ডিমসুদ্ধ একটি পাখির বাসা

ইয়েপ ডাকলো, ‘এসো সবাই, দেখে যাও। এসো সবাই, দেখে যাও।’ ও এতো জোরে ডাকছিলো যে সবাই চলে এলো।

তানবীরা তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 11:17 AM
Updated : 16 Jan 2018, 11:18 AM

খুশিতে ইয়ান্নেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে?’

ইয়েপ বললো, ‘একটা পাখির বাসা। ডিমসুদ্ধ একটা পাখির বাসা।’

‘কোথায়?’

‘এই যে এখানে গাছের ওপর।’

একসঙ্গে দু’জন গাছের নিচের ডালটাতে চড়ল। আরে সত্যিই তো! ওখান থেকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। পাখির বাসার ভেতর তিনটা হালকা নীল রঙের ডিম দেখা যাচ্ছে।

‘মাগো...’ বললো ইয়ান্নেকে- ‘কি মিষ্টি! ওখান থেকে ছোট ছোট পাখি বের হবে।’

ইয়েপ বললো, ‘এখান থেকে আমি একটা ডিম নিতে পারি না?’ বলেই ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো।

ইয়ান্নেকে বললো, ‘নিও না, নিও না। মা পাখিটা এসে ঠিক বুঝে যাবে।’

ইয়েপ বললো, ‘মা পাখিটা তো গুণতে জানে না।’

কিন্তু ওখানে কে এলো? না, মা পাখি নয়। এলো ইয়েপের মা। এসে বললো, ‘যথেষ্ঠ হয়েছে, এসো এখন, বাড়ির ভেতরে চলো।’

ইয়ান্নেকে বললো, ‘কেন? আমরা তো কিছু করছি না।’

মা বললো, ‘তুমিও এসো, তারপর সোফায় বসে আমরা এটা নিয়ে কথা বলবো।’

সবাই সোফায় বসলো। মা বললো, ‘কখনো পাখির বাসার এতো কাছে গিয়ে ডাকাডাকি আর চেঁচামিচি করতে হয় না। এটা ঠিক নয়। আর তুমি যদি সারাক্ষণ ওদের দেখতে যাও, সেটাও ঠিক নয়। মা পাখিটা তাহলে ভয় পাবে। আর কখনো ফেরত আসবে না।’

ইয়েপ জিজ্ঞেস করলো, ‘যখন ছোট ছোট পাখির ছানা ফুটবে, আমরা তখনও গিয়ে দেখতে পারবো না?’

মা বললো, ‘না। ওদেরকে শান্তিতে থাকতে দিতে হবে। পাখিরা আমাদের ভয় পায়। পাখিরা আমাদের অনেএএএক বড় মনে করে। ভাবো, তোমরা যদি একটা পাখির বাসায় থাকো আর একটা হাতি যদি তোমাদের দেখতে আসে, তাহলে তো তোমরাও ভয় পেয়ে যেতে!

মা বলতে লাগলেন, ‘কিন্তু দেখো, ওই যে মা পাখিটা ফেরত এসেছে। তোমরা তাহলে এখন আর জোরে শব্দ করো না, কেমন!’ ইয়েপ আর ইয়ান্নেকে কথা দিলো যে তারা পাখিদের আর বিব্রত করবে না।

দু’দিন পর যখন ডিম থেকে পাখির ছানাগুলো বের হলো তখন ইয়েপ আর ইয়ান্নেকে, ইয়েপের বাবার সঙ্গে গিয়ে শুধু একটুক্ষণের জন্য দেখে আসলো।

ইয়ান্নেকে বললো, ‘আমরা হলাম এখন হাতি।’

বাবা বললো, ‘হ্যাঁ তাই। এখন আমরা ওদেরকে একটু শান্তিতে থাকতে দেই।’

সবাই বললো, ‘বিদায় পাখিরা।’

অনুবাদকের কথা: পঞ্চাশের দশকে আনি এম জি স্মিড নামে এক লেখক ওলন্দাজ দৈনিক ‘হেত পারোল’ এ ইয়েপ আর ইয়েন্নেকে নামে দুই শিশুকে নিয়ে নানা ধরণের গল্প লিখতেন। সমবয়সী দু’জন শিশু দু’জনের প্রতিবেশী। ‘ইয়েপ আর ইয়েন্নেকে’ শিরোনামে দুই শিশুর দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে গল্প লিখতে লাগলেন স্মিড। এ সিরিজের শেষ গল্পটি ছাপা হয় ১৯৫৭ সালে। সিরিজের একটি অধ্যায় হলো ‘ডিমসুদ্ধ একটি পাখির বাসা’।