লতা মঙ্গেশকরের নামে মন্দির গড়েছেন ভক্ত, পূজা হয় রোজ

চলতি বছরে লতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মন্দিরটি তৈরি করেছেন ভক্ত রাজীব দেশমুখ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2023, 11:26 AM
Updated : 7 Nov 2023, 11:26 AM

ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, যার কণ্ঠের জাদু ঘুঁচিয়ে দিয়েছে দেশকালে সীমানা আর ভাষার ব্যবধান। বেঁচে থাকলে তার বয়স হত ৯৪ বছর।

তার জন্মবার্ষিকীতে হিন্দুস্তান টাইমস জানাল এক ভক্তের খবর। যে ভক্ত এবং তার পরিবার মুম্বাইয়ে তাদের বাড়িতে লতার নামে গড়েছেন এক মন্দির। যেখানে লতাকে দেবী রূপে পূজা করে তারা।

২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন এই শিল্পী। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার সপ্তাহ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে আর তার ঘরে ফেরা হয়নি।

৯২ বছর বেঁচে ছিলেন লতা। এর মধ্যে আট দশকজুড়ে তিনি ছিলেন গানের জগতের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন সুরসম্রাজ্ঞী।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি বছরে লতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মন্দিরটি তৈরি করেছেন রাজীব দেশমুখ নামের সেই ভক্ত। মন্দিরের ভেতরে লতা মঙ্গেশকরের একটি মূর্তি রাখা হয়েছে। প্রতিমার গলায় রোজ মালা দেওয়া হয়। রাজীব এবং তার পরিবার প্রতিদিন লতার প্রতিমায় পূজা দেন।

সাক্ষাৎকারে রাজীব বলেন, স্কুলে পড়ার সময় তারা মুম্বাইয়ে থাকতেন না। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখা করতে মুম্বাই আসবেন বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। রাস্তায় পুলিশ তাকে একা দেখার পর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

১৯৮২ সালে রাজীব যখন লতার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান, শিল্পী তখন একটি অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশে ছিলেন। অবশেষে ১৯৮৭ সালে রাজীব সুযোগ পান লতাকে কাছ থেকে দেখার।

রাজীবের স্ত্রী শুভাঙ্গীও জানান, লতা মঙ্গেশকর তাদের কাছে দেবীর মত ছিলেন এবং সারাজীবন থাকবেন।

 

স্মরণে লতা

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুজরাটি মা আর মারঠি বাবার ঘরে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন 'ভারতের নাইটিঙ্গেল' লতা মঙ্গেশকর। শিশু লতার নাম ছিল হেমা। তবে  মৃত বড় বোনের নাম লতিকা হওয়ায় পরে তার নাম হয়ে যায় লতা।

লতার বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি থিয়েটারের অন্যতম পুরোধা একজন ‘ক্লাসিক্যাল’ শিল্পী। তার কাছেই লতার গান শেখার শুরু।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা ছিলেন সবার বড়। তিন বোন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর আর ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরও পরে সংগীত জগতে নাম কামিয়েছেন।

৪০ এর দশকের শুরুতে সেই সময় চলচ্চিত্রে গান খুব বেশি ছিল না। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরা লতা জীবিকার জন্য অভিনয়ও শুরু করেন। আটটি মারাঠি এবং হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

পাশপাশি ওস্তাদ আমান আলী খানের কাছে ক্লাসিকাল শিখতেন লতা। ১৯৪৩ সালে মারাঠি সিনেমা গাজাভাউতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে সংগীত শিল্পী হিসেবে।

পরের দশকগুলোয় পাকিজা, মজবুর, আওয়ারা, মুঘল ই জাম, শ্রী ৪২০, আরাধনা এবং দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, এ রোম-কম এর মতো চলচ্চিত্রগুলোতে জনপ্রিয় সব গান গেয়েছেন তিনি। চল্লিশের দশকের মধুবালা থেকে ১৯৯০ সালের কাজল পর্যন্ত শীর্ষ নায়িকাদের জন্য গান করেছেন লতা। মহম্মদ রাফি এবং কিশোর কুমারসহ বহু পুরুষ গায়কদের সঙ্গে তার ডুয়েট রয়েছে।

রাজ কাপুর এবং গুরু দত্ত থেকে শুরু করে মণি রত্নমম, গুলজার ও করণ জোহর পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় প্রত্যেক বলিউড পরিচালক কাজ করেছেন এই গুণী শিল্পীর সঙ্গে।

নিজের বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গেও প্লেব্যাকে গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। একট পর্যায়ে তাদের ক্যারিয়ার চলেছে প্রায় সমান্তরালে। তবে তাদের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে লতার ঝুলিতে জমেছে ৩৬ ভাষায় অসংখ্য ঘরানার অন্তত ৩০ হাজার গান। কণ্ঠ দিয়েছেন এক হাজারের বেশি সিনেমার গানে। বাংলা সিনেমাতেও প্রায় ২০০ গান রয়েছে লতার। নিজের সময়ে ভারতে ‘সবচেয়ে দামি শিল্পী’ ছিলেন তিনি।

সবচেয়ে বেশি গানে কণ্ঠ দেওয়ার সুবাদে ১৯৭৪ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে লতার নাম ওঠে। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান। একই বছর পান পদ্মভূষণ। ১৯৯৯ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন দেওয়া হয় তাকে। সংবাদসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)