মুক্তির পর দ্বিতীয় সপ্তাহের মত সিনেমাহলগুলোতে চলছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, যেখানে উঠে এসেছে সুন্দরবনে নৌবিহারে গিয়ে একদল শিশুর ডাকাতদের কবলে পড়া এবং তাদের উদ্ধারের গল্প।
অধ্যাপক জাফর ইকবালের ‘রাতুলের দিন রাতুলের রাত’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এ সিনেমায় একঝাঁক শিশুর সঙ্গে কাজ করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি; বইয়ের গল্পের চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে অভিনয়টা ‘কঠিন ছিল’ বলেই এখন তার মনে হচ্ছে।
পরীমনির কথায়, “শিশুদের মেইনটেইন করা, তাদের থেকে অভিনয় বের করে আনা অনেক কঠিন। যখন শুটিং করেছি, বুঝিনি। স্ক্রিনে দেখার পর মনে হয়েছে এই কাজটা অনেক টাফ ছিল। “
সিনেমা দেখার পর অধ্যাপক জাফর ইকবালও প্রশংসা করেছেন বলে জানান এ অভিনেত্রী।
সিনেমার প্রচারে নির্মাতা ও শিল্পীরা বিভিন্ন হল ঘুরছেন। দর্শকদের সঙ্গে সিনেমা দেখছেন। সম্প্রতি রাজধানীর এসকে টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ এর নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েল ও অভিনেত্রী পরীমনি।
শিশুতোষ এ সিনেমা শিশুদের কতটা টানতে পারল?
পরীমনি: একবার শিশুদের সঙ্গে সিনেমাটা দেখলাম। হলের ভেতর অনেক মানুষ, শিশুদের তো তাদের বাবা-মা নিয়ে এসেছিলেন। সেই তুলনায় শিশু কম ছিল। কিন্তু সিনেমার পুরো সময়টা শিশুদের হাসি, তালিতে মুখর ছিল পুরো হল। উত্তেজনা কিংবা আনন্দের মুহূর্তে ওরা সিট থেকে দাঁড়িয়ে যায়। এসব দেখতে কী যে ভালো লাগে।
আবু রায়হান জুয়েল: শিশুদের থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। যারাই সিনেমাটা দেখেছেন, খুবই উপভোগ করেছেন। তবে শিশুরা তো আর একা হলে আসতে পারে না। তাদের হলে নিয়ে আসার দায়িত্ব অভিভাবকদের।
‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ নিয়ে চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
পরীমনি: শিশুদের মেইনটেইন করা, তাদের থেকে অভিনয় বের করে আনা অনেক কঠিন। জাফর ইকবাল স্যার নিজেও এটা বলেছেন। আমরা যখন শুটিং করেছি, বুঝিনি। স্ক্রিনে দেখার পর মনে হয়েছে এই কাজটা অনেক টাফ ছিল।
আবু রায়হান জুয়েল: গল্পে ১৪টা শিশুর কথা থাকলেও আমার শুটিংয়ে ছিল ১৫জন শিশু। ইউনিটের ১৫তম বাচ্চা ছিল পরীমনি। এদের দেখাশোনা করা, কাজে ধরে রাখা আসলেই অনেক কঠিন ছিল।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল তো সিনেমাটা দেখেছেন, তিনি কী বললেন?
পরীমনি: স্যার যেদিন সিনেমাটা দেখলেন, আমি সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলাম। তার সৃষ্টি করা একটা চরিত্র, আমি কতটা হতে পারলাম, তার চিন্তার কতটুকু কাছে যেতে পারলাম, এসব ভেবে ভয়ে ছিলাম।
“ভাবছিলাম সামনে গিয়ে কী বলব? স্যার এসে বললেন, ‘আমি পুরো সিনেমা দেখলাম। তিশা একদম ঠিক আছে। আমার ভাবনার সঙ্গে পুরোটা মিলে গেছে।’ এত সুন্দর করে বলেছেন, তখন মনে হয়েছে আমি সার্থক।”
পরীমনির পরিবারের সদস্যরা কেমন সাড়া দিলেন?
