“উনি ছিলেন ধূপকাঠির মতো, উনার এই ধোঁয়ায় চারিদিক আরও সুন্দর হবে।”
Published : 25 Mar 2025, 07:16 PM
সদ্য প্রয়াত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন অনেক আগের মানুষ হলেও অত্যন্ত আধুনিক একজন মানুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালে সন্জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো দেখতে এসে আবেগাপ্লুত কন্ঠে এ কথা বলেন তিনি।
এই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর প্রয়াত হন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
তার স্মৃতিচারণ করে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, “উনার কথা বলতে গিয়ে আসলে বলতে পারছি না। এক কথায় যদি বলি, দেশের একটা প্রদীপ নিভে গেল। উনার সাথে সপ্তম শ্রেণি থেকে আমার সম্পর্ক। আমি ছায়ানটে ছিলাম। অনেক স্মৃতি; রিকশা করে যেতাম গান শিখতে।
“উনার কারণেই ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয়, রবীন্দ্রনাথের যে গান, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। প্রতিবছর রমনার বটমূলের যে রেওয়াজ (পহেলা বৈশাখে), এটা আসলে উনারই করা।”
চয়নিকা বলেন, “উনি অনেক আগের মানুষ, কিন্তু খুবই আধুনিক একজন মানুষ। সে জায়গা থেকে সারাজীবন লড়াই করে গেছেন; রবীন্দ্রনাথের পক্ষে করেছেন, ভাষার পক্ষে করেছেন, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে করেছেন। সে জায়গা থেকে লড়াইটা চলবে।
“আমরা যারা আছি উনার অসংখ্য গুণগ্রাহী, শিক্ষার্থী, সহকর্মী তারা উনার চেতনাটা ছড়িয়ে দিবে। উনি ছিলেন ধূপকাঠির মতো, উনার এই ধোঁয়ায় চারিদিক আরও সুন্দর হবে।”
এর আগে সন্জীদা খাতুনকে তাকে দেখতে আসেন গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক কর্মী সোহরাব হোসেনসহ আরও অনেকে।
গত শতকের ষাটের দশকের শুরুর দিকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুন। তার তত্ত্বাবধানে ছায়ানট এখন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রসারে কাজ করছে।
ছায়ানটের পাশাপাশি জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নালন্দার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক ফেলোও ছিলেন তিনি।
একাধারে শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সংগীতজ্ঞ ও শিক্ষক সন্জীদা খাতুন ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারে (পশ্চিমবঙ্গ) ভূষিত সন্জীদা ১৬টি বই লিখেছেন।
২০২৩ সালে ৯০তম জন্মবার্ষিকীর দিনে ‘নবতিপূর্ণা’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনিয়েছিলেন সন্জীদা খাতুন।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, “অল্পে তুষ্ট সহজ সরল জীবনের এই সার্থকতায় আমি ধন্য হয়েছি।”