রানিখালের সাঁকো

মনে সংকল্প থাকলে একদিন তুমি এগিয়ে যেতে পারবেই।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2017, 08:32 AM
Updated : 16 Oct 2017, 08:32 AM

নাম: রানিখালের সাঁকো

লেখক: আহসান হাবীব

প্রকাশক: বাংলা একাডেমি,ঢাকা।

প্রথম প্রকাশ: ১৯৮১

মূল্য: ১২৫ টাকা

বরিশালে একটি গ্রাম। বরিশালের গ্রামগুলো যেরকম হয় আর কি, শান্ত, সবুজ গাছগাছালি, পাখির কলরব মুখর আর সব কিছুর সংযোগ করে অসংখ্য খাল। সেই খালগুলোর এপাড় ওপাড় যাতায়াত করতে লাগে সাঁকো। বাঁশ দিয়ে বানানো এমন একটি সাঁকোর নামেই উপন্যাসটির নাম, “রানিখালের সাঁকো”

আজীজ সেখানকারই একজন বালক। কিন্তু ওর জীবন ঠিক অন্য বালকদের মতো নয়। কারণ আজীজের যে বাবা মা নেই। তারা দুইজনই মারা গিয়েছেন। বাবা মা মারা যাওয়ার পরে অসহায় ছোট্ট আজীজের সহায় কেউই হয়নি, প্রথম প্রথম চাচা-চাচী একটু আহা উহু করে এগিয়ে এসেছিলেন কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য বেশ খারাপ ছিল। তারা আসলে আজীজের বাবা মায়ের সম্পত্তিটুকু হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। হাতিয়ে ফেলার পরেই তাদের সকল লোক দেখানো ভালোবাসা, যত্ন উবে গেলো। শুরু হলো আজীজের উপর অমানুষিক অত্যাচার।

মার খেয়ে খেয়ে যখন আজীজের জীবন দুঃর্বিসহ তখন আজীজের মামু এক সময় ঠিক করলেন এভাবে আর না। আজীজকে সাহায্য করতে হবে। তাকে স্কুলে পাঠাতে হবে, যেন সে এই জীবন থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। মামু আজীজকে স্কুলের প্রেসিডেন্টের কাছে নিয়ে গেলেন। তার অনুগ্রহে আজীজ অবশেষে স্কুলে যেতে শুরু করতে পারল।

কথায় আছে না অভাগা যেদিক যায় সাগর শুকিয়ে যায়? আজীজের সঙ্গে যেন সেটাই হলো, আজীজের স্কুলেই পড়ত স্কুলের প্রেসিডেন্টের ছেলে জয়নাল। ছেলেটি প্রেসিডেন্টের ছেলে বলে নিজেকে “কিছু একটা” ভাবে। এমনিতে আজীজ খুবই মনযোগী এবং ভদ্র ছাত্র। সবাই আজীজকে এসবের জন্য পছন্দ করে। কিন্তু জয়নাল ঠিক ঠিক সব কৃতিত্ব নিজের দিকে নিয়ে নেয়। এটা সবাই ঠিক দেখেও দেখে না। স্কুলে তো জয়নাল সবাইকে বিরক্ত করেই স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথেও করে।

আজীজ এবং জয়নাল দুইজনের মতো আরও অনেকের বাড়ির পথে রানিখাল নামে একটি খাল আছে। তার উপরে রয়েছে একটা সাঁকো। সেই সাঁকো পার করে তাদের স্কুলে আসতে হয় এবং বাড়ি যেতে হয়। তবে এই সাঁকো পাড় হওয়ার নিয়ম আছে। নিয়মটি হচ্ছে সবার আগে জয়নাল এটি পার হবে, তারপর অন্যরা সেটা পার হওয়ার অনুমতি পাবে। জয়নালের তৈরি এই নিয়ম মানতে সবাই বাধ্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে ফল খুব খারাপ হবে এটা সবারই জানা আছে।

আজীজ এই অদ্ভুত নিয়মের কোনো মাথামুণ্ডু খুঁজে পায় না। তার শুধু মনে হতে থাকে এটা কেন হবে? এটা অন্যরা কেন পার হতে পারবে না। এই কেনর উত্তর খুঁজতে আজীজ একদিন সাঁকোটা জয়নালের আগেই পার করেই ফেলে। সেই অপরাধে আজীজকে ছাড়তে হয় বরিশাল। আসতে হয় অদ্ভুত শহর ঢাকায়।

ঢাকা দেশের রাজধানী। বরিশালের শান্ত পরিবেশে বড় হওয়া সরল একটি বালকের সামনে নিষ্ঠুর রূপে ধরা দেয় এই কোটি মানুষের ভীষণ দ্রুত এই শহরটি। আজীজের কাছে পয়সা নেই, খাওয়া নেই, এমনকি চেনা কোনো লোকও নেই। কে দিবে এই ছেলেটিকে আশ্রয়?

ভাগ্যক্রমে আজীজের দেখা হয় রহমান মিয়ার সঙ্গে। অপরিচিত এই লোক অবতীর্ণ হয় আজীজের পিতার ভূমিকায়। স্বজন ছাড়া এই জীবনে আজীজ কীভাবে নিজেকে টেনে নিবে তা নিয়েই সুন্দর এই উপন্যাস রানিখালের সাঁকো।