কোভিড: বুয়েটের অক্সিজেটের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাল হাই কোর্ট

কোভিড রোগীদের অক্সিজেনের উচ্চ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভাবিত যন্ত্র অক্সিজেট ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2021, 11:37 AM
Updated : 5 July 2021, 01:17 PM

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অনীক আর হককে।

‘অক্সিজেট’ নামের সি-প্যাপ (C-PAP) ভেন্টিলেটরটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) অনুমোদন দিচ্ছে না উল্লেখ করে সোমবার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন এ আইনজীবী। তখন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তাকে এ পরামর্শ দেন।

অনীক আর হককে উদ্দেশ্যে করে বিচারপতি আদালত বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য তার মূখ্য সচিবকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকেও জানান।”

অনীক পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো ফ্যাক্টরি থেকে উৎপাদন হচ্ছে না বলে অক্সিজেটের অনুমোদন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে ডিজিডিএ।

“এটা কোনো কথা হল! সমানে খবর আসছে, অক্সিজেন সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে কোভিড রোগী মারা যাচ্ছে।”

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সাড়া না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, “সাড়া না পেলে আবার আমি আদালতের কাছে আসব। সত্যি কথা বলতে কি, বিষয়টা বুয়েটে সংশ্লিষ্টদের কারো সাথে আমি যোগাযোগ করিনি। দেখি কি হয়। আশা করছি ভালো কিছু হবে।”

অক্সিজেট সি-প্যাপ প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছেন বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে ‘অক্সিজেট’ নামের উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটর যন্ত্রটি একই সঙ্গে সহজে ব্যবহার ও বহনযোগ্য।

এই যন্ত্র কোনো বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হাসপাতালে অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রায় ১০ মাস কাজ করে সম্প্রতি বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তওফিক হাসান।

ইতোমধ্যে যন্ত্রটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে তৃতীয় ধাপের অনুমতি পেয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুও হয়েছে।

অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং এতে রোগীদের আইসিইউতে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সুক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভাল্ভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার/মিনিট গতিতে সরবরাহ করে। মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০% পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে।

আইনজীবী অনীক আর হক আদালতে বলেন, অক্সিজেটের দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন করোনা রোগীকে এই যন্ত্র দিয়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।

“কিন্তু ডিজিডিএ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না। তারা বলছে, কোস্পানির উৎপাদিত পণ্য না হলে অনুমতি দেওয়া সম্ভব না।”

তখন বিচারপতি বলেন, সরকারের তো ক্রয়নীতি আছে, নানান পদ্ধতি আছে।

আইনজীবী বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সঙ্কটে প্রাণহানি বাড়ছে। সেক্ষেত্রে অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, এই ধরনের ডিভাইস নিয়ে পাবলিক ক্যাম্পেইন দরকার। আপনি (আইনজীবী) এ বিষয়ে  স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন।

“আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইনোভেটিভ মাইন্ডের। তার নজরে আনার জন্য মূখ্য সচিবকে চিঠি দেন। সেই সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও বিষয়টি জানান।”