বারাক ওবামা: তোমাদের গান গাই

মাজহার সরকারমাজহার সরকার
Published : 29 August 2018, 09:45 AM
Updated : 29 August 2018, 10:27 AM
বই: অব দি আই সিং- অ্যা লেটার টু মাই ডটারস, লেখক: বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম রাষ্ট্রপতি ও ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, অলঙ্করণ: লরেন লং, প্রকাশনি: নফ বুকস ফর ইয়ং রিডার্স- নিউ ইয়র্ক, প্রথম প্রকাশ: ২০১০। এখানে বইটি বাংলাভাষী শিশুদের উপযোগী করে অনুবাদকৃত।
 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো চমৎকার?

 

তোমরা যখন দূর থেকে হেঁটে আমার কাছে আসো

তখন তোমাদের পায়ের শব্দ কেমন লাগে জানো?

নাচের ছন্দে ভরে যায় আমার পুরোটা দিন

কখনও কি বলেছি তোমাদের হাসি কেমন?

যেন সূর্যের আলো ঝরে পড়ে পুরো ঘরে।

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো সৃজনশীল?

জর্জিয়া ও’কিফ (১৮৮৭-১৯৮৬) ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী। কেবল ছবি আঁকার জন্য তিনি শহর ছেড়ে মরুভূমিতে চলে এসেছিলেন। তিনি এঁকেছেন ফুল, পাতা, ছাল-বাকল আর কাঁটার ছবি। যা কিছু আমাদের চোখে পড়ে না সেসব জিনিস তিনি এঁকেছেন। দেখিয়েছেন প্রকৃতির সবচেয়ে ছোট্ট সৃষ্টির মধ্যেও কতো সৌন্দর্য লুকিয়ে আছ, আছে পাথরের কঠোরতা আর পালকের কোমলতা।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো বুদ্ধিমান?

তোমরা তোমাদের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে নানা বুদ্ধি, আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করো। আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) ছিলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি তার মনের ভেতর আঁকা ছবিগুলোকে বিজ্ঞানের বড় অগ্রগতিতে কাজে লাগিয়েছেন, শক্তি আর আলো দিয়ে বদলে দিয়েছেন পৃথিবীকে।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো নির্ভীক?

জ্যাকি রবিনসন (১৯১৯-১৯৭২) ছিলেন বেইসবল খেলোয়াড়। তিনি দেখিয়েছেন ভয়কে কীভাবে শ্রদ্ধায় পরিণত করতে হয়, আর শ্রদ্ধাকে পরিবর্তন করতে হয় ভালোবাসায়। তিনি ব্যাট ঘুরাতেন সিংহের মতো আর স্বপ্নচারীদের দিতেন দুঃসাহসী স্বপ্ন।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা হলে আরোগ্যকর্তা?

সিটিং বুল (১৮৩১-১৮৯০) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আদিবাসী সিউক্স এর একজন চিকিৎসক। তিনি ব্যথিত হৃদয় ও ভাঙা স্বপ্নের ক্ষত সারাতেন। এটা ঠিক যে আমরা ব্যতিক্রম; তিনি বলতেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঈগলকে কাক হওয়ার প্রয়োজন নেই’। তাকে বন্দি করে কারাগারে রাখা হলেও তার প্রেরণা সবখানে ছড়িয়ে পড়েছিলো, তার জ্ঞান ছুঁয়ে গিয়েছিলো পরবর্তী প্রজন্মকে।

 

কখনও কি বলেছি তোমাদের আছে নিজস্ব সঙ্গীত?

খোঁপায় গন্ধরাজ ফুল গুঁজে রাখা এক নারীর নাম বিলি হলিডে (১৯১৫-১৯৫৯)। তিনি ছিলেন একজন গায়িকা, অসাধারণ সব গান তিনি উপহার দিয়েছিলেন পৃথিবীকে। তার কণ্ঠ ছিলো দুঃখ ও আনন্দ দুইয়ের মিশেল। লোকে গভীর মনোযোগে তার গান শুনতো আর তার গান সবাই সমস্বরে গাইতো।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো শক্তিশালী?

হেলেন কেলার (১৮৮০-১৯৬৮) ছিলেন লেখক, রাজনৈতিক কর্মী ও মানবতাবাদী। জীবনের দীর্ঘসময় নিরব অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়ে তিনি তার পথ তৈরি করেছেন। তিনি চোখে দেখতে পেতেন না, কানেও শুনতে পেতেন না। কিন্তু তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে একে অপরের কথা শুনতে হয়, পরস্পরের দিকে তাকাতে হয়। তিনি বলতেন, জীবনকে সহজ করে পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থেকো না। লক্ষ্যের মুখোমুখি হতে তিনি সবসময় অন্যকে সাহস যোগাতেন।

 

কখনও কি বলেছি অন্যের বিসর্জনকে সম্মান করা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?

