তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায় ...

আর তিনটি মাসের জন্য পুরো হল না পঞ্চাশ বছর। চলে যাবার মাত্র দুটো দিন আগেই শ্যুটিং শেষ করলেও পরের ধাপগুলো মিলিয়ে আর পুরোটা সম্পন্ন করে যেতে পারলেন না বিখ্যাত বাংলা গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বকশীকে নিয়ে তার বিশ নম্বর চলচ্চিত্র ‘সত্যান্বেষী’।

সাইফুল আকবর খান বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2013, 07:20 AM
Updated : 2 June 2013, 04:02 AM

আর তিনটি মাসের জন্য পুরো হল না পঞ্চাশ বছর। চলে যাবার মাত্র দুটো দিন আগেই শ্যুটিং শেষ করলেও পরের ধাপগুলো মিলিয়ে আর পুরোটা সম্পন্ন করে যেতে পারলেন না বিখ্যাত বাংলা গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বকশীকে নিয়ে তার বিশ নম্বর চলচ্চিত্র ‘সত্যান্বেষী’। ডায়াবেটিস ছিল, অগ্ন্যাশয়ে সংক্রমণও ছিল। অনিদ্রার জন্য ওষুধ নিতে হত, এমনকি হরমোন চিকিৎসা-পরবর্তী জটিলতাও চলছিল কিছুদিন ধরে। তবু, ইন্ডাস্ট্রির বা আশপাশের কেউ নিশ্চয়ই তাতে কোনো প্রস্তুতি শুরু করে দেয়নি এমন একটা ঘোর দুঃসংবাদ শোনার বা সামলানোর। ৩০ মে ২০১৩-এর এক নিষ্ঠুর সকালে হঠাৎ হার্ট-অ্যাটাক! দেহতরী ছেড়ে দিলেন গুরু। বিনা নোটিশেই নিথর নিশ্চল হল আমাদের দেয়ালে দেয়ালে বিরাজ-বাঁধাই এমনই জ্যান্ত, বাক্সময়, সদাসচল, বিরল দামি এক দেহঘড়ি!

ঊনত্রিশে চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার শুরু করে বিশটি স্রোতেস্বিনী বছরে উনিশটি সফল সুঠাম আলোচিত চলচ্চিত্র জ্বেলে যিনি আরও আন্দোলিত আলোকিত করেছেন বাংলার ঘর-মন-জানালার ছোটবড় সব পর্দা, বিরতিহীন অনুযোগহীন দিব্যি এখনও করছিলেন পুরোদমেই - যথেষ্ট-তরুণ ঊনপঞ্চাশে তার এই উচক্কা চলে যাওয়া, বেমালুম না-বলে হঠাৎ ডুবে যাওয়া নয়তো কী!

অজয়-ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে হিন্দিভাষায় ‘রেইনকোট’ (২০০৪) আর অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে ইংরেজিতে ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’ (২০০৭) ছাড়া তার বাকি সতেরোটি ছবিই বাংলাভাষায়। যথেষ্ট আন্তর্জাতিক জানাশোনা ও স্বীকৃতি সত্ত্বেও মূলত বাংলা ছবিতেই এতটা নিষ্ঠা ও মনোযোগী থেকে যাওয়ার কারণ হিসেবে ঋতুপর্ণ ঘোষের বিনীত সরল ব্যাখ্যা ছিল- “আমি বাংলায় খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার মূলও এতেই শক্ত।” প্রতিদানে এই একটা সত্যি প্রশংসা নিশ্চয়ই তাঁরও প্রাপ্য, যে তিনি নিজেও বাংলার মূলকে আরো অনেকটা শক্ত করে দিয়ে গেছেন বছরের পর বছর পরম পরিচর্যায় সিনেমার জল ঢেলে।

