‘থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি’র নতুন নাটক ‘নাজুক মানুষের সংলাপ’

শুক্রবার ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘নাজুক মানুষের সংলাপ’ এর  উদ্বোধনী শো হবে, চলবে ২৭ মে পর্যন্ত।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 06:39 AM
Updated : 19 May 2023, 06:39 AM

এক ‘জিজ্ঞাসু, পথভ্রান্ত’ তরুণ এবং ‘প্রাজ্ঞ’ প্রবীণের কথোপকথন ও চিন্তা বিনিময়ের নাটক ‘নাজুক মানুষের সংলাপ’ নিয়ে ঢাকার মঞ্চে আসছে ‘থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি’। 

লেখক শাহাদুজ্জামানের লেখা নাটকটি মঞ্চে নির্দেশনা দিচ্ছেন সাইফ সুমন।  

শুক্রবার ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘নাজুক মানুষের সংলাপ’ এর উদ্বোধনী শো হবে।

‘থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২৭ মে পর্যন্ত একই মিলনায়তনে টানা ৯ দিন ১২টি প্রদর্শনী হবে নাটকটির।

নির্দেশক সাইফ সুমন গ্লিটজকে বলেন, “প্রশ্নের উত্তর খোঁজা মানুষের সহজাত ও জ্ঞানতাত্ত্বিক স্বভাব। আবহমানকাল থেকেই প্রশ্ন মানুষকে তাড়িত করেছে বলেই সে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। মানুষ জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে। জীবনের সামগ্রিক সত্যকে উপলব্ধি করে, জীবনকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে প্রাজ্ঞজনেরা দিয়ে গেছেন নানা প্রশ্নের উত্তর।

“চারদিকে সবার চোখে কী এক আতঙ্ক এখন। ক্রমশ তছনছ হয়ে যাওয়া সময়। বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে সবাই ক্লান্ত যেন। সে ক্লান্তিতে গুটিয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা সতেজ থাকার ভান করছি তারাও জানি এটা ভানই।”

শিল্প হিসেবে থিয়েটার যথাযথ মর্যাদা এদেশে পায়নি মন্তব্য করে সুমন বলেন, “তবুও চর্চা হচ্ছে, হবে। প্রচলিত ধারার গ্রুপ থিয়েটার চর্চা থেকে এখন অনেকেই রেরিয়ে আসতে চাইছেন। উপায়ও খুঁজছেন। তাগিদ থাকলে পথ বের হবেই।“ 

টানা প্রদর্শনীর কারণ জানতে চাইলে এই নির্দেশক বলেন, “নাট্যচর্চায় শৌখিন মনোবৃত্তির অবসান ঘটানোর তাগিদ থেকে 'থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি' কাজ করছে, করতে চাইছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই প্রযোজনার পরিকল্পনা- টানা প্রদর্শনী।”

এর আগে ‘শাইলক অ্যান্ড সাইকোফ্যান্টস’ এবং ‘জবর-আজব ভালোবাসা’ নামে দুটি নাটক ‘থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি’ মঞ্চে এনেছে। 

লেখক শাহাদুজ্জামান বলেন, “কথোপকথনের ভেতর দিয়ে জীবনের নানা দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার উদাহরণ রয়েছে বিশ্বসাহিত্যে। আমাদের পঞ্চতন্ত্রের গল্পে, জাতকের গল্পেও এর চর্চা হয়েছে। আমি যখন গল্প লিখতে শুরু করি, তখন গল্পের বিষয়ের পাশাপাশি আঙ্গিক নিয়ে নানা নিরীক্ষাতেও আগ্রহী হই। গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতার দেয়ালগুলো ভেঙে দিতে ইচ্ছা হয়। গল্পে একটি কাহিনী আখ্যান বলবার চেয়ে কিছু ভাবনাকে উপস্থিত করাতেই আগ্রহ আমার।

