৭৪ দেশের সিনেমা নিয়ে ঢাকায় আন্তর্জাতিক উৎসব

বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের আড়াইশ চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দ্বাবিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। 

রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে 'নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ'- স্লোগান সামনে রেখে আগামী ২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি হবে এ উৎসব। 

এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২৯টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২৩টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রয়েছে ৭১টি। 

এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, ট্রিবিউট, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অফ দা ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম সেশন-এ সিনেমা প্রদর্শিত হবে। 

উদ্বোধনী দিন দেখানো হবে ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম নির্মিত ও জয়া আহসান অভিনীত 'ফেরেশতে' এবং বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজিত ও শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত সিনেমা 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার'। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। 

আগামী ২০ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় পর্দা উঠবে উৎসবের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি থাকবেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শাহরিয়ার আলম। 

জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, নৃত্যশালা মিলনায়তন, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাডেমি মিলনায়তনে দেখানো হবে উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো। 

উৎসবের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় 'আগে এলে আগে দেখবেন' ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে বলে আয়োজকরা জানান। 

উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স 

উৎসবের অংশ হিসেবে ২১ থেকে ২২ জানুয়ারি চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক 'দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স' হবে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের তৃতীয় তলায়। এতে সহযোগিতা করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগ এবং অংশীদার হিসেবে থাকবে ইউএনডিপি।  

কনফারেন্সে দেশি বিদেশি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী নির্মাতারা অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।  

নারী নির্মাতারা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশ্বের খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিশ্ব পরিবর্তনে নারীর নেতিবাচক ও ইতিবাচক ভূমিকা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে সমাধানের উপায়গুলো উঠে আসবে এ কনফারেন্সে।  

২১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় 'দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্সের' উদ্বোধনী দিনে কিশওয়ার কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি। 

মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে এ পর্বটি উদ্বোধন করবেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। বিশেষ অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর সাদেকা হালিম।

সেমিনার ও কর্মশালা 

উৎসবের অংশ হিসেবে আগামী ২৩-২৬ জানুয়ারি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ গ্যালারিতে হবে নির্মাতাদের নিয়ে চার দিনব্যাপী সেমিনার ও কর্মশালা 'ওয়েস্ট মিট ইস্ট: চিত্রনাট্য প্রতিযোগিতা'। 

এ আয়োজনে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য পাবে ৫ হাজার মার্কিন ডলার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী চিত্রনাট্য পাবে ৩ হাজার মার্কিন ডলার এবং তৃতীয় স্থান জয়ী চিত্রনাট্য পাবে ২ হাজার মার্কিন ডলার। 

মাস্টার ক্লাস 

দ্বিতীয়বারের মত উৎসবে থাকছে মাস্টার ক্লাস। ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে সারাদিন ধরে এই পর্ব হবে। প্রথম সেশনে কথা বলবেন চীনের সাংহাই ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার শি চুয়ান। দ্বিতীয় সেশনে থাকবেন ইরানি চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদি এবং তৃতীয় সেশনে অংশ নেবেন ভারতের নির্মাতা, অভিনেতা ও গায়ক অঞ্জন দত্ত।  

সেশনগুলো পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। মাস্টারক্লাস শেষে পরিবেশিত হবে অঞ্জন দত্তের সংগীত। এই চারটি সেশনের জন্যই অগ্রিম নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন লিংক উৎসবের ফেসবুক পেইজে পাওয়া যাবে। 

এছাড়া আগামী ২২ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেকশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি। বিশেষ অতিথি থাকবেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং সাংহাই ফিল্ম এসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার শি চুয়ান।

পর্দা নামবে ২৮ জানুয়ারি  

উৎসবের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, ইরানি চলচ্চিত্র পরিচালক মাজিদ মাজিদি এবং ভারতীয় অভিনয়শিল্পী শর্মিলা ঠাকুর। ২৮ জানুয়ারি এ উৎসবের পর্দা নামবে। 

রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে ভূমিকা রেখে চলেছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৯২ সাল থেকে 'ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব' হচ্ছে। চলচ্চিত্র বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা 'সেলুলয়েড' প্রকাশনার পাশাপাশি নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সেমিনার ও শুদ্ধ সংগীতের আয়োজন করে আসছে এ সংগঠন। 

উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, "ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশের সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র উৎসব, যা দেশে রুচিসম্পন্ন ও ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলে আমরা মনে করি। রেইনবোর এই উৎসব তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ধারার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে যেমন সফল হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনুরূপ ধারাকে বলিষ্ঠ করেছে। এই আন্তর্জাতিক উৎসবে সারাবিশ্বের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন নতুন চলচ্চিত্র সিনেমাপ্রেমীদের উপহার দেওয়াই উৎসবের মূল লক্ষ্য।" 

উৎসবে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস ও সামিট গ্রুপ।  

গবেষক মফিদুল হক, নাট্যজন ম হামিদ, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।