কোভিড চিকিৎসায় অক্সিজেনের ব্যয় কমাবে বুয়েটের ‘অক্সিজেট’

কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় কম খরচে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে ‘অক্সিজেট’ নামের ভেন্টিলেটর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র-শিক্ষক। যন্ত্রটি একই সঙ্গে সহজে ব্যবহার ও বহনযোগ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2021, 05:43 PM
Updated : 11 May 2021, 05:53 PM

এই যন্ত্র কোনো বিদ্যুৎশক্তি ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডার বা হাসপাতালে অক্সিজেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রায় ১০ মাস কাজ করে সম্প্রতি বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তওফিক হাসান।

মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোর সাধারণ বেডে রোগীকে সর্বোচ্চ ১৫ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়। এর বেশি অক্সিজেনের দরকার পড়লে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলা লাগে অথবা আইসিউতে নিতে হয় রোগীকে।

অক্সিজেটের পরীক্ষা চলছে হাসপাতালে

“আমাদের তৈরি অক্সিজেট নামের ডিভাইসটি দিয়ে হাসপাতালের সাধারণ বেডেই ৬০ লিটার পর্যন্ত হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যাবে।”

তিনি বলেন, “মহামারী পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলা পাওয়া যায় না। এ ধরনের যন্ত্র অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর জন্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হয় রোগীকে। আর আমাদের ডিভাইসটির খরচ পড়বে মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা। এছাড়া এই যন্ত্রটি ব্যবহার কৌশল সহজ এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন স্থানে সহজে বহনযোগ্য।”

এই প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে কাজ করা বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কায়সার আহমেদ বলেন, “অক্সিজেট আইসিইউতে রোগী ভর্তির চাপ কমাবে। যন্ত্রটি অক্সিজেন সিলিন্ডারে ব্যবহার করলে রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়বে প্রায় ১২ ভাগ, যা রোগীর জন্য হতে পারে অনেক স্বস্তিদায়ক।”

যন্ত্রটির কার্যপ্রণালী সম্পর্কে তিনি বলেন, “যন্ত্রটি বাতাস থেকে প্রাকৃতিক অক্সিজেন টেনে ভেতরে এনে সংরক্ষণ করবে। সিলিন্ডারের অক্সিজেনের সঙ্গে প্রাকৃতিক অক্সিজেন একত্র করে প্রায় ৬০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো ক্ষমতা তৈরি করে। ফলে রোগী সহজে অক্সিজেনের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে, নিঃশ্বাস নিতে পারবে বুক ভরে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চল ও যাত্রাপথে অ্যাম্বুলেন্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে।”

ঢাকা মেডিকেলে অক্সিজেটের তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে

ইতোমধ্যে যন্ত্রটি বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদন নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বুয়েট।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে অক্সিজেট সিপ্যাপ এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যন্ত্রটি হাই-ফ্লো নেইজল ক্যানোলার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুও হয়েছে।

সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পে কাজ করেছেন বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ সাঈদুর রহমান।