“একটি গল্পে কিছু ভাবনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে গিয়ে এই কথোপথন ধারাটিকে অনুসরণ করে একটি গল্প লিখেছিলাম 'মারাত্মক নিরুপম আনন্দ' নামে, যা আমার প্রথম গল্প গ্রন্থ 'কয়েকটি বিহ্বল গল্প' বই-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ধারাবাহিকতাতেই আমার সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ 'মামলার সাক্ষী ময়না পাখিতেও এই কথোপকথনের আঙ্গিক ব্যবহার করে আরেকটি গল্প যুক্ত করি 'নাজুক মানুষের সংলাপ' নামে।”

গল্পটি নাটক হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন শাহাদুজ্জামান। 

“গল্প দুটো লেখার প্রেক্ষাপট ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে জীবনের নানা পর্বে বিবিধ প্রশ্ন দিয়ে যখন তাড়িত হয়েছি, তখন মনে হয়েছে প্রশ্নগুলো নিয়ে কারো সঙ্গে নিবিড় আলাপে মগ্ন হতে পারলে বেশ হত। কিন্তু যখন আশেপাশে তেমন আলাপে যুক্ত হবার মতো মানুষ খুঁজে পাইনি, তখন নিজেই দুটো চরিত্র তৈরি করে নিয়ে তাদের ভেতর সেই কাল্পনিক আলাপটা জারি রেখেছি। সেই কাল্পনিক দুই চরিত্রের আলাপের ভেতর দিয়ে জীবনের এইসব অমীমাংসিত নানা প্রসঙ্গের ভেতর বিচরণের একটা উপায় খুঁজে নিয়েছি। সংলাপের আদলে লেখা হলেও এর মঞ্চ নাটকের সম্ভাবনার কথা ভাবিনি। সম্ভাবনাটি দেখা দেয় সাইফ সুমন ‘নাজুক মানুষের সংলাপ' মঞ্চস্থ করবার প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হলে।

“তবে ঘটনাবিহীন, জটিল দার্শনিক আলাপের এই প্রায়- বিমূর্ত ধারার গল্পটি সাহিত্যের অছিলায় পাঠযোগ্যতা থাকলেও এর মঞ্চরূপে ঝুঁকি আছে বলে মনে হয়েছে আমার। কিন্তু সাইফ সেই ঝুঁকি নিতে প্রতিজ্ঞ বলে জানালেন। সাইফ দীর্ঘদিন নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত। যুক্ত আছেন 'থিয়েটারওয়ালা' নামের সমৃদ্ধ একটি নাট্যপত্রিকার সঙ্গে। মঞ্চপৃথিবীর সঙ্গে তার যে যোগাযোগ এবং প্রস্তুতি তাতে মঞ্চে এই গল্পের একটি নতুন নাট্যজন্মের সম্ভাবনা আমি দেখতে পাই। বিশেষ করে নানা ধারার মৌলিক নাটকের চর্চার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চের প্রাণ উজ্জীবিত রাখাও জরুরি বলে মনে করি আমি। ফলে সাইফের সঙ্গে আলাপের প্রেক্ষিতে সংযোজন, বিয়োজনের মাধ্যমে 'নাজুক মানুষের সংলাপ' গল্পটির একটি নতুন রূপ দিই। এমন একটি নাটককে মঞ্চে আনবার উদ্যোগ নেবার জন্য অভিনন্দন জানাই 'থিয়েটারওয়ালা রেপাটরি'-কে।”

'নাজুক মানুষের সংলাপ' নাটকে অভিনয় করছেন ইউসুফ হাসান অর্ক ও রুদ্র সাওজাল। আলোক পরিকল্পনায় অম্লান বিশ্বাস, পোশাক পরিকল্পনায় আইরিন পারভীন লোপা এবং সংগীত পরিকল্পক ইউসুফ হাসান অর্ক। 

নাটকে ব্যবহৃত গানের কথা ও সুর করেছেন ইউসুফ হাসান অর্ক, সুমন মজুমদার, মাহফুজ সুমন। 

মঞ্চ পরিকল্পক, পোস্টার, প্রকাশনা, প্রচার ও মঞ্চ ব্যবস্থাপক সাকিল সিদ্ধার্থ। আবহ নিয়ন্ত্রক ও সহকারী মঞ্চ ব্যবস্থাপক আবির সায়েম। প্রযোজনা অধিকর্তা হাসান শাহরিয়ার।