নায়িকা না খলনায়িকা? কী বলছেন দীপান্বিতা মার্টিন

ওয়েব সিরিজ কাইজার দর্শকের সামনে নতুন করে হাজির করেছে এই অভিনেত্রীকে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 04:40 AM
Updated : 17 August 2022, 04:40 AM

‘গোর’ মেলে ধরেছিল সম্ভাবনা, এনে দিয়েছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এবার দীপান্বিতা মার্টিনকে দর্শক নতুন করে চিনল কাইজার দিয়ে।

ওয়েব সিরিজ ‘কাইজার’ মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্লাটফর্ম হইচইয়ে। এই থ্রিলার সিরিজের শেষে এসে মুনিয়া হয়ে এসে প্রদীপের আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন দীপান্বিতা।

গল্পের গুরুত্ব অনুসারে যদি নায়ক-নায়িকা নির্ধারিত হয়, তবে কি এই গল্পের নায়িকা মুনিরা?

এমন প্রশ্নে গালভরে হেসে দীপান্বিতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “ব্যক্তি জীবনে হোক আর গল্পে হোক, প্রত্যেকটা চরিত্র যে কাজগুলো করে, তার পেছনে একটা ব্যাখ্যা থাকে। সে জানে সে ঠিক কাজটাই করছে।

“কিন্তু আমরা আমাদের বিচারে তাকে নায়িকা কিংবা ভিলেন বলে থাকি। এখন বিশ্বব্যাপী কিংবা আমাদের দেশে যে কাজ হচ্ছে, এগুলো চরিত্রভিত্তিক। একটি চরিত্র গল্পে কতটা গুরুত্ব বহন করছে, তার উপর নির্ভর করে কে নায়িকা, কে নায়িকা না।”

কাইজার পরিচালনা করেছেন তানিম নূর। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন আফরান নিশো। মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, আহমেদ রেজা রুবেল, নাদের চৌধুরী, রিকিতা নন্দিনী শিমু, শাহেদ আলী, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমন আনোয়ার, ইমতিয়াজ বর্ষণ, শঙ্খ জামান, জিনাত সানু স্বাগতাও অভিনয় করেছেন কাইজারে।

সবার মধ্যে সমালোচক প্রশংসা পাওয়া নিয়ে দীপান্বিতা বলেন, “যারা কাইজার দেখেছেন, তারা জানেন, আমার চরিত্রটি না থাকলে গল্প যে যায়গায় এখন দাঁড়িয়েছে, সে জায়গায় দাঁড়াবে না। সে অর্থে বলতে পারি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র মুনিরা।

“সে নায়িকা না ভিলেন সেটা ছেড়ে দিয়েছি আমার দর্শকের উপরে। দর্শক যাচাই করে কেউ বলতে পারেন নায়িকা, কেউ বলতে পারেন ভিলেন। দর্শক যেটাই বলবেন আমি সেটাই মেনে নেব। বিষয়টা দর্শকই নির্ণয় করুক।”

স্কুলে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েই অভিনয়ে আসেন দীপান্বিতা। অষ্টম শ্রেণিতেই নাম লেখান থিয়েটারে। এরপর সিনেমায় নেমে ২০২০ সালে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

তবে দর্শক সাড়ার কথা বিবেচনা করলে দীপান্বিতার অতীতের সব কাজকে ছাপিয়ে গেছে কাইজার।

তা স্বীকার করেই এই অভিনেত্রী বলেন, “ছোটবেলা থেকেই তো অভিনয় করি। কিন্তু চরিত্রের নাম ধরে সাধারণ মানুষ আমাকে খুব কম ডেকেছে। আমি তো জাতীয় পর্যায়ে অতটা পরিচিত না। দর্শক এখন আমাকে চেনেই মুনিরা হিসেবে।

