মঙ্গলবার অগ্রহায়ণের প্রথম দিন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। প্রতি বছরের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “করোনাকালে দেশের সংস্কৃতি চর্চায় যে ভাটা পড়েছিল, করোনা-উত্তরকালে আমরা চেষ্টা করছি সংস্কৃতি চর্চা বেগবান করার মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে। সেজন্য আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন করছি।
তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক কালে যে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।'
জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা।
দেশের বাইরে থাকায় জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহ-সভাপতি মানজার চৌধুরী সুইট। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।
লায়লা হাসান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানিরা না থাকলেও আজও তাদের দোসর বা সেই মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ রয়ে গেছে। রয়ে গেছে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী অমানুষেরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উদ্যত থাবা ক্ষতবিক্ষত করছে আমাদের সৌহার্দ্য, আমাদের ভাতৃত্ব, আমাদের এতকালের এক হয়ে থাকার বন্ধন। ধর্মান্ধতার কলুষতা হানাহানি এই রক্তক্ষরণ এই কি আমাদের সোনার বাংলা? এই জন্যই কী আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ ও আত্মাহুতি?
অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রয়াত সংস্কৃতিজনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দুই পর্বের সাংস্কৃতির আয়োজনটি দুপুরে বিরতি শেষে বিকাল সাড়ে চারটায় শুরু হয়। এ আয়োজনকে ঘিরে দিনভর পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
উৎসবে সম্মেলক গান, নৃত্য ও কবিতায় অংশ নেয় স্বরবৃত্ত, কিশলয় কচিকাঁচার মেলা, দনিয়া সবুজ কুড়ি কচিকাঁচার মেলা, স্বপ্নবীণা শিল্পকলা বিদ্যালয়, মন্দিরা সাংস্কৃতিক পাঠশালা, সুর বিহার, স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র, মৈত্রী শিশু দল, রঙ্গপীঠ শিশু দল, বহ্নিশিখা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাফা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, সমস্বর, উজান, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি, পঞ্চায়েত।
দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন বাফা, জি এ মান্নান দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, নান্দনিক নৃত্য সংগঠন, নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র, স্পন্দন, নৃত্যজন, পুষ্পাঞ্জলী, নূপুরের ছন্দ।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন- ফাতেমা তুজ জোহরা, শাহীন সামাদ, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, মহাদেব ঘোষ, মোস্তফা কামাল, মাহজাবিন শাওলী, আবু বকর সিদ্দিক, অনিমা রায়, এস এম মেজবা উদ্দিন, সুরাইয়া পারভীন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, ফেরদৌসী কাকলি, তামান্না নিগার তুলি, সঞ্জয় কবিরাজ, মনিরা ইসলাম পাপপু, ত্রিবেনী পান্না, মৌমিতা বড়ুয়া, শ্রাবণী গুহ রায়, নবনীতা জায়ীদ চৌধুরী, সোহাগ চন্দ্র শিমুল, মায়শা সুলতানা উর্বী, নাহিয়ান দুরদানা সূচি, রকিবা খান লুবা, তাহমিনা আক্তার মুক্তি, আসিফ ইকবাল সৌরভ, সোনিয়া আক্তার, শান্তা সরকার, রাবেয়া আক্তার, মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, মানসী অনন্যা, দেবু প্রসাদ দাঁ, অনিমেষ বাউল, মেহেদী ফরিদ।
একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আহকাম উল্লাহ, বুলবুল মহলানবীশ, রূপা চক্রবর্তী, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রফিকুল ইসলাম, মাসকুর এ সাত্তার কল্লোল, বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম কাকলি, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আহসান উল্লাহ তমাল, আজিজুল বাশার মাসুম।
১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকায় শুরু হয় জাতীয় নবান্ন উৎসব।