পরীমনি: ছবিটা শেষ করার পর রাজ (পরমনির স্বামী চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ) বলল, জুয়েল ভাই দারুণ একটা সিনেমা বানিয়েছেন। জুয়েল ভাইয়ের প্রশংসা করেছে সবাই। কারণ, এই সময়ে এসে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বানানো সাহসী একটা সিদ্ধান্ত।
“আমার শাশুড়িকে তো আমি মেয়ে বলি, উনি আমাকে আম্মু ডাকেন। সিনেমাটা শেষ করে বললেন- ‘আম্মু, আপনি তো আপনিই রয়েছেন, অভিনয় তো করেননি’। উনি হয়তো ভেবেছিলেন ড্রামাটিক কিছু দেখবেন।
ভবিষ্যতে পরীমনিকে শিশুতোষ চলচ্চিত্রে আবার দেখা যাবে?
পরীমনি: কেউ যদি ডাকে, গল্প পড়ে আমার যদি মনে হয় এই চরিত্রের জন্য আমি ঠিকঠাক তাহলে তো অবশ্যই দেখা যাবে।
নির্মাতা হিসেবে অভিনেতা সিয়াম আহমেদ ও পরীকে নিয়ে মূল্যায়ন কী?
আবু রায়হান জুয়েল: সিনেমাটা যারাই দেখেছেন, তারাই বলছেন, সিয়ামকে অন্যরকম লাগছে। সে খুব ভালো অভিনয় করেছে। তবে পরী অভিনয় করেননি। একেবারে চরিত্রের ভেতর ঢুকে গিয়ে ন্যাচারাল কাজটাই করেছে। পরীকে দেখে মনে হচ্ছে সে সত্যিই ১৪টা শিশু নিয়ে সুন্দরবনে গিয়েছে।
‘চলো বদলে যাই’ নামে নতুন সিনেমার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা কতদূর?
আবু রায়হান জুয়েল: আমরা এখনো অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন নিয়েই আছি। নতুন সিনেমাটা নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে পারিনি এখনো। স্ক্রিপ্ট নিয়ে অনেক কথা আছে। চরিত্র নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।
“এই সিনেমায় সংলাপ, চিত্রনাট্য থেকে প্রোডাকশন ডিজাইনের সবক্ষেত্রে শিল্পীদের সঙ্গে রাখব। তাদের নিয়েই প্ল্যান করব। প্রি-প্রোডাকশনের সঙ্গে পুরো টিম জড়িত থাকবে। এবার শুধু তাদের নেব, যারা স্ক্রিপ্টিং থেকে শুরু করে পোস্ট প্রোডাকশন পর্যন্ত আমাকে নিবিড়ভাবে সময় দেবে।
“পরীকে এই জায়গায় খুবই ডেডিকেটেড মনে হয়েছে। যে সবসময় চরিত্রের সঙ্গে থাকে। নায়ক চরিত্র এখনো ফাইনাল করিনি। আমরা খুঁজছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সবকিছু গুছিয়ে আনব।”
শুটিংয়ের জন্য পরীমনি কতটা প্রস্তুত?
পরীমনি: আমি এখনো প্রস্তুত নই। আমি মানসিক ও শারীরিক কোনোভাবেই প্রস্তুত নই। একটা চরিত্রকে ধারণ করার জন্য আমার নিরবচ্ছিন্ন মনযোগ লাগে। সেটা এখন দিতে পারব না। একটু সময় লাগবে।
চলচ্চিত্র, সংসার... সবকিছু মিলিয়ে পরীমনির দিন কেমন কাটছে?
পরীমনি: খুবই ভালো আছি। সবকিছু সুন্দরভাবে চলছে।
আরও পড়ুন-