শুরু হচ্ছে দুদিনের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব

এবার সম্মাননা পাচ্ছেন বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম এবং কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2022, 03:54 PM
Updated : 23 Nov 2022, 03:54 PM

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শুক্র ও শনিবার। বরাবরের মতো এবারের উৎসবেও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে গুণীজন সম্মাননা। এবার সম্মাননা পাচ্ছেন বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম এবং কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম। দুজনেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক। 

২৫ ও ২৬ নভেম্বর দুই দিনের এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে। শুক্রবার সকাল ১০টায় উৎসব উদ্বোধন ও গুণীজন সম্মাননা দেবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। 

‘এই জীবনে ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয়বাণী সামনে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হবে ৩৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা ১৯৮৮ সাল থেকে রবীন্দ্রসংগীত ও নবীন শিল্পীদের বিকাশে কাজ করে আসছে। মহামারীর কারণে তিন বছর পর বরতি দিয়ে সরাসরি মঞ্চে ফিরছে এই উৎসব।

বুধবার ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে আয়োজনের তথ্য তুলে ধরেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া। সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদসহ উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম, বুলা মাহমুদ, কাজল মুখার্জী, তানজিমা তমা, সাগরিকা জামালী, কনক খান, সীমা সরকার, রিফাত জামাল মিতু, শর্মিলা চক্রবর্তী, আহমেদ শাকিল হাসমী, সাজ্জাদ হোসেন, জাফর আহমেদ ও রাবিতা সাবাহ।

সংবাদ সম্মেলনে পীযূষ বড়ুয়া বলেন, “শেষবার এই উৎসব করেছি ২০১৯ সালে, মানে সরাসরি মঞ্চে। ২০২০ সালে পারিনি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর কারণে। ২১ সালে করেছি সীমিত পরিসরে অনলাইনে। ফলে এবারের উৎসবটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

তপন মাহমুদ বলেন, “১৯৮৮ সাল থেকেই এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য নবীন শিল্পীদের প্রমোট করা। সেই ধারা অব্যাহত থাকছে এবারের উৎসবেও। আমাদের সময়ে শুধু বিটিভি ছিল বা বেতার। ফলে আমরা সেখানে গাইলে পুরো বাংলাদেশ কাভার হত। এখন অসংখ্য চ্যানেল, কিন্তু শিল্পীরা আগের সেই এক্সপোজার পান না। অথচ আমরা চাই নতুনরা গাইবার সুযোগ পাক, প্রচার পাক। সেই কাজটির জন্য এমন একটি উৎসবের আসলে খুব দরকার। এমন আয়োজন হলে নতুন শিল্পীরা অনেক সাহস পান। তাই এবারও আমরা নতুন সদস্যদের তুলে ধরবো মঞ্চে। সঙ্গে আমরা পুরনোরা তো থাকবোই।”

২৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন ও সম্মাননা প্রদান শেষে বেলা ১১টা থেকে হবে সংগীত পরিবেশনা। মাঝে বিরতি নিয়ে বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। 

পরদিন ২৬ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। এবারের উৎসবের সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০ জন শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে রয়েছেন বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, ড. অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী।

উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবে পাঁচটি সঙ্গীত দল। দলগুলো হলো- সুরতীর্থ, সঙ্গীতভবন, বিশ্ববীণা, বুলবুল লতিকলা একাডেমী (বাফা) ও উত্তরারণ। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এর পর থাকবে পর পর দুইটি কোরাস। দুই দিনের অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেবেন আশরাফুল আলম, জয়ন্ত রায়, বেলায়েত হেসেন, মাহমুদা আখতার ও রেজিওয়ালী লীনা। 

৩৩তম এই উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে যে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতজন মারা গেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি। 

এই প্রসঙ্গে তপন মাহমুদ বলেন, “এই মহামারি শুধু আমাদের মঞ্চটাই কেড়ে নিয়েছে তা নয়। নিয়েছে আরও অনেক তাজা প্রাণ। যারা থাকলে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো। তাই সেই মানুষগুলোকে উৎসর্গ করা হলো এই আয়োজন। আর এবারের স্লোগানের উদ্দেশ্য হলো, ‘আমরা বলতে চাই- আমাদের যত ব্যথা ও বাধা ছিলো জীবনে, তার সব অতিক্রম করবো এই উৎসবের ভেতর দিয়ে।”