ঋতুপর্ণ’র জন্ম ৩১ অগাস্ট ১৯৬৩, প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা বাবা আর চিত্রশিল্পী মায়ের ঘরে। জন্ম, কর্ম, বেড়ে ওঠা সবই কোলকাতায়। ছোটবেলা থেকেই শখ করে বাবার শ্যুটিংয়ে গিয়ে গিয়ে ক্যামেরা চালানো, চিত্রনাট্য লেখা আর সম্পাদনার নানান কলাকৌশল তাঁর শেখা হয়ে যায় খুব কম বয়সেই। সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল-এর পাঠশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতির ডিগ্রিও নেন তিনি, যদিও পরে অনেক সময়ই মনে করেছেন তুলনামূলক সাহিত্য বা ইতিহাস পড়লেই আসলে ভালো করতেন। প্রথম ক্যারিয়ার শুরু করেন অ্যাডভার্টাইজিং কপিরাইটার হিসেবে। পণ্য বিক্রির জন্য সংক্ষিপ্ত অথচ আবেদনময় ‘ওয়ান-লাইনারস’ বা স্লোগান সৃষ্টিতে তাঁর প্রতিভার পরিচয় মেলে দ্রুতই। আটের দশকে কোলকাতার বিজ্ঞাপনশিল্পে যখন মূল চল ছিল বাইরের ইংরেজি কিংবা সর্বভারতীয় হিন্দি ক্যাম্পেইনগুলোকেই বাংলায় অনুবাদ করে চালানো, সেই সময়ে তরুণ ঋতুপর্ণ আগ্রহী ও সফল হলেন বেশকিছু তরতাজা মৌলিক বাংলা ক্যাম্পেইন জন্ম দেওয়ায়। কোনো কোনো বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভোক্তাদেরকে বুঝবার আর সেই অনুযায়ী যথার্থ বার্তাটি বের করবার এই অভিজ্ঞতাও অনেকটাই ফল দিয়েছে পরবর্তীতে মধ্যবিত্ত দর্শকদের জন্য এবং সমসাময়িক মধ্যবিত্তের মনোসামাজিক টানাপোড়েনকেই নিয়ে এমন সব সম্ভাবনাময়, আকর্ষণীয় আর উপযুক্ত উপাদেয় ছবি বানাতে ঋতুপর্ণ’র অনন্য সাফল্যের পিছনে।

চলচ্চিত্রে শুরুটা ১৯৯২ সালে ছোটদের জন্য ‘হিরের আংটি’ দিয়ে, একটু যেন ছোট করেই। কিন্তু তার দুবছরের মাথায় তাঁর নির্মিত দ্বিতীয় ছবি ‘উনিশে এপ্রিল’-ই (১৯৯৪) পেল শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় সম্মান, তাতে কাজ করে দেবশ্রী রায়ও পেলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। তারপর পুরো পথটাই কাজের সংখ্যা, ভরভার ও ধরন-ভঙ্গির শক্তিতে দ্রুতই বাংলা ছবির নতুন দিনের নতুন ধারার প্রধান দিকপাল হয়ে উঠবার। শুধু নামে উল্লেখ করতে গেলে ১৯৯৭ সালে ‘দহন’; ১৯৯৯ সালে ‘বাড়িওয়ালি’ ও ‘অসুখ’; ২০০০-এ ‘উৎসব’; ২০০২-এ ‘তিতলি’; ২০০৩ সালে ‘শুভ মহরত’ ও ‘চোখের বালি’; ২০০৪-এ ‘রেইনকোট’; ২০০৫-এ ‘অন্তরমহল’; ২০০৬-এ ‘দোসর’; ২০০৭ সালে ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’; ২০০৮-এ ‘খেলা’ ও ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’; ২০১০-এ ‘আবহমান’ ও ‘নৌকাডুবি’; আর ২০১২ সালে এসে ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে প্রামাণ্যচিত্র ‘জীবনস্মৃতি’। চিত্রনাট্য, পরিচালনা এবং শ্রেষ্ঠ ছবি মিলিয়ে তিনি ভারতের জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন ১২টি। এছাড়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারও মিলেছে বেশ কয়েকটি।

পিছনের জাদুকরির সাথে সাথে পর্দার সামনেও নিজের শক্তিশালী উপস্থিতি তিনি দেখিয়েছেন বেশ ক’টি ছবিতে। প্রথম অভিনয় করেন ২০০৩ সালে ‘কাথা দেইথিলি মা কু’ নামে অন্যের নির্দেশিত একটি উড়িয়া ছবিতে। পরে ২০১১-তে এসে দুটো বিশেষ ব্যতিক্রমী চরিত্রে রূপ দেন কৌশিক গাঙ্গুলি’র ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ এবং সঞ্জয় নাগ’র ‘মেমোরিজ ইন মার্চ’ ছবিতে। শেষোক্ত ছবিটির চিত্রনাট্যও ঋতুপর্ণর করা। তারপর আবার ২০১২ সালে প্রকাশিত নিজের সর্বশেষ ফিচার ফিল্ম ‘চিত্রাঙ্গদা’য়ও তিনি নিজেই দেখা দিয়েছেন চরম জটিল মনোদৈহিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে। এছাড়া ইটিভি বাংলায় ‘এবং ঋতুপর্ণ’ আর স্টার জলসা’য় ‘ঘোষ অ্যান্ড কো.’ নামে দুটো শো’র মাধ্যমে টিভিপর্দার দর্শকদের সামনেও তার বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থিতি ছিল বেশ সমৃদ্ধ ও জনপ্রিয়।

