ডেঙ্গু: ঢাকা দক্ষিণে রোগী ‘কমছে’, উত্তরে প্রচারণায় জোর

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই মেয়রই রোববার আলাদা সভা করেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2023, 03:49 PM
Updated : 30 July 2023, 03:49 PM

এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায়’ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কমছে বলে দাবি করেছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস; আর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা প্রচারণা জোরদারে কাজ করছেন।

রোববার ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলরদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভা করেন তাপস। সেখানে তিনি বলেন, মশা নিধনে ডিএসসিসির কার্যক্রমের সুফল মানুষ পাচ্ছে।

এ সময় গত ২২ জুলাই থেকে পরবর্তী ছয়দিনে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ভর্তি রোগীর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২২ জুলাই সারাদেশে দুই হাজার ২৪২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫৫ জন রোগী চিহ্নিত করেছেন তারা।

এছাড়া ২৩ জুলাই ১২২ জন, ২৪ জুলাই ১৩৩ জন, ২৫ জুলাই ১২২ জন, ২৬ জুলাই ১২৩ জন এবং ২৭ জুলাই ১০০ জন রোগী ছিল বলে জানান তিনি।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রেকর্ড ২৭৩১ জন ভর্তি হয়েছেন; এর অর্ধেকের বেশি ঢাকার বাইরের।

গত একদিনে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১৫৪৭ জনই ঢাকার বাইরের জেলায়, ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১১৮৪ জন।

Also Read: ডেঙ্গু: দিনে রোগীর সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়াল

সভায় মেয়র তাপস বলেন, “আমাদের কার্যক্রম যে সফল হয়েছে, ঢাকাবাসী যে সুফল পাচ্ছে এটি এরই নিদর্শন। আমরা এই পর্যায়ে আমাদের রোগীর সংখ্যা ১০০-১৫০ এর ঘরে রাখতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে আমাদের কর্মীবাহিনী নিরলস পরিশ্রম করছে বলে।”

এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমসহ অনেকেই ‘ঢালাও মন্তব্য করে’ বলে অভিযোগ করেন তাপস।

“অনেকেই ঢালাওভাবে অনেক মন্তব্য করেন। কিন্তু আমরা যদি গত সাতদিনের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে,” যোগ করেন তিনি।

এদিনের সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ছাড়াও এই বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবীর উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রচারণা আরও জোরদারের কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিক।

রোববার গুলশানের নগর ভবনে ডেঙ্গু মোকাবেলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে নিজ নিজ এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হবে হবে; পাশাপাশি প্রচারণা আরও জোরদার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে আর্ট বুক ছাপানো হয়েছে কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডের সব কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন।

“কাউন্সিলররা নিজেদের ওয়ার্ডের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাউন্সিলররা মাঠে থাকলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।”

এ সময় নির্মাণাধীন ভবনে এইডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া যায় জানিয়ে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, “কাউন্সিলররা তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের নির্মাণাধীন ভবন মালিকদের চিঠি দিয়ে জানাবে যেন পানি জমে না থাকে। একই সঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনের তালিকা তৈরি করবেন।

“তালিকা অনুযায়ী আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত র্যাপিড অ্যাকশন টিম পরিদর্শন করবে এবং মশার লার্ভা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।”

মেয়র বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা প্রতিটি এলাকার মসজিদের ইমাম ও স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে মশক নিধনে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“তারা সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করবে। কোন কোন বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে সেটির তালিকা তৈরি করে লার্ভিসাইডিং বাড়াতে হবে।”

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ আমিরুল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক এবং ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।