ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে রেখার ‘সম্পর্কের’ অজানা অধ্যায় জীবনীতে

বইটিতে বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্কে আছেন রেখা, আর সেটা তার স্বামীর মৃত্যুর একটি কারণ।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2023, 07:07 AM
Updated : 22 July 2023, 07:07 AM

বলিউডে বহু ঘটনার জন্ম দেওয়া অভিনেত্রী রেখা চলচ্চিত্রকে আনুষ্ঠানিক বিদায় না জানালেও নিজের অভিনয় জীবনকে নিয়ে গেছেন অন্তরালে। সম্প্রতি সামনে এসেছে রেখার জীবনের অজানা কিছু ঘটনা।

রেখার জীবন নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক ইয়াসির উসমানের লেখা ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বইতে প্রকাশ্যে এসেছে এই অভিনেত্রীর জীবনের সেই অজানা অধ্যায়।

বলা হচ্ছে, ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্কে আছেন রেখা, আর সেটা তার স্বামীর মৃত্যুর একটি কারণ।

রেখার জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই আর চমকপ্রদ সব ঘটনা নিয়ে বইটি সাজিয়েছেন লেখক উসমান।

পরিবারকে বাঁচাতে কিশোরী রেখার চলচ্চিত্রে যাত্রা, শুরুতেই ‘নিগ্রহের’ শিকার হওয়া, টিকে থাকার সংগ্রাম, প্রেম, দুই বিয়ে, বিচ্ছেদ, স্বামীর মৃত্যু এবং তুমুল আলোচ্য বিষয় হল মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার সম্পর্ক- সব অকপটে বলেছেন রেখা। বইটি প্রকাশ করেছে ভারতের জাগারনাট প্রকাশনা সংস্থা।

‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ থেকে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তার মধ্যে একটি হল ব্যক্তিগত সহকারী ফারজানার সঙ্গে ‘লিভ ইনে’ রয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী রেখা। ফারজানার বেশ ভালো প্রভাব রয়েছে রেখার ওপর।

ফারজানা বহু বছর ধরে রেখার সঙ্গে আছেন, যাকে রেখা বরাবর ‘নিজের বোন’ বলে এসেছেন।

ফারজানাই একমাত্র ব্যক্তি. যার রেখার শয়নকক্ষে ঢোকার এখতিয়ার আছে। অভিনেত্রীর বাড়ির খুঁটিনাটি থেকে তার পেশাজীবনের অনেক সিদ্ধান্তও ফারজানাই নিতেন।

ফারজানাকে রেখার জন্য ‘নিখুঁত অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে বইয়ের একটি অংশে বলা হয়, “তিনিই (ফারজানা) একমাত্র ব্যক্তি যার রেখার শয়নকক্ষে প্রবেশাধিকার রয়েছে। এমনকি অভিনেত্রীর গৃহকর্মীকেও তার শোবার ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফারজানাই তার পরামর্শদাতা, তার বন্ধু এবং সমর্থক, এবং রেখা তাকে ছাড়া বাঁচতে পারেন না।“

‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ আরও বলছে, রেখার জীবনের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন ফারজানা। রেখার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের আসা-যাওয়া তার সিদ্ধান্তে হয়। এমনকি রেখার ফোন কলের তালিকাতেও ফারজানার নজরদারি আছে। মোট কথা, রেখার যাপিত জীবন ফারজানাই দেখভাল করছেন।

শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালকে রেখার বিয়ের প্রসঙ্গ কয়েকবার এসেছে বইতে।‘প্রেম’ করে বিয়ে করার এক বছর পরই ১৯৯০ সালে রেখা যখন লন্ডনে, তখন আত্মহত্যা করেন তার দ্বিতীয় স্বামী দিল্লির ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়াল।

বইয়ে রেখা বলেছেন, মুকেশের আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবেও ফারজানাকে দায়ী করেছেন রেখা। তবে মুকেশের মৃত্যুর সঙ্গে ফারজানা কীভাবে জড়িয়ে আছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু লেখেনি টাইমস অব ইন্ডিয়া।

কেন রেখার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়ে মুকেশ আত্মহত্যা করেন, তা আজও জানা যায়নি। মুকেশের মৃত্যুর পর নানা ধরনের ‘রটনা’, ‘ফিসফাস’ শুরু হয় রেখাকে নিয়ে। এমনকি তাকে ‘ডাইনি’ আখ্যাও দেওয়া হয়। যদিও সুইসাইড নোটে মুকেশ তার ‘পরিণতির’ জন্য কাউকে দোষারোপ করেননি, এমনকি রেখাকেও নয়।

সুভাষ ঘাইয়ের মত পরিচালক বলেছিলেন, মুকেশের আত্মহত্যার ঘটনাটি বলিউডকে কলঙ্কিত করেছে। এরপর বলিউড নায়িকাদের কেউ আর ঘরের বউ করতে চাইবে না।

এর আগেও এ বইয়ের কিছু তথ্য উঠে আসে সংবাদমাধ্যমের খবরে। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল রেখার জীবনে।যার শুরুটা রেখার বিয়ের দিন থেকে।

সত্তরের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা বিনোদ মেহেরাকে বিয়ে করার পর তার বাড়িতে যান রেখা। কিন্তু বিনোদের মা কমলা মেহেরা তাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেননি। প্রতিবেশীদের সামনেই তাকে জুতা ছুড়ে মারা হয় বলে রেখার অভিযোগ ছিল।

১৮০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করা রেখার প্রথম অভিনয় তেলেগু সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘সাওয়ান ভাদো’।

ওই সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন অভিনেতা নবীন নিশ্চল। বক্স অফিসে ‘হিট’ হয় সেই সিনেমা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রেখাকে।

একে একে সুপারহিট ছবি আসে রেখার জীবনে। ‘কাহানি কিসমত কি’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘সিলসিলা’, ‘উমরাও জান’, মুকাদ্দার কা সিকান্দর, ‘খুন-পাসিনা’, ‘উৎসব’, ‘দো আনজানে’সহ অসংখ্য ব্যবসা সফল সিনেমা বলিউডকে এনে দিয়েছেন রেখা।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দো আনজানে’ ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। এরপর সিনেমা করতে করতেই বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার নামটি জড়িয়ে যায়।

নিজেদের প্রেমের সম্পর্কটি কখনো স্বীকার না করলেও, একের পর এক সিনেমা উপহার দিয়েছেন অমিতাভ ও রেখা।

১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সিলসিলা’ সিনেমায় অমিতাভ-রেখার রসায়ন দেখে বিমোহিত হয় দর্শক। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এরপর আর কখনো একসঙ্গে পর্দায় হাজির হননি তারা।

রেখাকে শেষ দেখা গেছে ২০১৪ সালে ‘সুপার ন্যানি’ সিনেমায়। পর্দায় নয় বছর ধরে না থকলেও মুম্বাইয়ে নানা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বা বিনোদন আয়োজনে প্রথম সারিতে দেখা যায় তাকে।

সম্প্রতি ভোগ ম্যাগাজিনের মুখোমুখি রেখা যা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে অভিনয়কে তিনি এখনও চিরতরে বিদায় দেননি, আবার খোলাসাও করেননি ঠিক কতদিন অভিনয় থেকে দূরে থাকবেন।

Also Read: সময় হলে কাজই আমাকে খুঁজে নেবে: রেখা