বুয়েটের অক্সিজেট: কোভিডে সীমিত ব্যবহারের অনুমোদন

কোভিড রোগীদের অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েট উদ্ভাবিত স্বল্প খরচের যন্ত্র অক্সিজেট সীমিত আকারে উৎপাদন ও ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2021, 05:11 PM
Updated : 28 July 2021, 05:50 PM

বুধবার অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে ২০০ ইউনিট উৎপাদন করে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সালাউদ্দিন বলেন, “এগুলো ব্যবহারের পর অবজারভেশন করে বৃহৎ আকারে অনুমোদন দেওয়া হবে।

"উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য এটা সীমিত অনুমোদন। এগুলো ব্যবহারের পর দেখতে হবে, যন্ত্রটি প্রোপারলি কাজ করছে কিনা, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা এবং ডিভাইসটি আরও উন্নত করা যায় কিনা। এগুলো দেখে পরে আরও বাড়ানো হবে।"

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই যন্ত্রের তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় মে মাসে। তখন এক বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েট জানায়, তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যন্ত্রটি হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

বুয়েট উদ্ভাবিত অক্সিজেট

করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রায় ১০ মাস কাজ করে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে 'অক্সিজেট' নামে সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।

অনুমোদনের বিষয়ে ড. তওফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করেছি তাই আমরা স্বল্প পরিসরে অনুমোদন পেয়েছি। কোনো কোম্পানির অধীনে হলে পরিমাণটা আরও বাড়ত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আবেদন করাকে গুরুত্ব দিয়েছি।

“আরও কিছু পর্যায় আমাদের অতিক্রম করতে হবে। কতৃপক্ষ আমাদের ট্রায়াল চালিয়ে যেতে বলেছেন।“

এই যন্ত্র কোনো বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হাসপাতালে অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

এছাড়া এই যন্ত্রটি ব্যবহার কৌশল সহজ এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন স্থানে সহজে বহনযোগ্য।

দেশের হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় রোগীকে সর্বোচ্চ ১৫ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়। এর বেশি অক্সিজেনের দরকার পড়লে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলা লাগে অথবা আইসিউতে নিতে হয় রোগীকে।

অক্সিজেটের পরীক্ষা চলছে হাসপাতালে

উদ্ভাবকদের দাবি, তাদের তৈরি অক্সিজেট নামের ডিভাইসটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যাবে।

তাদের দাবি, হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলা কিনতে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হয় রোগীকে। আর অক্সিজেট ডিভাইসটির খরচ পড়বে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা।

যন্ত্রটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অনুমোদনের আবেদন জানায় উদ্ভাবক দল।

পরে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মের জটিলতা ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতার কারণে অক্সিজেট অনুমোদন পাচ্ছে না এমন অভিযোগ আনেন তারা।

যন্ত্রটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীক আর হক আদালতের নজরে আনলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দেয় হাইকোর্ট।

এমন প্রেক্ষাপটে অক্সিজেটের সীমিত উৎপাদন ও ব্যবহারের অনুমোদন দিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।