শাড়ি বিতর্কে মমতা, পক্ষে-বিপক্ষে সহশিল্পীদের অবস্থান

এই প্রজন্মের নারীদের সাজ নিয়ে মমতা শঙ্কর বলেন, " আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না! ঠিক বুঝতে পারি না। আগে যাদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যারা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারা ওইভাবে দাঁড়াতেন।"

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2024, 08:12 AM
Updated : 22 March 2024, 08:12 AM

নারীর শাড়ি পরার ধরন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী মমতা শঙ্করের মতামত নিয়ে সরব হয়েছেন কলকাতার কয়েকজন অভিনেত্রী ও ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।

সোশাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত জানিয়েছেন তারা।

কয়েকদিন আগে আনন্দবাজার অনলাইনে এই প্রজন্মের নারীদের সাজ নিয়ে মমতা বলেন, “আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না! ঠিক বুঝতে পারি না। আগে যাদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যারা ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারা ওইভাবে দাঁড়াতেন।”

তিনি বলেন, “গ্রামে মহিলাদের কাজ করতে গিয়ে হয়ত আঁচল সরে যেত, তাতে কোনো দোষ ছিল না। আর ওরা (যৌনকর্মী) তো পেশার তাগিদে পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য ওভাবে শাড়ি পরে থাকেন।”

মমতার ওই মন্তব্য নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। 

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে পরে মমতা বলেন, “আমি তাদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এখন যারা বিনা কারণে আঁচল নামিয়ে শাড়ি পরেন, তার প্রতিবাদ করি। লোকে কিছু বললে তারা রেগে যান। বলেন মেয়েদের নিচু করা হচ্ছে। আসলে তো আমরা মেয়েরাই মেয়েদের নিচু করছি।”

লেখক তসলিমা নাসরিন এই প্রসঙ্গে ফেইসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন।

তিনি লিখেছেন, “আমি কখনও শাড়ির আঁচল বুকের মাঝখান দিয়ে নিই না। বক্ষযুগলের ওপরেই থাকে আমার শাড়ির আঁচল। কিন্তু বক্ষযুগলকে আঁচল দিয়ে যারা আড়াল করতে না চায়, তাদের এই না-চাওয়াকে কেন অশালীন বলা হবে? কোন যুক্তিতে?”

মমতা শঙ্করের উদ্দেশে তসলিমার বক্তব্য, “যে পুরুষেরা মনে করে মেয়েদের শালীনতা নির্ভর করে মেয়েরা কাপড়চোপড় দিয়ে শরীর কতটা ঢাকল তার ওপর, সেই পুরুষদের তিরস্কার না করে মমতা শঙ্কর তিরস্কার করছেন মেয়েদের। তিরস্কার করে তিনি যে পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক, সেটাই প্রমাণ করলেন।”

অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের মতে, সোশাল মিডিয়ায় মমতা শঙ্করের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

ফেইসবুকে শ্রীলেখা লিখেছেন, "মমতা শঙ্করকে ট্রল করার আগে উনি ঠিক কী বলতে চেয়েছেন সেটা বোঝা উচিত। আমি নিশ্চিত, উনি লাইসেন্সড যৌনকর্মীদের অসম্মান করতে চাননি।...উনি তো সব মহিলার উদ্দেশে কিছু বলেননি।’’

সোশাল মিডিয়ায় মমতা শঙ্করের বক্তব্যের প্রতিবাদে ঘুরছে একটি সাদাকালো ছবি। যেখানে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক নারী। তার শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে সামান্য সরেছে। মুখে হাসি ও তার এক হাতে সিগারেট।

ছবিটি শেয়ার করে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি লিখেছেন, ‘‘দারুণ হয়েছে। আমিও এ রকম একটা ছবি তুলব, ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো মেয়েগুলোকে উৎসর্গ করে। শাড়ির আঁচলেই কিনা সব সম্মান লুকিয়ে আছে, যদি ওরা জানত। আমার ফোটোগ্রাফার বন্ধুরা একটু হাত খালি হলে জানিও।’’

মমতা শঙ্করের বক্তব্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র ফেইসবুকে বলেন, ‘‘ল্যাম্পপোস্ট বা খুঁটিগুলো এই শহর থেকে অনেক আগে তুলে দেওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। কারণ আবার প্রমাণিত হল যে ‘মেয়েরাই মেয়েদের চরম শত্রু।"

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী কারও নাম না উল্লেখ করে ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘‘হেডলাইন দেখে ‘পুরোটা বুঝে গেছি’ ভাবাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে আমাদের। ধৈর্য জিনিসটা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে! কী বলছি, কাকে বলছি, কার সম্পর্কে বলছি, কী ভাবে বলছি— সেই মাত্রাবোধও বিলুপ্ত প্রায়!’’

মমতার সমালোচনা করেছেন সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়।

তিনি বলেন, "তার (মমতা) পশ্চাদপদী মন্তব্যের ধারাবাহিক ইতিহাস আছে। আগেও তিনি সমকামিতা এবং রূপান্তকামিতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাকে সমর্থন করে সমাজের একাংশ যে ভুল বার্তা দিচ্ছে। সেটা আরও অস্বস্তিকর।’’

এই ধরনের সমর্থনে নারীদের ‘বোকা’ প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চলছে মন্তব্য করে রত্নাবলী রায় বলেন, " 'ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা’ বলে যৌনকর্মীদের পেশার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন মমতা শঙ্কর। "