লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং চলছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে।
Published : 14 Nov 2022, 07:55 PM
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার কৌরীচালা গ্রাম। পতিত জমির পাশে পুকুর। তার পাড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আকাশমণি গাছ। তার ছায়ায় বসানো হয়েছে সেট, ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার।
সরকারি অনুদানের এই সিনেমা পরিচালনা করছেন বন্ধন বিশ্বাস। তিনি বসে আছেন মনিটরের সামনে। ডিওপি বিশ্বজিৎ দত্ত রানা প্রোডাকশন ইউনিটের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন, “কুয়াশা বাড়বে, আরও দুইটা ধোঁয়া দাও।” প্রোডাকশন ইউনিট ধোঁয়া জ্বালিয়ে মধ্য সকালকে ভোরে রূপ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আকাশমণি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন অপু বিশ্বাস। গাছ থেকে হলুদ ফুল উড়ে এসে পড়ছে তার চুলে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই নায়িকার। পায়চারি করছেন, অপেক্ষা কারও জন্য।
ক্যামেরার পেছন থেকে হাঁক এল- ‘ক্যামেরা রোলিং, অ্যাকশন।’ পুকুরের চালা দিয়ে দৌড়ে এলেন নায়ক সায়মন সাদিক। শঙ্কা আর ভয়মাখা চোখে তার দিকে তাকালেন অপু।
সায়মন বললেন, “কি রে, এই সাত সকালে খবর দিলি?” ভয় জড়ানো গলায় অপু বললেন, “আমার কেমন যেন লাগছে। খুব ভয় হয়।” সায়মন কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললেন, “আঁধার কেটে এই গ্রামে যেমন আলো ফুটছে, দেখিস একদিন আমাদেরও সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আর আমি তোকেই বিয়ে করব।”
সায়মনের আশ্বাসে মনের মেঘ কাটতে শুরু করল আপুর। তখনই ‘কাট’ বলে পরিচালকের হাঁক। হইচই পড়ে গেল গোটা ইউনিটে। পতিত মাঠভরা গ্রামবাসীও হাততালি দিয়ে উঠলেন।
ক্যামেরা, ককশিট, সাইনবোর্ড পজিশন চেঞ্জে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অপু এগিয়ে এলেন মনিটরের দিকে। শটটা দেখে নিলেন এক পলকে।
নায়িকা অপু বিশ্বাস লাল শাড়ি সিনেমার প্রযোজকও। লম্বা বিরতি দিয়ে সিনেমায় ফেরা অপুর নায়ক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা সায়মন সাদিক। আরও আছেন শহিদুজ্জামান সেলিম, সুমিত, দিলরুবা দোয়েল, রাশেদুজ্জামান আপু, শাহেদ আলীসহ অনেকে।
নতুন শট শুরু আগে পরিচালকের সঙ্গে দৃশ্য নিয়ে আলাপের ফাঁকে অপু বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টানা কয়েকদিন ধরে লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং করছি। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। আজকের পর একটা গানের দৃশ্যায়ন বাকি আছে।”
প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজকের দায়িত্ব সামলাতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না জানিয়ে অপু বলেন, “ইউনিটের সবাই অনেক সাহায্য করছে। আমার আর্টিস্টরাও হেল্পফুল। ফলে একদমই চাপ অনুভব করছি না।”
মানিকগঞ্জের মানুষের ভালোবাসায়ও মুগ্ধ এই চিত্রনায়িকা। বললেন, “এখানকার মানুষজন আমাদের আপন করে নিয়েছে। রোজ এটা সেটা রেঁধে নিয়ে আসে। একটু হলেও মুখে দিতে হয় তাদের আনা খাবার। আমার তো মনে হয়, মানিকগঞ্জ এসে ওজন বেড়ে গেছে।”
সিনেমাটি নিয়ে অপু বলেন, “লাল শাড়ি তাঁতি জনগোষ্ঠীর গল্প। বাংলাদেশের শাড়ি এক সময় দেশের বাইরেও সমাদৃত ছিল। আমরা জামদানীর হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরব এই সিনেমায়।”
সায়মন সাদিক বলেন, “লাল শাড়িতে আমার চরিত্রের নাম রাজু। অপু বিশ্বাসের চরিত্রের নাম শ্রাবণী। আমরা একই গ্রামে বসবাস করি। আমি তাঁতশিল্পী।
“গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে হারিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনের গল্প আমরা সামনে নিয়ে আসব।”
অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এটাই প্রথম সায়মনের সিনেমা। এই চিত্রনায়ক বললেন, “অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি খুবই সহযোগী মনোভাব দেখিয়েছেন। আমরা ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। বাকি কাজও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ হবে। আগামী পহেলা বৈশাখে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”
সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী সায়মন বলেন, “যেহেতু গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে সিনেমাটা তৈরি। আমার বিশ্বাস দেশের সর্বস্তরের মানুষ সিনেমাটি দেখবে।”
২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৫ লাখ টাকা অনুদান পায় অপু-জয় কথাচিত্র প্রযোজিত সিনেমা ‘লাল শাড়ি’।