“মানসিক স্বাস্থ্য যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমি পরিণত বয়সে বুঝেছি,” বলেন সারা যাকের।
Published : 09 Feb 2024, 11:20 AM
শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহতার পথ বেছে নেয়, তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক একিউএম শফিউল আজম বলেছেন, শিক্ষকদেরকেও এখন ভূমিকা পরিবর্তনের সময় এসেছে।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে রোববার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে এক সেমিনারে তার এমন মন্তব্য আসে।
শফিউল আজম বলেন, “আমরা আগে জানতাম, শিক্ষক যা বলবে, শিক্ষার্থীরা তাই শিখবে। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আমাদের রোল চেঞ্জ হয়েছে। কারণ এখন জ্ঞানের আধার অনেক, অনেক বিষয় আছে যা শেখার জন্য এখন আর শিক্ষক লাগে না। বাচ্চারা ইন্টারনেট থেকেই শিখে নিতে পারে তা। তাই শুধু শিক্ষক না, আমাদেরকে এখন গাইডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।"
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (ব্র্যাক আইইডি)-এর আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে 'আশা, প্রশান্তি এবং পদক্ষেপ বিষয়ক আলাপন' শীর্ষক এ সেমিনার হয়।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টাকে একত্রিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এবং আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করা ছিল এই সেমিনারের উদ্দেশ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ব্র্যাক আইইডির রিসার্চ লিড ও প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, “সারা বিশ্বেই সুইসাইডের হার বাড়ছে। আগে প্রতি ১০ লক্ষে ৩৪ জন সুইসাইড করত। এখন প্রতি ১০ লক্ষে ৩৯ জন আত্মহত্যা করছে। কোভিডের পরে এই হার আরও বেড়ে গেছে।"
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে অপমানবোধ থেকে, নিজেকে গুরুত্বহীন হিসেবে আবিস্কার করার কারণে এবং অপ্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যবস্থার চাপে। বাচ্চাদেরকে লেখাপড়াকেন্দ্রিক চাপ দেওয়া যাবে না। মা-বাবা এবং সমাজকে বুঝতে হবে যে সবার লেখাপড়ায় ভালো হতে হবে না, সমাজে করবার মতো আরও অনেকগুলো কাজ আছে।
“তাছাড়া শিক্ষকদের, পরিবারের, বন্ধুদের সংবেদনশীল হওয়ারও ঘাটতি আছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস সামনে রেখে এগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানগুলো কী, সেটা বের করা প্রয়োজন।"
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে একটা শিক্ষাকেন্দ্রিক যন্ত্রণাময় জীবনে ঢুকিয়ে দিচ্ছি। এসব কারণে একটা সময়ে গিয়ে বেঁচে থাকাটাকে তার মৃত্যুর চেয়ে কঠিন মনে হচ্ছে।
“যাদের মাথায় সুইসাইডের চিন্তা ঘুরছে, তাদেরকে ভাবতে হবে, সোশাল সাপোর্ট নিয়ে নিজের সম্ভাবনাগুলো কোথায় বিকশিত করা যেত। একটা রিলেশনশিপ গড়ার সময় সেখানে একটা হোপ থাকে। কিন্তু সেটা ভেঙে যাওয়ার পর দেখা যায়, এটা ফলস হোপ ছিল। তখন ভেঙে পড়া যাবে না। রাগ, জেদ করে মরে যাওয়াটা ইজি সলিউশন।"
অভিনয়শিল্পী, উদ্যোক্তা এবং সমাজকর্মী সারা যাকের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমি পরিণত বয়সে বুঝেছি। আমি ৬০-৭০ এর দশকে বড় হয়েছি, তখন এগুলো কমন ছিলো না।
“সেসময় শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক প্রোগ্রাম হয়েছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রোগ্রাম হত না। আমি একদিন অনুভব করেছি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা উচিত এবং তখন আমি ভেবেছি যে যদি এ বিষয়টাকে আমি গণমাধ্যমে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে অনেকের কাছে পৌঁছাতে পারব।"
ব্র্যাক আইইডির মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা টিম লিড ও সহকারি অধ্যাপক ড. তাবাসসুম আমিনা বলেন, “আমাদের দেশে সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের সংখ্যা অনেক কম। সেজন্য প্রিভেনশন ও আর্লি কেয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা সুইসাইডের চিন্তা করছে, সবার আগে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেল এবং ফ্যামিলি মেম্বাররা সেটা টের পায়।
“এরকমটা হলে আমরা যেন তার চারপাশে একটা সেইফ জোন ক্রিয়েট করি। আমরা যেন তাকে বোঝাই, আমরা তোমাকে শুনছি এবং বুঝতে পারছি। ‘তোমার জন্য আমি আছি', এই ওপেননেসটা গুরুত্বপূর্ণ।"
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)