জন্মেছিলেন একজন আজম খান

‘পপ-সম্রাট’, ‘রক গুরু’ নাকি ‘মুক্তিযোদ্ধা’- জন্মেছিলেন আজম খান, মৃত্যু নাই যার।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2021, 06:00 AM
Updated : 28 Feb 2021, 06:00 AM

আজম খান না থাকলে ব্যান্ড সংগীত হত না- প্রচলিত কথা হলেও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সংগীত পাগল মানুষটি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অথচ তার গান নিয়ে যতটা ‘উত্তেজনা’ প্রকাশ করা হয়, যুদ্ধের গল্প তেমনভাবে উচ্চারিত হয় না।

জন্মদিনে আজম খানকে নিয়ে লিখলেন আরাফাত শান্ত।

কুমিল্লার সালদাহে পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কার উড়িয়ে দিতে মিশনে এসেছেন কয়েকজন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, তাদের দলনেতা আজম খান। তবে প্রস্তুতি হিসেবে তাদের অস্ত্রশস্ত্র খুবই সামান্য।

পিস্তল, একটা অটো মেশিনগান, আর চারটা হ্যান্ড গ্রেনেড, এইটুকুই সম্বল! বাঙ্কারে গিয়ে তারা বুঝতে পারলেন ওটা সামান্য বাঙ্কার নয়, রীতিমতো ভারী মেশিনগানে সুসজ্জিত ছোটোখাটো একটা দূর্গ, সামান্য ভুল করলেই মুক্তিযোদ্ধারাই মারা যাবেন।

আশার বিষয় হল, পাক সেনারা তখন খাওয়া দাওয়ায় মশগুল। এই সুযোগেই যা করার করতে হবে।

দলনেতা হিসেবে আজম খান নির্দেশনা দিলেন তিনি গুলি ছোঁড়ার আগে কেও যেন আক্রমণে না যায়। আজম খান অপেক্ষা করতে করতে তার মাথায় কী চিন্তা খেলে গেলো কে জানে!

শিল্পী মানুষ, অটো মেশিন দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে গেয়ে উঠলেন, ‘এয়সা মওকা ফির কাহি মিলেগা...’ পাক সেনারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি বর্ষণের মুখে ৬জন বিদায় নিল ধরাধাম থেকে।

আজম খান প্রায় ৩০টিরও বেশি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু এগুলো কখনও কোনো বইয়ের পাতায় উঠে আসেনি। এমনকি উপরের কাহিনীও একমাত্র ঘটনা যেটা আজম খানের মুখ দিয়ে বের করতে পেরেছেন সংগীত শিল্পী মাকসুদুল হক।

যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলেই আজম খান চুপ হয়ে যেতেন, চোখ বন্ধ করে ফেলতেন। হয়তো ট্রমার মতো সেই সময়গুলো কখনও মনে করতে চাননি।

‘বাংলাদেশের রকগাথা: আজম খানের উত্তরাধিকার’ এই বইয়ের আরও একটি চমৎকার অধ্যায় হচ্ছে আজম খান কেনো পপ গুরু নন তার পুরোপুরি একাডেমিক ব্যাখ্যা করেছেন মাকসুদ।

মিডিয়া পপ গুরু তকমা দিয়ে আজম খানের যে রক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে তারও দারুণ ব্যাখ্যা রয়েছে।

ছোট আকারে হলেও আজম খান সম্পর্কে এমন অনেক কিছুই জেনেছি যেটা মাকসুদ না লিখলে হয়তো কোনোদিনই জানা হত না!

যেমন আজম খানের থাপ্পড় না খেলে হয়তো মাকসুদ কোনোদিন বাংলা গানই করতেন না, আমরাও পেতাম না মাকসুদের কালজয়ী গানগুলো!

আজম খানকে নিয়ে খুব চমৎকার একটি মন্তব্য রয়েছে বর্তমান সময়ের গায়ক প্রবর রিপনের।

তিনি বলেছিলেন, “বাংলায় সবচেয়ে বেশি হৃদয় দিয়ে গান গাওয়া গায়ক আজম খান।”

এর একটা প্রমাণ আমি এখানেই দিতে চাই।

বাংলায় খুব বিখ্যাত একটা গানের অ্যালবাম হচ্ছে ‘দাগ থেকে যায়’। সেথায় আজম খানের একটি গান রয়েছে নাম ‘দূরে আছি এই ভালো’। গানটির ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে আজম খান কন্ঠের যে জাদু দেখিয়েছেন তা আপনাকে নাড়া দিয়ে যাবেই।

বিটিভিতে ১৯৭৪ সালে আজম খান ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আসি আসি বলে তুমি’ গাইবার পরে একটা ঘোষণা দিলেন, “যারা ইতিমধ্যেই মৃত বা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এ নতুন গানটি তাদের জন্য।”

গানটা কী? অবশ্যই, ‘বাংলাদেশ’।

১৯৭৪ সালে মুদ্রামান এত কমে যায় উনি কমলাপুরে দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসা ছিন্নমূল ছেলেমেয়েদের হাতে টাকা দিয়েও বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন না। প্রতিদিন মানুষ মরছে খাওয়ার অভাবে। যুদ্ধের ট্রমা আর এই দুর্ভিক্ষ দেখে দেখে থেকে তিনি গানটা গেয়েই নিষিদ্ধ হন। তদানীন্তন সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।

আজম খানের চারপাশে যারা ছিলেন তাদের উচিত এমন আরও বই লেখা। সেই অস্থির সময়ে সমস্ত সমালোচনার চাদর গায়ে জড়িয়ে আজম খান ছাড়া বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক শুরু হতো কীভাবে?

শুভ জন্মদিন গুরু আজম খান!