“অনেক দর্শকই সিরিজটা দেখে আমার উপর ক্ষেপেছেন। একজন লিখেছেন, ‘আপনারে পাইলে থাপড়ায়া দাঁত-দুত ভাইঙ্গা দিতাম’। সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর রেসপন্স পেয়েছি কাইজার থেকে। অনেক নতুন ভক্ত তৈরি হয়েছে কাজটা দিয়ে।”
টিভি নাটক, ওয়েব প্লাটফর্ম কিংবা বড় পর্দায় দেখা যায় থিয়েটার থেকে আসা শিল্পীদের অভিনয় বেশিই সাবলীল হয়।

থিয়েটার কীভাবে ক্যামেরার সামনের কাজকে সাহায্য করে- দীপান্বিতার কাছে জানতে চাইলে বলেন, “ক্যামেরা শিল্পীর কাছে আসে। কিন্তু থিয়েটারে শিল্পীকে দর্শকের কাছে যেতে হয়। মঞ্চের কাজটা লাউড। গ্যালারির শেষ দর্শকের কাছে শিল্পীর সংলাপ পৌঁছাতে হয়। তবে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে গেলে ছোট ছোট এক্সপ্রেশনগুলোও খুব ডিটেইলে দেখাতে হয়।”

সরাসরি দর্শকের সামনে অভিনয়ের কারণে মঞ্চ শিল্পীদের জড়তা ও ভয় ভেঙে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়, বলেন দীপান্বিতা।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন একজন শিল্পীর জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন আনে?

দীপান্বিতা বললেন, “ব্যক্তি জীবনে খুব বেশি পরিবর্তন আনে না। তবে আমার ক্যারিয়ারের জায়গা থেকে যদি বলি, আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার ভেতর ভালো করার ভয় তৈরি হয়েছে। এই প্রাপ্তি অভিনেত্রী দীপান্বিতাকে আরো ভালো কাজ করার জন্য ধাক্কা দিচ্ছে।”

তবে গোর সিনেমায় কাজ করার সময় পুরস্কারের বিষয়টি মাথায়ই আসেনি দীপান্বিতার। তার ভাষ্যে, কাজের সময় কাজের বাইরের কিছু চিন্তা মাথায় নিলে মূলত চরিত্রটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এখন অনেক কাজের প্রস্তাব আসে, বাছাই করেন কীভাবে দীপান্বিতা?

“প্রথমে দেখি আমি আগে কখনও এমন চরিত্রে অভিনয় করেছি কি না। যদি করে থাকি তাহলে আগ্রহবোধ করি না। দ্বিতীয়ত দেখি, গল্প থেকে এই চরিত্রটা বাদ দিলে গল্পটা আগাবে কি না। গল্পের ক্ষতি হবে কি না। যদি দেখি, গল্পে চরিত্রটা অনবদ্য। তাকে লাগবেই, তখনই হ্যাঁ বলি।”

দীপান্বিতা এখন চলচ্চিত্রকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে ওয়েব সিরিজেও দেখা যাবে তাকে। কারণ, যে দুটি ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন তার সঙ্গে চলচ্চিত্রের খুব বেশি পার্থক্য তিনি পাননি।

সেপ্টেম্বর মাসে একটি সিনেমার কাজ শুরু করবেন দীপান্বিতা। এখনই বিস্তারিত জানাতে চাইলেন না। কাজ শুরু করে তারপর জানাবেন।

শুধু বললেন, “খুব বড় একটা কাজ। আমার ক্যারিয়ারে এমন কাজ করিনি। একটু যদি বলি, আমাদের সমাজ গ্রহণ করে না এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি খুবই এক্সাইটেড কাজটা নিয়ে। এর বেশি কিছু বলতে চাইছি না।”

দীপান্বিতা বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেছেন। এখন সেগুলো মুক্তির অপেক্ষায়। কোনোটার কাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে রয়েছে ফজলে রাব্বী মৃধার পরিচালনায় ‘পায়ের তলায় মাটি নেই’, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘পায়ের ছাপ’, নুরুল আলম আতিকের ‘মানুষের বাগান’, নূর ইমরান মিঠুর ‘পাতাল ঘর’ । সিনেমাগুলো নিয়ে খুবই আশাবাদী এই নায়িকা।