গুলজারের জীবন বদলে দেওয়া সেই বইটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ইংরেজি সংকলন ‘দ্য গার্ডেনার’-এর উর্দু অনুবাদ।
Published : 18 Aug 2023, 06:08 PM
তিনি যাই লেখেন, তার প্রতিটি শব্দ ধরা দেয় জীবন্ত হয়ে; সাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্রে সমান সফল; বাংলা সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী, রবীন্দ্রভক্ত এক কবি। গুলজার একাধারে সাহিত্যিক, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার। যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন, সাফল্য পেয়েছেন।
বহুমুখী প্রতিভাধর গুলজার জীবনের ৮৯ বছর পূর্ণ করেছেন বৃহস্পতিবার।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা লিখেছে, শৈশবে রবীন্দ্রনাথের বই পড়ে জীবন বদলে যায় গুলজারের। সেই থেকেই শুরু হয় নতুন পথ চলা।
অতীতে এক সাক্ষাৎকারে গুলজার বলেছিলেন, ‘খামোশ সওয়াল’ অর্থাৎ ‘নিঃশব্দ প্রশ্ন’ শব্দ দুটি যে পাশাপাশি যেতে পারে তা কোনোদিনও ভেবে দেখেননি তিনি। আর সেটিই একসময় তার গান লেখার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠে।
গুলজার জানান, ছোটবেলায় রাতে পড়ার জন্য এক লাইব্রেরি থেকে ৪ আনার বিনিময়ে একটি করে বই নিয়ে আসতেন তিনি। একদিন লাইব্রেরিতে কোনো বই পছন্দ হচ্ছিল না তার। তখন লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তাকে রবীন্দ্রনাথের একটি বই ধরিয়ে দেন। বাড়ি ফিরে তিনি সেই বইয়ে ডুবে যান। বইটা এতটাই মনে আচড় কেটেছিল যে তা আর ফেরতও দেননি তিনি। আর সেই বইটি থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি তার আকর্ষণ। গুলজারের জীবন বদলে দেওয়া সেই বইটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ইংরেজি সংকলন ‘দ্য গার্ডেনার’ এর উর্দু অনুবাদ।
গুলজারের কথায়, “ওই বইটা আমার খুবই ভাল লাগে। আমার বই পড়ার ধরণ এবং স্বাদ পুরোটাই বদলে যায়। তিনি একজন খুব খুব বড় কবি। আজও ভারত তাকে ভালো করে চেনেইনি। বিশেষ করে, বিশ্বভারতীতে উনি কপি রাইটের জন্য আটকে ছিলেন এতগুলো বছর। এখন ধীরে ধীরে সারা দেশে নানা ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের বই।”
বেশ কয়েক বছর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুলজার বলেছিলেন, এক সময় রবীন্দ্রনাথের লেখা হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন ইংরেজি থেকে। কিন্তু তার মনে হতো, রবিঠাকুরের মূল বাংলা শব্দগুলোর বোধ ইংরেজি অনুবাদে টের পাওয়া যায় না। তাই বাংলা শিখবেন বলে মনস্থির করেন। রবিঠাকুরের লেখা হিন্দিতে অনুবাদ করার লক্ষ্যে রাতদিন এক করে বাংলা শিখতে শুরু করেন।
এক স্মৃতিচারণায় গুলজার বলেছিলেন, ষাটের শেষ থেকে সত্তরের দশকে বোম্বের সিনেমা জগতে বিচরণরত বাঙালিদের সঙ্গে দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে তার। বই পড়ার নেশায় জীবনে জড়িয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর জীবনানন্দ দাশের নাম।
‘মেরে আপনে’ থেকে ‘হু তু তু’: অনন্য প্রতিভায় ভাস্বর গুলজার
গুলজার জানান, বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাতা বিমল রায়ের বিশেষ ভূমিকা ছিল তার চলচ্চিত্র জগতে আসার পেছনে। কাজ করেছেন ঋষিকেশ মুখার্জির সঙ্গে। গীতিকার গুলজারের অভিষেকও হয় কিংবদন্তি বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী শচীন দেববর্মনের সঙ্গে কাজ করে। বন্ধু ছিলেন খ্যাতনামা সঙ্গীতকার রাহুল দেব বর্মণ।
নিজের সৃষ্টির যথেষ্ট স্বীকৃতিও পেয়েছেন গুলজার। ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন পাঁচবার। ঝুলিতে রয়েছে একুশটি ফিল্ম ফেয়ার। সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় চলচ্চিত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি একটি করে অস্কার ও গ্র্যামি পুরস্কারও আছে তার ক্যারিয়ারে। দুটিই এসেছে স্লামডগ মিলিওনিয়রের ‘জয় হো’ গানের জন্য।