ফুলবাগান

বইয়ের নাম: ফুল বাগান লেখক: কাজী আনোয়ার হোসেন প্রকাশক: সেবা প্রকাশনী মূল্য: ৪০ টাকা

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2016, 09:20 PM
Updated : 22 Nov 2016, 09:20 PM

মেয়েটার নাম কান্তা, ভালো নাম ফারিয়া হাসান। বয়স ধরো এই দশ হবে। তবে বয়স দশ বলে সে মোটেই দশ বছরের বাচ্চাদের মতো ফুটফুটে মিষ্টি নয়। সে দেখতে রোগা, পাঠকাঠির মতো তবে তার বেজায় মেজাজ। ওর বদ মেজাজ আর খারাপ ব্যবহারের চোটে মানুষের টেকা দেয়। এই ব্যবহারের কারণেই কান্তাকে কেউ পছন্দ করে না। এমনকি বাড়ির কাজের লোকেরাও না খুব অপছন্দ করে কান্তাকে।

কে কান্তাকে পছন্দ করে, কে করে না এতে কান্তার তেমন কিছুই যায় আসে না। সে নিজের দুনিয়ার শাহানশা। তবে কান্তার এই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। হঠাৎ একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মরে যান কান্তার বাবা মা দুজনই। পৃথিবীতে কান্তা একা হয়ে পরে।

শুরুতে কষ্ট পেলেও কান্তার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। সে যথারীতি কাজের লোকেদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। তবে এইবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখন তো আর বাবা মা বেঁচে নেই। কাজের লোকেরাও তাই আর কান্তার পরোয়া করে না। উল্টা তেরে ফুঁড়ে উঠে কান্তাকে মারতে। কান্তা হঠাৎ আবিষ্কার করে তার বাবা মায়ের চলে যাওয়ার সঙ্গে তার পৃথিবীও বদলে গেছে অনেকখানিই।

একা নিরুপায় কান্তাকে নিতে আসেন মিসেস তরফদার। এখন থেকে কান্তার ঠিকানা হবে ভূঁইয়া বাড়িতে। বাড়িটা বিশাল, তেতলা,খানিকটা রহস্যময়ও। বাড়ির মালিক রাজিউদ্দিন ভূঁইয়া সম্পর্কে কান্তার খালু হন। বাবা মা মারা যাওয়ার পরে যেহেতু মেয়েটির যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই তিনি নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন।

আরিয়াল বিলের পাশে তার বিশাল বাড়িটায় পছন্দ করার মতো কিছুই খুঁজে পায় না কান্তা। তার উপর কান্তার খালু রাজিউদ্দিন ভূঁইয়া খুব মিশুকে কোনো মানুষ নন। কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলেন না। কান্তার কপালটা এতই খারাপ যে কান্তার খালাটিও বেঁচে নেই। তাই ভুঁইয়া বাড়ির কেয়ারটেকার বদ মেজাজি মিসেস তরফদার, কাজের মেয়ে খুদি আর বাগানের মালীদের নিয়ে শুরু হয় কান্তার নতুন জীবন। 

বিশাল বাড়িটার মানুষ বলতেও এই কয়জনাই। অধিকাংশ ঘর তালা মারা থেকে। প্রথমই দিনই তার উপর ফরমান জারি হয় নিজের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে বেশি ঘুরোঘুরি চলবে না।

এমনিই কান্তা রোগা পটকা, তার মধ্যে এরকম বিশ্রী একটা মনখারাপ করা পরিবেশে কার খেতে ভালো লাগে বলো? কান্তার তো একদমই লাগে না। শেষে কাজের মেয়ে খুদি ভেবে-টেবে বের করে যদি বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে তাহলে নাকি কান্তার ক্ষুধা লাগবে।

খেলতে গিয়ে কান্তার সঙ্গে পরিচয় হয় গ্রামের ছেলে রাজুর সঙ্গে। ছেলেটা সহজ সরল কিন্তু ভীষণ মজার। সে পাখিদের কথা বুঝতে পারে,ওরা নিজের পোষা কাক আছে বেজি আছে। রাজি ছাড়াও আরও একজনের সঙ্গে কান্তার বেশ ভাব হয়। তবে সে কোনো মানুষ নয়। একটা পাখি। নাম তার মিস্টার দামো। এদের সঙ্গে ঘুরে ফিরে কান্তা নতুন একটা জীবনকে উপলব্ধি করে যেখানে আনন্দ আছে, বন্ধুত্ব আছে আর সেই খুশিতে কান্তার খেতেও ভালো লাগে। যে কান্তা খেয়েই চাইতো না তার রীতিমতো ক্ষুধা লাগা শুরু করে। 

বাড়ির আশেপাশের ঘুরতে ঘুরতে কান্তা একটা বাগান খুঁজে পায় যেটার দরজা বন্ধ। সেই দরজা দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বন্ধ থাকায় এত ঘন লতাপাতা জন্মে গিয়েছে যে দরজাটা খুঁজেই পাওয়া যায় না। পাচিল দেওয়া বাগানের ভিতরে কী আছে তাও দেখতে পায় না কান্তা। জানা যায় কান্তার খালুই নাকি ১১ বছর আগে তালা মেরে চাবি কোথায় পুতে রেখেছেন যেন কেউ আর সেই বাগানে না যেতে পারে।

এদিকে ভূঁইয়া বাড়ির বন্ধ দরজা থেকেও পাওয়া যায় রহস্যময় শব্দ। এইসহ রহস্য খুব বিচলিত করে কান্তাকে। কেউই তাকে বলতে পারে না তার আশেপাশে আসলে কী হচ্ছে!

ফুলবাগান বইটি মূলত ফ্রান্সেস হজসন বার্নেটের কালজয়ী কিশোর উপন্যাস ‘Secret Garden’ এর ছায়া অবলম্বনে কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা একটি কিশোর উপন্যাস। কাজী আনোয়ার হোসেন বাংলা সাহিত্যে একজন শক্তিশালী লেখক। অনুবাদ এবং বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা গল্পগুলো পাঠকের মনে বেশ প্রভাব ফেলে।

রহস্যময় সেই বাগানের কী হল এটা বলে মজা নষ্ট না করলেও একটা কথা বলার লোভ সামলাতেই পারছি না, এই বইটি পরার পরে বাগান করার জন্য মনটা নেচে উঠবে, এভাবেই লেখক তার ভাষা এবং জীবনবোধ দিয়ে আচ্ছন্ন করবেন এই বইয়ের প্রতি।