মায়া লিন (১৯৬৯- ) একজন ভাস্কর্যশিল্পী। ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে ‘ভিয়েতনাম ভেটেরানস মেমোরিয়াল’ ও সমধিকারের দাবিতে নিহতের স্মরণে তৈরি ‘সিভিল রাইটস মেমোরিয়াল’ স্থাপত্যের নকশা করেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তাগুলো শিল্পকর্ম দিয়ে ভরা থাকা উচিৎ। তাহলে শিল্পকে অন্তরে ধারণ করে আমরা পথ চলতে পারবো, অতীতকে মনে রাখতে পারবো এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করতে পারবো।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো দয়ালু?

জেইন অ্যাডামস (১৮০৬-১৮৩৫) ছিলেন সমাজ সংগঠক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবি ও লেখক। তিনি গরিব লোকদের খাওয়াতেন আর তাদের চাকরি বা কাজ পেতে সাহায্য করতেন। তিনি তার স্নেহের দরজা সবসময় খোলা রাখতেন আর নিরাশ মানুষকে আশা দিতেন। তিনি বয়স্কের শিক্ষা দিতেন, ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের হাসতে আর খেলতে দিতেন যেন তাদের মন চওড়া হয়।

 

তোমাদের কি বলেছি কখনও হাল ছেড়ো না?

যুক্তরাষ্ট্রে যখন বিভিন্ন জাতিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিলো তখন একজন এসে আমাদের অদম্য সহানুভূতি শিখিয়েছিলেন। তার নাম মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (১৯২৯-১৯৬৮)। তিনি আমাদের এমন এক স্বপ্ন দেখিয়েছেন যেখানে সব জাতি ও ধর্মের মানুষ পরস্পরের হাত ধরে হাঁটতে পারবে। তিনি পথ হেঁটেছিলেন ও মনেপ্রাণে মুক্তি চেয়েছিলেন, আমাদের হৃদয় খুলে সেখানে বপন করেছিলেন তার স্বপ্নের বীজ।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো অনুসন্ধিৎসু?

নিল আর্মস্ট্রং (১৯৩০-২০১২) হলেন পৃথিবীর প্রথম মানব যিনি চাঁদের পিঠে পা রেখেছিলেন। তিনি অনেক অনেক উঁচু থেকে পৃথিবীকে দেখেছিলেন, আর আমরা দেখেছি চাঁদের পিঠে তার পায়ের ছাপ। এই ঘটনা আমাদের অনেক দৃঢ়চেতা করে তোলে, আমরা আরও বড় ও সাহসী হওয়ার চিন্তা করি।

 

কখনও কি বলেছি তোমরা কতো অনুপ্রেরণাদায়ী?

সিজার চাভেজ (১৯২৭-১৯৯৩) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শ্রমিক সংগঠক। শ্রমিকরা যখন অসহায় হয়ে পড়েছিলো তখন তিনি তাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। কৃষকরা গরিব কিন্তু অনেক পরিশ্রমী। তারা নিজেদের জমিকে অনেক ভালোবাসে। কৃষক-শ্রমিকদের পক্ষে সিজার প্রহরীর মতো কাজ করেছেন, দাবি-দাওয়া করেছেন এবং কথা বলেছেন। জনগণ হৃদয় দিয়ে তার কথা শুনেছে আর অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে। সিজার বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তোমরাও পারবে’

 

কখনও কি বলেছি তোমরা একটা পরিবারের অংশ?

আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮০৯-১৮৬৫) যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। তিনি জানতেন জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি পুরো জাতিকে এক সুতোয় বেঁধেছিলেন, বন্দি ভাই-বোনদের স্বাধীনতা এনে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি ছিলেন জনগণের মানুষ, খুব সাদাসিধা আর সরল ছিলো তার জীবন। তিনি এমনভাবে কাজ করছিলেন যে আমরা একে অপরের আত্মীয়ের মতো হয়ে গিয়েছি।

 

কখনও কি বলেছি নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব করতে হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯)। তিনি স্বাধীনতা ও সবার জন্য ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করতেন। তার সৈনিকরা খালি পায়ে শীতল নদী পার হয়েছিলো আর এগিয়ে গিয়েছিলো দৃঢ়চিত্তে। দৃঢ়তা ও সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে একটি নতুন দেশ গঠনে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। সে দেশে আছে নীতি-নৈতিকতা, আর তা সে দেশের জনগণ সব আইন-কানুন মেনে চলেন।

 

তোমাদের কি বলেছিলাম প্রতিটা দেশেই রয়েছে নানা জাতি-ধর্ম ও বর্ণের মানুষ?

পৃথিবীর সব দেশেই রয়েছে নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ। সাগরপাড়ের মানুষ আছ। আছে পাহাড়-পর্বতে বসবাসকারী মানুষ। তারা তাদের নিজ নিজ কাজ দিয়ে দেশকে আলোকিত করে তোলে। তারা একে অপরকে সহযোগিতা করে, উৎসাহ দেয়। দেশের ভেতর যা কিছু ভালো তা-ই নিয়ে বেঁচে থাকতে ও লড়াই করতে উৎসাহ দেয়।

 

কখনও কি বলেছি এসবকিছু-ই তোমাদের অংশ?

কখনও কি বলেছি তোমরাও এসবের অংশ?

এবং তোমরাই হলে দেশের ভবিষ্যৎ?

কখনও কি বলেছি আমি তোমাদের ভালোবাসি?

 

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!