স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির পদ ছাড়তে হল আবুল কালাম আজাদকে

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে সমালোচনার মুখে সরে যেতে হল মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2020, 02:02 PM
Updated : 21 July 2020, 07:38 PM

স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঙ্গলবার দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন ডা. আজাদ।

সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে ওই পদে রেখেছিল সরকার।

চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ তাকে দুই বছরের চুক্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সেই আদেশে বলা হয়েছিল, ১৫ এপ্রিল বা যোগদানের তারিখ থেকে তিনি দুই বছরের জন্য মহাপরিচালকের দায়িত্ব থাকবেন।

সেই হিসেবে, আগামী বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তার চুক্তির মেয়াদ ছিল। কিন্তু তার প্রায় এক বছর আগেই তাকে চলে যেতে হল।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি।
 
“এরপর (বিকাল ৫টার পর) তিনি যদি পদত্যাগপত্র দিয়ে থাকেন, সেটা হয়ত গোপনীয় খামে দিয়েছেন, কাল (বুধবার) অফিসে গিয়ে সেটা যদি পাই তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।”
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদত্যাগপত্র হাতে পাওয়ার পর তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তার নিয়োগের অবসান করা হবে।

স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় নানা অনিয়ম নিয়ে এর আগে কথা উঠলেও তাতে সমস্যায় পড়তে হয়নি আবুল কালাম আজাদকে।

কিন্তু গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পেলে বিপাকে পড়েন তিনি।

শুরুটা হয়েছিল চিকিৎসকদের নিম্ন মানের মাস্ক সরবরাহ দিয়ে। এরপর রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর তোপের মুখে পড়েন ডা. আজাদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কক্ষে আলাপচারিতার এই ছবি গত ৮ এপ্রিল ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ, যা নিয়ে সমালোচনায় পড়েন আবুল কালাম আজাদ

এক পর্যায়ে তিনি রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের চুক্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছিল।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও দুই-তিন বছর থাকবে বলে এক বক্তব্যের জন্যও মন্ত্রীদের তোপে পড়েছিলেন ডা. আজাদ। পরে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করে আসছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, যার দায়ও অধিদপ্তরে মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের উপর বর্তায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজাদ এর মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার পর গত মে মাসে তিনি সিএমএইচেও ভর্তি হয়েছিলেন।

 

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নেওয়া দুটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। বলা হচ্ছে, এ প্রকল্পে গগলস ও পিপিইর দাম বাজারমূল্যের কয়েকগুণ বেশি ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর গত মাসে প্রকল্পের পরিচালককে বদলি করা হয়েছে।

মহামারীর মধ্যে নানা অভিযোগ ওঠার পর স্বাস্থ্য সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় এবার বিদায় নিতে হল আবুল কালাম আজাদকে।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ডা. আজাদ এই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৮৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা আবুল কালাম আজাদ ২০০১ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।

১৯৯০ সালে তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এমফিল ডিগ্রি নেন তিনি।

আবুল কালাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক এবং অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দায়িত্বেও ছিলেন।