ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের হিসাব ছাড়িয়ে গেল

মশাবাহিত এ রোগে এ বছরে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬৭ তে দাঁড়িয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2022, 11:23 AM
Updated : 5 Nov 2022, 11:23 AM

বাংলাদেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে প্রাণঘাতী হয়ে দেখা দিয়েছিল ২০১৯ সালে, সেবার ১৬৪ জনের ‍মৃত্যুর তথ্য দিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এবার দুই মাস বাকি থাকতেই তা ছাড়িয়ে গেল।

মশাবাহিত এই রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর শনিবার দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; তাতে এই বছরে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬৭ তে দাঁড়িয়েছে।

এই ১৬৭ জনের মধ্যে ১০১ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন। ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায় একজন, মানিকগঞ্জ জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ২৬ জনের। এর আগে ২০০০ সালে মারা যান ৯৩ জন।

দেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর এ রোগে মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করতে আইইডিসিআরের সে সময়ের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে প্রধান করে আট সদস্যের ডেথ রিভিউ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এরপর ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৬৩টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৬৪টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করে।

তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালে মৃতের সংখ্যা ১৭৯ বলে উল্লেখ করা হয়।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের ৯৩ জনসহ ২০০৬ সাল পর্যন্ত ২৩৩ জন, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯ জন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮-এই চার বছরে ৫৪ জন মানুষ মারা যায় ডেঙ্গুতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সংবাদ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৭৮৮ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ নিয়ে নভেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন ৪ হাজার ১৭৫ জন। আর মৃত্যু হল ২৬ জনের।

এ বছর মোট ৪২ হাজার ১৯৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। গত একদিনে ভর্তি রোগীদের ৩৭৪ জন ঢাকায় এবং ৪১৪ জন ঢাকার বাইরের।

Also Read: সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশ

Also Read: ডেঙ্গু: দ্রুত কমছে প্লাটিলেট, লাগছে রক্ত

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২ হাজার ২৫৪ জন। অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৪৮৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ১৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে।

এছাড়া ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৬৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ জন, খুলনা বিভাগে ৮৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ২২ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৯ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন সবশেষ ২৪ ঘণ্টায়।

বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় এই মশার দংশনে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। তবে এ বছর এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।

এ বছর অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৯৩২ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিল মাসে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৫৭১ জন, অগাস্ট মাসে ৩ হাজার ৫২১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সর্বোচ্চ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে অক্টোবর মাসেই। এ ছাড়া জুন মাসে ১ জন, জুলাই মাসে ৯ জন, অগাস্ট মাসে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এইডিসবাহিত এই রোগে।