স্বতন্ত্র তিনটি পর্যায়ের এক ক্রমবিবর্তন লক্ষ করা যায় তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে। শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তের অহমের পাশাপাশি তাদের মন ও সম্পর্কের সংকট-স্বরূপ বরাবরই তাঁর সিনেমার গল্পের বাস্তুভিটে। সেটাতে তাঁর অসমান্তরাল দখল-দক্ষতায় প্রশ্নাতীত বিশ্বাস রাখেন এন্তার অভিনয়শিল্পী আর নির্দেশকেরাও। তবে, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্যায়ে এর সাথে এসে যোগ হয়েছিল বলিউড-এর তারকাদের নিয়ে কাজ করা থেকে শুরু করে আরো নানাদিক থেকে ক্রমেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মাধ্যমে নিজ ক্ষেত্র আর সামর্থ্য দুটোকেই আরো বড় করে তুলবার আনন্দ। আর শেষভাগে তাঁর সে-পথের বড় অংশ জুড়ে ছিল লিঙ্গসম্পর্ক, সামাজিক লিঙ্গ পরিচিতি এবং যৌনতার কিছু অন্যস্বর, অন্য আবিষ্কার অথবা সচরাচর না-দেখানো তবু বাস্তব কিছু সংকট-অভিজ্ঞান।

নিজের নির্মিত সবক’টি ছবির চিত্রনাট্য তাঁর নিজেরই করা। এটি ছিল তাঁর এক বিরাট বিরল সক্ষমতা। গভীর অন্তর্দৃষ্টির নিবিড় অন্তর্ধ্যানে বাজিয়ে পাওয়া সংলাপ ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া-ঘটনার ঠাস-বুনটে তাঁর চিত্রনাট্য বরাবরই এতটাই স্বয়ম্ভূ শক্তিশালী স্রোতে চলেছে, যে তাঁর শুরুর দিককার অনাড়ম্বর ছবিগুলোর সরল অনায়াস সৌন্দর্যকে আপন মেনে অনেক ভক্ত নবীন স্বাপ্নিক সিনেমাবাজ এমনকি এটাও ভেবে থাকবেন বোধ হয়, যে এমন একটা চিত্রনাট্য পেলেই এই মাপের আরেকটা ছবি বানাতে বাকি আর কিছু নিয়েই তেমন একটা ঘামতে হবে না! তবে হ্যাঁ, ধাপে ধাপে তিনি যেমন প্রবল প্রখর আর দ্রুততর স্রাতোভঙ্গিমায় নিজের চলচ্চিত্র-জাদুযাত্রাকে আরো যতো ঋদ্ধ করে তুলেছেন, পূবের তুমুল আকর্ষী সহজ গল্পবলার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে ‘কিয়ারোসকুরো’র মতো আরো নানা কলাকৌশলের প্রতিপত্তিও যোগ করেছেন উত্তরোত্তর, তাতে তাঁর সরলতম সুন্দরেরও অন্তর্নিহিত জৌলুসের প্রতি মুগ্ধতার সাথে সাথে বাঙালির সম্ভ্রম-বিস্ময়েরও লেখচিত্র দিনে দিনে পর্বতের চূড়ায় উঠেছে। অতি উচ্চকিত না-করেই কী করে একটা ছবির টাইটেল থেকে শুরু করে প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি গান, প্রতিটি দৃশ্যের প্রতিটি ক্ষণ আর কোণ কতো গভীর সুচারু সুপ্রকাশিত করা যায়- আয়ত্ত করেছিলেন তিনি সেই মহামন্ত্র।

কতো বড় বড় অভিনয়শিল্পীকে নিজের ভঙ্গি-ব্যাখ্যার মধ্যে কাজ করিয়েছেন তিনি! আর কতো নতুন শিল্পীকেই না ধরে ধরে কাজ শিখিয়েছেন! মূলত বাণিজ্যিক ধারার অল্প-চ্যালেঞ্জ বেশি-স্টাইলের গতবাঁধা কাজে যারা বেশ অভ্যস্ত অটল ছিলেন, একে একে সেরকম অনেক অভিনয়শিল্পীর থেকেও নিপুণ দক্ষতায় তিনি বের করে এনেছেন চরিত্রানুযায়ী সেরা অভূতপূর্ব অভিনয়। নতুন ধারার আজকের নিয়মিত অপরিহার্র্য তারকা রাইমা সেন সাক্ষাত গুরু মানেন ‘ঋতুদা’কে। আবার অনুপম খের-এর মতো প্রবীণ প্রখ্যাত অভিনেতাও তাঁর এই হঠাৎ মৃত্যুতে এমন আক্ষেপ করেছেন যে ঋতুপর্ণ’র সাথে কাজ করা হল না তাঁর।

