“এখন আমার হাজবেন্ড থানায়। বাচ্চা বাসায়, তার অবস্থা খুব খারাপ। এখন আমি থানায় যামু না বাচ্চারে দেখমু,” বলেন শিশুটির মা।
Published : 26 Jul 2023, 05:04 PM
ডেঙ্গু আক্রান্ত সাত বছরের এক শিশুকে ভর্তি করানো নিয়ে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে শিশুর অভিভাবকের মারামারি হয়েছে।
ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা হাবিবুর রহমানকে আটক করেছে মুগদা থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
মুগদা থানার ওসি আবদুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা একজনকে আটক করেছি।”
ওই ঘটনার পর অসুস্থ শিশুটিকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাকে নিয়ে বাড়ি চলে যান তার মা সাথী আক্তার। তিনি জানিয়েছেন, তার মেয়ের অবস্থা ভালো না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাথী বলেন, তাদের বাসা মানিকনগর এলাকায়। কয়েক দিন আগে তাদের মেয়ে আদিবার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থা খারাপ হলে বুধবার সকালে তার বাবা হাবিবুর রহমান তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
সাথী বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে সেখানকার দরজা বন্ধ পান তারা। তখন একজন আয়ার কাছে মেয়ের অবস্থা জানিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলেন।
“ওই সিস্টার আমাকে বলেছেন ডাক্তারকে দেখাতে। আমার গিয়ে দেখি গেট লক করা। আমরা গেটে নক করলে সেটা খোলেন একজন চিকিৎসক। আমার হাজবেন্ড ওই চিকিৎসককে বলে ‘স্যার আমার বাচ্চা অনেক অসুস্থ, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাকে একটু দেখেন’।
“উনি (চিকিৎসক) ঘুম থেকে উঠছেন হয়ত, এ কারণে মাথা গরম ছিল। বললেন, ‘এইখান থেকে যান, সিট নাই।‘ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে আমার স্বামীকে চড় মারলে আমার স্বামী ওই চিকিৎসকের কলার ধরেন। এরপর আরও কয়েকজন এসে আমাদের মারধর করেন।”
সাথী বলেন, ওই চিকিৎসক তার কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে হাবিবুর রহমান দরজায় লাথি দেন এবং দরজা খুলতে বলেন। এক পর্যায়ে হাবিবুর রহমান ৯৯৯ এ ফোন করেন। পুলিশ এসে তখন হাবিবুর রহমানকে একটি কক্ষে নিয়ে বসায়।
পরে আদিবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুদের জন্য নির্ধারিত ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পাঠিয়ে তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়।
সাথী জানান, ওই অবস্থায় বাচ্চাসহ তিনি আবার নিচে এসে দেখেন, তার স্বামীর হাতে হাতকড়া পরানো। কিছুক্ষণ পরে তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।
“এখন আমার হাজবেন্ড থানায়। আমি দৌঁড়াদৌড়ি কইরা কিছুক্ষণ আগে বাসায় আসছি। বাচ্চাও বাসায়, তার অবস্থা খুব খারাপ। এখন আমি থানায় যামু না বাচ্চারে দেখমু।”
হাসপাতালের পরিচালক বা কেউ এ ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। পরে দুপুরে ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সকালের ওই ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি করেছে। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে ‘ভিন্নভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, “একটি শিশুকে নিয়ে তার অভিভাবকরা হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু মুগদা হাসপাতালে এখন নতুন রোগী ভর্তি করার মত অবস্থা নাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটির অভিভাবকদের জানিয়েছিলেন, সেখানে একটা বিছানায় দুইজন করে শিশু আছে। সেখানে আরেকজন শিশুকে ভর্তি করলে চিকিৎসা যথাযথভাবে হবে না।
“তাকে স্যালাইনও দেওয়া যাবে না, সমস্যা হবে। বলেছিলেন, ‘অন্য হাসপাতালে সিট খালি আছে আপনারা সেখানে যান’। ওই বাচ্চার অভিভাবক ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হয়। সেখানে একটা টুল ছিল সেটা দিয়ে মেরে ওই চিকিৎসকের হাত ভেঙে দেয়। চিকিৎসকরা সারারাত কষ্ট করে চিকিৎসা দিচ্ছেন, রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সেখানে চিকিৎসকের ওপর আঘাত করা অন্তত গর্হিত কাজ।”
পরে যোগাযোগ করলে ডা. আহমেদুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ওই শিশুর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে হাসপাতালে যেতে বলেছি। মুগদা হাসপাতালের পরিচালককে বলেছি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতালে নিতে। শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। বাচ্চার চিকিৎসা আগে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৬৪৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২০ জন।
ঢাকার এ হাসপাতালে রোগী বেশি থাকায় তাদের সামলাতে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সময় বলে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।