে পিগমি জাতের কোনো মানুষ পেলো না। এক ভূত ব্যবসায়ীকে অনেক অনুরোধ করার পরও সে কোনো পিগমি জোগাড় করে দিতে পারল না। তার কাছে গ্রিক, ব্রিটিশ, আইরিশ, স্পেনিশ জাতের মানুষ আছে কিন্তু পিগমি নেই। সে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ করেও কোন পিগমি জোগাড় করতে পারল না।

কোন উপায় না দেখে কিটকিটির জন্য একটি ব্রিটিশ মানুষই কিনে নিয়ে গেলো। কিটকিটি আগে কখনো ব্রিটিশ মানুষ দেখেনি। এটা পেয়ে সে ভীষণ খুশি। ব্রিটিশ মানুষটি গুনগুন করে কী যেন বলছে। কিটকিটি অল্প কয়েকদিনের ভেতর ব্রিটিশ জাতের মানুষটিকে ভূতদের ভাষা শিখিয়ে নিলো।

একদিন মানুষটি কিটকিটিকে বলল, তুমি যে এখানে আমাকে আটকে রেখেছ আমার মা-বাবা কান্নাকাটি করছে। তুমি আমাকে পৃথিবীতে দিয়ে আসো। কিটকিটি ভূত শিশু হলেও বুঝতে পারল এভাবে মানুষ পোষা একটি খারাপ কাজ। তাই কিটকিটি তার বাবাকে বলল এই মানুষটাকে তার বাবা মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে আসতে। কিটকিটির দয়ায় একটি ব্রিটিশ মানব পৃথিবীতে ফেরত এসেছিল, কিন্তু সেই মানুষের ভূতলোকের সব স্মৃতি মুছে দেয়া হয়েছিল। কারণ ভূতরা জানে বাগে পেলে মানুষও ভূত বোতলে রেখে দেয়।

তারপর ধীরে ধীরে ভূতরা মানুষ পোষা ছেড়ে দিলো। মানুষরাও আজকাল আর ভূত বোতলে রাখতে পারে না।
 

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানাkidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!