ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হিরা গ্লিটজকে বলেন, “আমরা কাউকে নিষিদ্ধ করিনি, আমাদের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, ডিরেক্টরস গিল্ডের কোনো সদস্য চমককে নিয়ে আগামী তিন মাস কাজ করবে না। এটি আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।”
Published : 23 Aug 2023, 11:10 PM
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।
আগামী তিন মাস চমকের সঙ্গে কাজ না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড, সেটির সঙ্গে একমত নয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ ও প্রযোজকদের সংগঠন ‘টেলিপ্যাব’।
টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের অভিভাবক ‘ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গেনাইজেশনের (এফটিপিও) মাধ্যমে সমাধানের আশা করছে শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাব।
শুটিং সেটে অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে পড়া দেশের ছোটপর্দার অভিনেত্রী চমকের সঙ্গে আগামী তিন মাস কোনো ধরনের কাজ না করার সিদ্ধান্ত ডিরেক্টরস গিল্ড জানায় সোমবার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্তে ‘হতবাক এবং বিস্মিত’ হয়েছেন উল্লেখ করে মঙ্গলবার গ্লিটজকে জানিয়েছিলেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম।
তার একদিন পর বুধবার শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাব অফিশিয়াল প্যাডে ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্তে একমত না হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে।
আহসান হাবিব নাসিম গ্লিটজকে বলেছিলেন, “অভিযোগকারী শিল্পী ও নির্মাতা তো সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছেন। তারা কেউই নিষিদ্ধের দাবি করেননি। তবে অতি উৎসাহী হয়ে কেন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।”
চমককে নিষিদ্ধ করার কোনো দাবি করেছিলেন কিনা প্রশ্নে চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী নির্মাতা আদিফ হাসান গ্লিটজকে বলেছিলেন, “আমি আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি। তবে ডিরেক্টরস গিল্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি তার সাথে একমত।”
শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাবের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হিরা গ্লিটজকে বলেন, “আমরা কাউকে নিষিদ্ধ করিনি, আমাদের বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, ডিরেক্টরস গিল্ডের কোনো সদস্য চমককে নিয়ে আগামী তিন মাস কাজ করবে না। এটি আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।”
তবে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাব। তারা বলছে, ডিরেক্টরস গিল্ড এভাবে সংবাদ সম্মেলন না করে বিষয়টি নিয়ে টেলিভিশন মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন সমুহের ফেডারেশন এফটিপিওর কাছে সমাধান চাইতে পারতো।
এ প্রসঙ্গে অনন্ত হিরা বলেন, “আমরা এফটিপিও'র পরবর্তী সভায় বিষয়টি আলোচনা করব।”
ঘটনার সূত্রপাত
গত ৪ অগাস্ট ঢাকার উত্তরার আনন্দবাড়ি শুটিং হাউসে ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নাটকের শুটিংয়ে অভিনেত্রী চমকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন নির্মাতা আদিফ হাসান। পরে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অভিযোগ করেন এই নির্মাতা।
নির্মাতা আদিফ হাসান গ্লিটজকে বলেছিলেন, “চমকের ‘অপেশাদার’ আচরণের কারণে তিনি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
ওই শুটিং সেটে চমকের বিরুদ্ধে অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুমও অশোভন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে তিনি শিল্পী সংঘে চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এসব ঘটনার পর সহশিল্পী আরশ খানের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ চাওয়ার অভিযোগ তোলেন চমক।
পাল্টাপাল্টির অভিযোগ পেয়ে সমাধানে যৌথ উদ্যোগ নেয় টেলিভিশন নাটক সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিপ্যাব।
টেলিপ্যাবের সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠানের সভাপতিত্বে ১৩ অগাস্ট বিচার সভা হয়। সেখানে প্রথমে সবার অভিযোগ পাঠ করা হয় এবং চমক ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বক্তব্য শোনা হয়। পরে ঘটনার সাক্ষীদেরও বক্তব্য শোনেন সংগঠনের নেতারা।
