কোভিড-১৯: অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়ে এখনই ভাবছে না সরকার

নতুন করোনাভাইরাস পরীক্ষার বাড়ানো ও দ্রুত ফল পেতে অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দিলেও দেশে সংক্রমণের সামগ্রিক চিত্র পেতে অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়ে এখনই ভাবছে না সরকার।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 04:33 PM
Updated : 24 Sept 2020, 04:33 PM

অ্যান্টিজেন টেস্টের কার্যকারিতা দেখে অ্যান্টিবডি টেস্ট অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাত্র আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট দিলাম। এটা তো এখনও চালুই হয় নাই। এটা আগে কার্যকর হোক, শুরু হোক আমরা দেখি কী দাঁড়ায়।

“তারপর অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যাবে। আমরা চাই, মানুষ বেশি বেশি উপকার পাক। মানুষে যেটা দিয়ে বেশি উপকার পায় আমরা সেটাই করব।”

মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তে মুখ বা নাক থেকে নমুনা নিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। অন্যদিকে শরীরে রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখতে নমুনা হিসেবে রক্ত নিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়।

অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি দুটোই র‌্যাপিড টেস্ট। তবে অ্যান্টিজেনের ফলাফল পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মাথায়। অ্যান্টিবডি টেস্টের ফলাফল পেতে কয়েক ঘণ্টা লাগে।

দেশে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের পুরো চিত্র সঠিকভাবে বুঝতে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

এই ভাইরোলজিস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের অ্যান্টিবডি আছে তাদের পরবর্তীতে করোনাভাইরাস আক্রমণ করবে না- এটা মোটামুটি জানা যেত।

“একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কতভাগ লোক অ্যান্টিবডি নেগেটিভ, এই রোগের ঝুঁকিতে আছে তা বোঝা যেত। তারা নিজেরাও বুঝতে পারত ঝুঁকিতে আছে। সে হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারত।”

ছবি: রয়টার্স

নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করতে পরামর্শ দিচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। অধ্যাপক নজরুলও এই কমিটির সদস্য।

সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর পরামর্শক কমিটির ২০তম সভা শেষে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন কোভিড-১৯ শনাক্তে শুধু আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে আরও বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কমিটি মনে করে, পিসিআর, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট- একসঙ্গে তিনটি পরীক্ষা চালালে তা সংক্রমণ মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

“এখন সেরোসার্ভিল্যান্স নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে, এজন্যও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা প্রয়োজন।”

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পুরো চিত্র বুঝতে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করা জরুরি। সেরোসার্ভিলেন্স ছাড়াও প্লাজমা থেরাপির জন্য রক্তদাতার শরীরের অ্যান্টিবডির পরিমান জানা দরকার।

“যার শরীরে অনেক অ্যান্টিবডি আছে, তার প্লাজমা আক্রান্ত রোগীকে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এজন্য আমরা চাই অ্যান্টিবডি টেস্টও চালু হোক।”

“তবে অ্যান্টিবডি টেস্ট অ্যান্টিজেন টেস্টের মতো এখনই এত জরুরি নয়,” যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এলে অ্যান্টিবডি টেস্ট লাগবে। ভ্যাকসিন কে আগে পাবে তা ঠিক করতে অ্যান্টিবডির মাত্রা দেখতে হবে।

এবিষয়ে জাতীয় কমিটির পরামর্শ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না দিলে আমরা তা করতে পারব না। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”