প্রাচ্যনাটের পরিচালক (হেড অব ক্রিয়েটিভ) আজাদ আবুল কালাম বলেন, “পাকিস্তানীরা আমাদের সঙ্গে যা করেছে, এখন ইসরায়েল ফিলিস্তিনের উপর সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং পৃথিবীতে সকল যুদ্ধ এবং গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানাই।”
Published : 25 Mar 2024, 06:23 PM
ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর সব গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ‘লালযাত্রার’ মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ স্মরণ করেছে নাট্যসংগঠন প্রাচ্যনাট।
সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর থেকে ফুলার রোডের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর পর্যন্ত হাতে হাত মিলিয়ে, কণ্ঠে দেশের গান তুলে এ আয়োজনে শামিল হন নাট্যকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সব শহীদদের প্রতি সম্মানার্থে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের লালযাত্রা।
এই আয়োজনে প্রাচ্যনাট তাদের একজন তরুণ কর্মীকে উৎসাহ জানায়। এই সম্মান পেয়েছেন স্বাতী ভদ্র।
২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ মার্চ স্মরণে লালযাত্রার আয়োজন করছে প্রাচ্যনাট। করোনাভাইরাস মহামারীকালে দুই বছর আয়োজনটি সশরীরে করতে না পারলেও ভার্চুয়ালি করেছিলেন নাট্যকর্মীরা৷
‘লালযাত্রার’ মূল পরিকল্পনা সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রতিবছরই এই আয়োজনটির মধ্য দিয়ে গণহত্যা এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করি। এবারের আয়োজনে ফিলিস্তিনে নারকীয় যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
‘লালযাত্রায়’ একজন নারী নাট্যকর্মী মায়ের চরিত্র রূপদান করেন। এবার মায়ের ভূমিকায় ছিলেন স্নাতা শাহরিন। মূলত মায়ের আঁচল ধরে সন্তানের হেঁটে যাওয়া এবং কণ্ঠে দেশের গান গাওয়া আয়োজনের মূল ভাবনা।
রাহুল আনন্দ বলেন, “শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এই লালযাত্রা। এবারের আয়োজনে বিশ্বের সকল দেশে যত গণহত্যা হয়েছে, সবার স্মৃতির প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধা। আমরা যেহেতু নাট্যকর্মী, তাই আমরা থিয়েটারের মধ্য দিয়েই এই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে প্রাচ্যনাটের শিল্পীরা একটি ইম্প্রোভাইজেশন পরিবেশনায় অংশ নেন। যেখানে দেখানো হয়, পাকিস্তানীদের ন্যাক্কারজনক হত্যাযজ্ঞের পথ ধরে পৃথিবীতে এখনো বয়ে চলেছে সেই রক্তধারা। গণহত্যা বন্ধ হয়ে পৃথিবীতে যেন শান্তির পাখিরা ডানা মেলে উড়তে পারে, তার আহ্বান জানান শিল্পীরা।
পরিবেশনাটি শেষ হলে মায়ের শাড়ির আঁচলে এসে ঠাঁই নেন শিল্পীরা এবং মায়ের সঙ্গে হেঁটে চলেন তারা। কণ্ঠে গেয়ে চলেন 'ধন ধান্য পুষ্প ভরা' গানটি। এ সময় সাধারণ মানুষও কণ্ঠ মেলান। রাস্তায় বাস, রিকশা থেকেও অনেক পথচারীকে দেখা যায় গানটি গেয়ে এই আয়োজনে অংশ নিতে।
এবারের আয়োজনে মায়ের চরিত্র রূপদানকারী স্নাতা শাহরিন বলেন, “মায়ের চরিত্রে যখন মহড়া করেছি, তখন থেকে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। আমার নিজেরও সন্তান আছে, মায়ের চরিত্রটি আমার চোখে পানি এনেছে। পাঁচ বছর আগে আমাদের দলের একটা মেয়ে 'প্রেগন্যান্ট' ছিল। তখনও সে এসে আমাদের সঙ্গে হেঁটেছে। আজকে সে এসেছে তার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি।”
প্রাচ্যনাটের পরিচালক (হেড অব ক্রিয়েটিভ) আজাদ আবুল কালাম বলেন, “আমরা প্রথম এটি শুরু করেছিলাম চারুকলার ছবির হাটে। সেখান থেকে স্বাধীনতা স্তম্ভে গিয়ে শেষ হতো। এখন টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর থেকে ফুলার রোডের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর পর্যন্ত হেঁটে যায়। এই হাঁটা শুরুর আগে প্রতি বছর একটি পরিবেশনা মঞ্চস্থ করি।
“এবার আমরা গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শান্তির আহ্বান জানিয়েছি। পাকিস্তানীরা আমাদের সঙ্গে যা করেছে, এখন ইসরায়েল ফিলিস্তিনের উপর সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং পৃথিবীতে সকল যুদ্ধ এবং গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানাই।”
পড়ন্ত বিকেলে ফুলার রোডের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করার মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শেষ হয়। পরে প্রাচ্যনাটের কর্মী স্বাতী চৌধুরীর আর্থিক সম্মানী তুলে দেওয়া হয়।