এর একদিন পর সভার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে জানায় অভিনয়শিল্পী সংঘ। সহশিল্পীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার’ যে অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক, সেটি ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়। সহশিল্পী আরশ খানের বিরুদ্ধে থানায় করা জিডি প্রত্যাহার, ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা করা হয় চমকের বিরুদ্ধে।
ডিরেক্টরস গিল্ড সেই সিদ্ধান্ত ‘যথেষ্ট নয়’ জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে এবং চমককে অন্তত তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধের দাবি জানায়। এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে চমকের সঙ্গে তিন মাস কাজ না করার ঘোষণা দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড।
যা বলছে শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাব
বুধবার শিল্পী সংঘ ও টেলিপ্যাবের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিগত ২১.০৮.২৩ তারিখে ডিরেক্টরস গিল্ড এর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা আমাদের বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে। দীর্ঘদিনের পুরনো একটি সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের কাছ থেকে যা মোটেই আমরা প্রত্যাশা করিনা।”
ডিরেক্টরস গিল্ড একজন অভিনয়শিল্পীকে নিষিদ্ধ করবার অধিকার রাখে কিনা এমন প্রশ্ন তুলে এতে আরো বলা হয়, “যদি তারা তাদের সদস্যদেরকে চমককে কাজে না নেবার নির্দেশ দিতে চাইত তবে তা সাংগঠনিকভাবে করতে পারত। …এটা খুবই সাধারণ বিষয় যে একটি পেশাদার সংগঠন শুধুমাত্র তার সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কোনো পেশার শিল্পী, কলাকুশলী বা ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না। নিতান্ত প্রয়োজন হলে সেই পেশার সংগঠনের সাথে আলোচনা করতে পারে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চমকের বিরুদ্ধে ডিরেক্টরস গিল্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত। এই সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই- আমাদের সিদ্ধান্তে চমকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কোনো কথা নেই।”
বিষয়টি নিয়ে এফটিপিওর সভাপতি মামুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, “সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এফটিপিওর সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি এফটিপিও একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবেন।”
চমকের বক্তব্য
ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় অভিনেত্রী চমক গ্লিটজকে বলেন, “গত ৪ তারিখ শুটিং স্পটে যা ঘটেছিল, তার একটি সুন্দর সমাধান কিন্তু পরে হয়েছিল। আমাদের সিনিয়ররা সুন্দর একটি সমাধান দিয়েছেন, আমরা সেটি মেনেও নিয়েছি। যখন সবাই এই সিদ্ধান্ত মেনে কাজ শুরু করতে চাইলাম, তখন হঠাৎ করে একটা সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তঃসংগঠনের মাঝে একটা বিশৃংখলা তৈরি করা হল, এটা মোটেও কাম্য নয়।”
ডিরেক্টরস গিল্ডের সংবাদ সম্মেলনের কারণে পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়েছে জানিয়ে চমক বলেন, “আমার একটা পরিবার আছে, এই সংবাদ সম্মেলনের কারণে আমার পরিবার যে হেয় প্রতিপন্ন হল। সেটা কেন করা হল? আমাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। চমকের নামে যে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তা তো এখন পরিষ্কার।”
ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য একাধিক নির্মাতার সঙ্গে কাজের বিষয়ে কথা হয়েছে উল্লেখ করে চমক বলেন, “গিল্ডের সদস্য এমন কয়েকজন নির্মাতাও আমাকে নিয়ে কাজ করবেন, তারা গিল্ডের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন।”
“এই মাসেও আমি কাজ করছি। আগামী মাসেও আমার কাজের শিডিউল করা আছে। আশা করছি আগামী মাসেও আমি শুটিং করব।”
চমককে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে একমত নয় শিল্পী সংঘ
ডিরেক্টরস গিল্ডের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দিচ্ছেন না চমক
অভিনেত্রী চমককে ‘বয়কট’ ডিরেক্টরস গিল্ডের
চমকের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’, ক্ষমা চেয়ে দেবেন ক্ষতিপূরণ: শিল্পী সংগঠন