আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে কনসার্ট আয়োজন করা, এবি ফাউন্ডেশনের জন্য আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বাচ্চুর ব্যবহৃত গিটার এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে জাদুঘর তৈরি করা এ সমঝোতা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত।
Published : 18 Oct 2023, 02:27 PM
‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘এই রূপালি গিটার’, ‘ফেরারি মন’সহ আরও যেসব গানে মৃত্যুর আগে ও পরে অনুরাগীদের ‘মাতিয়ে রেখেছেন’ সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু, সেই গানগুলোর প্রসার ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গানের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হবে বাচ্চুর ব্যবহৃত গিটার এবং বাদ্যযন্ত্রসহ অনান্য সামগ্রীও।
এই পরিকল্পনায় একটি স্মৃতি জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে আইয়ুব বাচ্চুর স্টুডিও ‘এবি কিচেন’ এবং এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপ।
মঙ্গলবার এশিয়াটিক কার্যালয়ে চুক্তি সই করেন এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটির গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ যাকের এবং এবি কিচেনের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা। এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের কো-চেয়ারপারসন সারা যাকেরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে প্রয়াত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলোর প্রচার এবং প্রসারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে এশিয়াটিক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এশিয়াটিক জানায়, নতুন শিল্পী দিয়ে নতুনভাবে গানগুলো তৈরি করা, আইয়ুব বাচ্চুর সৃষ্টি করা গানগুলোর মাধ্যমে নতুন নতুন যন্ত্রশিল্পী খুঁজে বের করা, আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে কনসার্ট আয়োজন করা, এবি ফাউন্ডেশনের জন্য আর্থিক সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অইয়ুব বাচ্চুর ব্যবহৃত গিটার এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে জাদুঘর তৈরি এই সমঝোতা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত।
আইয়ুব বাচ্চুর গান অথবা এলআরবির কোনো গান প্রচার অথবা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হলে এশিয়াটিক এবং এবি কিচেনের অনুমোদন নিতে হবে বলেও জানায় এশিয়াটিক।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুর পর থেকেই তার গান নিয়ে কাজ করছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডশন। তবে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে গত বছর আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকীতে। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চুর গানের কপিরাইট করা হয়েছে।
বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা বলেন, “আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর ৫ বছরে এসে আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছি এবং আজ আমরা এশিয়াটিকের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর করলাম। বাচ্চুর কাজগুলাকে নিয়ে সামনে হয়ত আরো সুন্দর সুন্দর কিছু কাজ আসবে। আপনারা জানতে পারবেন, দেখতে পারবেন দেশবাসী সেটার প্রতীক্ষায় থাকেন।
“আমি ধন্যবাদ জানাই এশিয়াটিককে, আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। আমাদের সাথে এগিয়ে আসার জন্য। আশা করি সামনে আরো বড় বড় কিছু আমরা কাজ করব। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
ইরেশ যাকের বলেন, “আইয়ুব বাচ্চু আমাদের কাছে একজন কিংবদন্তী। উনার রেখে যাওয়া সৃষ্টিকে আমরা চেষ্টা করব এগিয়ে নিয়ে যেতে, যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাকে জানতে পারে এবং তার সৃষ্টিগুলোর চর্চা করে। এশিয়াটিক গর্বিত এবি কিচেনের সাথে যুক্ত হতে পেরে।”
‘ফিলিংস’ থেকে ‘সোলস’ হয়ে ‘এআরবি’
এলআরবি ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং প্লেব্যাক শিল্পী। তার কণ্ঠের ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘একদিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘চল বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’র মত বহু গান শ্রোতাদের হৃদয়ে এখনও বাজে।
আইয়ুব বাচ্চুর ডাক নাম রবিন। জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট, চট্টগ্রামে। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো।
কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা।
পেশাদার ব্যান্ডশিল্পী হিসেবে বচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৮ সালে। ব্যান্ড দলে ‘ফিলিংস’ এর সঙ্গে সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। দুই বছরের মাথায় যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলসে।
টানা দশ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন জয়, স্বপন আর এস আই টুটুল।
শুরুতে এলআরবির পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।
এলআরবির প্রথম কনসার্ট হয়েছিল ঢাকার একটি ক্লাবে। সেখানে ইংরেজি গানই পরিবেশন করেছিলেন তারা। কিছুদিন পর ঢাকা শিশু একাডেমিতে এক কনসার্টে প্রথমবারের মত ক্লাব বা হোটেলের বাইরে দর্শকদের সামনে আসে এলআরবি।
১৯৯২ সালে দলের নামেই বাজারে আসে এলআরবির জোড়া অ্যালবাম এলআরবি- ১ ও ২। এরপর গত ২৭ বছরে সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, স্বপ্ন, ফেরারী মন, বিস্ময়, যুদ্ধ, স্পর্শসহ ১৪টি অ্যালবাম শ্রোতাদের সামনে এনেছে এলআরবি।
আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম একক অ্যালবাম ‘রক্ত গোলাপ’ বাজারে আসে ১৯৮৬ সালে। তখনও তিনি সোলসে। প্রথম অ্যালবাম খুব একটা সাড়া না পেলেও ১৯৮৮ সালে ‘ময়না’ অ্যালবামে গায়ক হিসেবে বাচ্চু শ্রোতাপ্রিয় হতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়।
পরের বছরগুলোতে ‘সময়’, ‘একা’, ‘প্রেম তুমি কি’, ‘কাফেলা’, ‘পথের গান’, ‘জীবন’, ‘রিমঝিম বৃষ্টি’, ‘বলিনি কখনো’র মত একক অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছেন বাচ্চু। ২০১৫ বাজারে আসে তার একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প ’।
লাল বাদশা, গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান, ব্যাচেলর ও চোরাবালি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন বাচ্চু। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান- ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।