বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে মহাখালীতে কোভিড ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালে বৈঠক করছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম, সেখানেই এ ঘটনা।
Published : 19 Aug 2024, 12:48 PM
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনেই বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থি চিকিৎসক-কর্মচারীরা।
সোমবার ঢাকার মহাখালীতে কোভিড ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে বৈঠক করছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকাল থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফটকে বিক্ষোভ করছিলেন চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক, কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করছিলেন।
সোমবার সকাল থেকে তাদের বাধার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেননি। বেশিরভাগ কর্মকতার কক্ষে তালা দেখা গেছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাপ্তরিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল।
বেলা ১১টার দিকে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মিছিল শুরু করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। মিছিল নিয়ে তারা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যান।
শুরুতে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসক তাদের বাধা দেন। তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে বিক্ষোকারীরা ভেতরে ঢুকে পড়েন।
সম্মেলনকক্ষে ঢোকার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্কাস আলীর দিকে তেড়ে যান কর্মচারীদের একজন। আক্কাস আলীকে তারা গালাগালি করেন, তাকে থাপ্পড় মারেন।
এ সময় হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তার সামনেই কিছুক্ষণ হট্টগোল করেন বিক্ষোভকারীরা।
তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সাবেক মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন।
তারা বলেন, এই কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা সুবিধা নিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা আহত ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে বাধা দিয়েছেন।
এছাড়া গত ১৫ বছরে কোনো চিকিৎসক, কর্মচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, ওএসডি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। সেজন্য ওইসব কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
আখতার হোসেন সেখানে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “আপনাদের বিষয়টা আমরা বুঝতে পেরেছি। আপনাদের দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখানে এভাবে আলাপ হতে পারে না।”
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিক্ষোভকারীরা উপদেষ্টার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চান। তারা বলেন, উপদেষ্টাকে তারা সম্মান করেন, কিন্তু পরিস্থিতি তাদের ‘বাধ্য’ করেছে।
এ সময় স্বাস্থ্য উপদষ্টা নূর জাহান বেগম বলেন, “আমাকে সম্মান করলে আপনারা এখানে এ ধরনের পরিবেশ তৈরি করতেন না। এরকম আচরণ করতেন না।”
পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের পাঁচজন প্রতিনিধিকে রেখে বাকিদের বের করে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপদেষ্টাসহ সবাই সেখানে কথা বলেন।
বেলা পৌনে ১টার দিকে সবাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলে যান। তবে এ সময় তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।