অ্যাম্বুলেন্সের ডানা

রাসেলের বয়স ১০ বছর। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে বুবুর সঙ্গে রিকশায় করে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। রাস্তায় তীব্র যানজট।

বোরহান বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2018, 10:54 AM
Updated : 8 August 2018, 10:54 AM

হঠাৎ পেঁপু পেঁপু শব্দ কানে ভেসে এলো। রাসেল রিকশার পর্দার ফাঁক দিয়ে পেছনে চেয়ে দেখলো একটি অ্যাম্বুলেন্স যানজট ঠেলে সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করছে। পেঁপু পেঁপু শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠছে। কিন্তু যানবাহনগুলো মোটেই সামনে এগুতে পারছে না। একসময় অ্যাম্বুলেন্সের বিকট শব্দ থেমে গেলো। তার ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

রাসেল বুবুকে জিজ্ঞেস করলো, ‘বুবু ওখানে কারা কাঁদছে?’

বুবু বললো, ‘অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে একজন অসুস্থ মানুষ ছিল। উনি বোধহয় মারা গেছেন, তাই হয়তো সবাই কাঁদছেন।’

শুনে রাসেলের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কারো সঙ্গে তেমন কথা বললো না রাসেল। বিকেলে খেলতে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। টেবিলে বইগুলো সাজানো। এর মধ্য থেকে একটি বই নিয়ে সে পাতা উল্টাতে থাকলো। পড়ায় মন বসছে না। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছে রাসেল। চোখের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের ছবিটি বারবার ভেসে উঠছে।

রাতে খুব একটা খাওয়া হলো না। সকালে স্কুলে যেতে হবে, তাই তড়িঘড়ি ঘুমাতে গেলো রাসেল। অ্যাম্বুলেন্সের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত একটি স্বপ্ন দেখলো সে- যানজটে পড়া সেই অ্যাম্বুলেন্সটির ছাদ ফু্ঁড়ে হঠাৎ তিনটি পাখা বেরুলো। দেখতে অনেকটা হেলিকপ্টারের পাখার মতো।

যানজটের মাঝখান থেকে উপরের দিকে উঠে অ্যাম্বুলেন্সটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। হওয়ায় রাস্তার পাশের গাছগুলো দুলছে। নিচ থেকে রাসেল সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেই আশ্চর্য দৃশ্যটি দেখছে। উড়তে উড়তে এক সময় যানজট পেরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি আবার রাস্তায় নেমে পড়লো। ছুটে চললো হাসপাতালের দিকে।

ঘুম ভেঙে গেলো রাসেলের। সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখে অনেক খুশি সে। বাড়ির সবাইকে রাসেল তার স্বপ্নের কথাটি বললো। স্কুলের বন্ধুরাও রাসেলের কাছ থেকে অদ্ভুত স্বপ্নের কথাটি শুনলো। কেউ কেউ টিপ্পনি কেটে বললো, ‘স্বপ্ন তো স্বপ্নই, সেটা আবার সত্যি হয় নাকি!’ রাসেল কষ্ট পেলো। আবার কেউ কেউ উৎসাহ দিয়ে বললো, ‘চমৎকার স্বপ্ন তো! তোমার স্বপ্নটা যেনো সত্যি হয়।’ শুনে রাসেল অনেক খুশি হয়।

তার ছোট্ট মনের ভাবনা- বাংলাদেশ যদি ২০১৮ সালে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে পারে তবে তার স্বপ্নও একদিন সত্যি হবে। রাসেল আবারো স্বপ্ন দেখে- ২০৪১ সাল, ২৩ বছর পরের দিনগুলোতে পৌঁছে গেছে সে। ২০১৮ সালের কোনো এক ভোরে যে স্বপ্ন সে দেখেছিল, সেটি আজ সত্যি হয়েছে। তার দেখা সেই স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ পেয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। যানজটে আটকে থেকে এখন আর রোগী মারা যাচ্ছে না। কোথাও তেমন একটা যানজট নেই। কাকতালীয়ভাবে কোনো যানজটের সৃষ্টি হলেও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থায় সেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

ছোট্ট হেলিকপ্টারে করে জরুরিভাবে রোগীকে আশপাশের কোনো হাসপাতালে অনায়াসে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশগুলোর একটি।     

কিডস পাতায় শিশু-কিশোররা লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!