চলচ্চিত্রায়নে নিজেকে ইঙ্গমার বার্গম্যান আর সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত অনুসারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি বিনয়ী সততায়। আর বিষয়-বিভঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে তাঁর অনুরাগ-অনুসন্ধানও বরাবরই ছিল প্রকাশিত প্রতিধ্বনিত। রবীন্দ্রনাথকে ঋতুপর্ণর মতো করে আর কেউ অতোটা বোঝেননি- এমন মত আছে কারো কারো। নারী-মনস্তত্ত¡ও ঋতুপর্ণর মতো এখানে আর কেউ বুঝতে পারেননি- এটাও মনে করেন রাইমা সেন, অনুপম খের-সহ আরো কেউ কেউ। এমন পারম্পর্য আর পারঙ্গমতার সঙ্গেই ঋতুপর্ণ ঘোষ মানুষের আন্তঃসম্পর্কের বিশ্লেষণ-বিমোক্ষণ ও রূপায়ণ করেছেন, যা থেকে প্রাণিত হয়ে তাঁর সময়ের আর পরবর্তী অনেক নির্মাতাই আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী হয়েছেন মানব-সম্পর্কের এইসব নৈমিত্তিক নৈর্ব্যক্তিকতার মধ্যেই তাদের চলচ্চিত্রেরও বিষয়-বিচরণে।

যৌনতা, জীবন ও চলচ্চিত্র নিয়ে স্বকীয় স্বতন্ত্র ভাবধারা লালন করেও ঋতুপর্ণ একইসাথে ছিলেন সমসাময়িক অন্য নির্মাতাদের ভঙ্গি আর বিবর্তনের প্রতিও মনোযোগী, উন্মুক্ত, উদার। সবকিছু মিলিয়েই, নির্বিকার নীরবেই কর্মের তীক্ষ্ণতা দিয়ে তিনি কেটেছেন বাংলা ছবিতে তাঁর নিজের দেখানো এক স্বতন্ত্র অথচ সম্পূর্ণ শিল্পপথ।   

ব্যক্তিজীবনে তৃতীয় লিঙ্গপরিচয়ের একজন ব্যক্তি হয়েও সেটাকে কোনো ধরনের সামাজিক বিচলনের বলি না করে তাঁর বুলি এবং বেশভূষায় পাহাড়প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের স্বাতন্ত্র্যকে গৌরবের সঙ্গে ধারণ করেছেন তিনি। এমনকি তাঁর সিনেমাতেও স্পষ্ট ঋজুতা আর গভীর সংবেদের সাথে রেখেছেন অশ্রুত সেই স্বতন্ত্র লিঙ্গসত্তার কণ্ঠ আর মনোজগত। নিজেকে আর আশপাশকে প্রতিদিন নিবিড় সততা আর অহমের সঙ্গে জেনে যাওয়া নিজেকে ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারারও ‘অন্যমত’ হিসেবে দেখতেন তিনি।

আরো অযুত বোধন, আরো অজস্র গল্পকথা মনে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সেগুলো আর আমাদের সঙ্গে ভাগ করা হল না তাঁর। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিচালক শেখর কাপুর তাঁকে ‘চলচ্চিত্রের ব্যাপক সৃষ্টিশীল এক পরিব্রাজক’ হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর অকালমৃত্যুতে দুঃখ করেছেন এজন্যও যে এখন কেবল আরো একটা পরবর্তী পর্যায়ে ঢোকার সময়টা এসেছিল ঋতুপর্ণর। ঋতুপর্ণ ঘোষের থেকে তের বছরের জ্যেষ্ঠ এবং যথেষ্ট উজ্জ্বল অন্য বাঙালি নির্মাতা গৌতম ঘোষ তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁর প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ পরিচালক বলে। এমনকি, ঋত্বিক-সত্যজিতের সাথে একই-সময়ে এক উর্বর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা আরেক মহীরুহ নির্মাতা মৃণাল সেন (বর্তমান বয়স ৯০) যখন আজকের সময়ে বলেন- ‘পরিচালনা শব্দটা মাথায় এলে আমার ঋতুপর্ণের নামই মনে পড়ে’, তখন ঋতুপর্ণর উচ্চতা নিয়ে আর কার কী-ই বা বলার প্রয়োজন থাকে!

“বাগানশেষে সদরদুয়ার, বারান্দাতে আরামচেয়ার / গালচে-পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি / সেথায় এসে মেঘপিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি” ... (‘তিতলি’ ছবির টাইটেলের জন্য ঋতুপর্ণ ঘোষের নিজের লেখা গান থেকে)

সাইফুল আকবর খান: লেখক ও বিজ্ঞাপনকর্মী