শিশুমৃত্যু শূন্যে নামানোর অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি মন্ত্রীর

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 12:42 PM
Updated : 25 April 2018, 11:23 PM

বুধবার এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, “আগামী নির্বাচনে বড় একটা অঙ্গীকার থাকবে, যে কোনো মূল্যে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হিসেবে এটা বলে যাচ্ছি।”

‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গী ছিল জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ। 

বাংলাদেশে গত সিকি শতাব্দীতে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও নবজাতকের মৃত্যুহার এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এক হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৭০টি শিশুর মৃত্যু হয়, যাদের বয়স চার সপ্তাহের কম। কেবল তিনটি সহজ বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে এর ৮৮% মৃত্যু সহজেই ঠেকানো সম্ভব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে চাই। বাল্যবিয়ে যত বন্ধ করতে পারব তত বেশি নিরাপদ মাতৃত্ব …বাল্য বিয়েকে নিরুৎসাহিত করছি। একজন মেয়েকে সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৬০০ ধাত্রী নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরে নাসিম বলেন, তাদের ইউনিসেফ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে; নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য সেই প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের গ্রামে পাঠানো হচ্ছে, হেলথ ক্যাম্প হচ্ছে।

 

প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব না করিয়ে অস্ত্রোপচারের প্রবণতার কঠোর সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অনেকে মনে করে সিজার করলে নিরাপদ মাতৃত্ব হবে। একবার সিজার করলে বার বার সিজার করতে হয়, ঝুঁকি থাকে।”

বেসরকারি হাসপাতালে ওই প্রবণতা ঠেকাতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সিজার যারা করতে যায় তার কিন্তু কিছুটা শিক্ষিত মানুষ, পয়সা-কড়ি আছে। তারা মাতৃত্বের বেদনা সহ্য করতে চায় না, নয় মাস বেদনা সহ্য করে আর প্রসব বেদনা সহ্য করতে চায় না।”

তিনি বলেন, “অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে, মা-বোনদের দায়িত্ব নিতে হবে। ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, মায়ের দুধ অমৃতের সমান- এটা থেকে অনেকে সরে আসে, এ নিয়ে কেন ক্যাম্পেইন করতে হবে?”

বাংলাদেশে শিশু খাদ্যের বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গণমাধ্যম উদ্যোগ নিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাতে সমর্থন দেবে বলে জানান নাসিম।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগের দুই মহাপরিচালকের মধ্যে সমন্বয় ‘কম থাকতে পারে’ স্বীকার করে নাসিম বলেন, “উনারা নিজেরা সচেতন, তারা নিজেরা এখন ভাই ভাই হিসেবে কাজ করছেন, কেউ বড় ছোট নয়।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিজারের কারণে মাতৃমৃত্যু বা শিশু মৃত্যু বাড়ছে- এমন নয়। তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের সংখ্যা ‘উদ্বেগজনক’।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সঞ্চালনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি অশা তরকেলসন, সেইভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেনগুপ্ত, বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন আলোচনায় আংশ নেন।  

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।