চার দশকের ক্যারিয়ারে ‘ওম শান্তি ওম’, ‘কাহানি’, ‘রামলীলা’, ‘পিপলি লাইভস’-এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশি দর্শকদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
হিন্দির পাশাপাশি টালিগঞ্জের ‘খাদ’, ‘হামি’, ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’সহ বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ‘বঙ্গবন্ধু’র মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনও বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে দেখা যাবে তাকে।
মুম্বাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মাসুদ আখতার জানান, বায়োপিকের চিত্রনাট্য পড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করেছেন তিনি; বিশেষ করে সপরিবারে তাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পড়ে খুব মর্মাহত হয়েছেন তিনি।
“পুরো চিত্রনাট্য পড়ার পর আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের সংগ্রাম আর ক্লাইমেক্স আমাকে ছুঁয়ে গেছে। সপরিবারে তাকে হত্যার ঘটনা চিত্রনাট্যে পড়ে সত্যিই আমি মর্মাহত হয়েছি।
“চরিত্রের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনকে তুলে আনতে আমরা তার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ার এক মানসিক ভারসাম্যহীন এক বাসিন্দার চরিত্রে অভিনয় করছেন মাসুদ আখতার; নিজের চরিত্র নিয়ে এর চেয়ে বিস্তারিত জানাতে বারণ রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে ক্যামেরার পেছনেও কাজ করছেন এ অভিনেতা; যিনি কিংবদন্তি ভারতীয় নির্মাতা এম.এস সাথিয়্যু, সত্যজিৎ রায় ও অস্কারজয়ী বৃটিশ নির্মাতা রোনাল্ড জোফ’র সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
২০১৯ সালের মার্চে বাংলাদেশে ছবিটির দৃশ্যধারণ শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কবলে তা পিছিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে গড়িয়েছে।
প্রায় মাসখানেক ধরে মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফিল্ম সিটি, গোঁরেগাও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্যধারণ চলছে।
মাসুদ আখতার বলেন, “মুম্বাইয়ে মূলত ইনডোরের দৃশ্যগুলো ধারণ করা হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশে করার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু লকডাউনের কারণে আর যাওয়ার হলো না।”
মার্চে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও মহামারীর ফাঁদে আটকা পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দফার দৃশ্যধারণে বাংলাদেশে আসতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশের কোনও চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও টালিগঞ্জের নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘উত্তরা’ চলচ্চিত্রে একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুখস্মৃতির কথা জানালেন তিনি।
আলাপচারিতায় উঠে এলো বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা এলাকা টাকিতে দৃশ্যধারণের স্মৃতিকথাও।
“বাংলাদেশে কখনও যাওয়া হয়নি কিন্তু সীমান্তের খুব কাছেই গিয়েছিলাম একবার টাকিতে। ওখানে একটি ছবির শুটিং শেষে নদীর ধারে একটি হোটেলে উঠেছিলাম। ভোরে ভাঙলে ব্যালকোনিতে গিয়ে দেখলাম, ওইপার (বাংলাদেশ) থেকে ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। একজন বললেন, ‘ওই তো বাংলাদেশ’। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।”
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দেখা না হলেও ফজলুর রহমান বাবুর সঙ্গে তার আলাপ রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
একবার ঢালিউডের চলচ্চিত্রের প্রস্তাব ঢাকা থেকে গেলেও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেটি আর করা হয়নি তার; সামনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানালেন কলকাতায় জন্ম নেওয়া এ অভিনেতা।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তেমন দেখা না হলেও বাংলাদেশের সাহিত্যের খোঁজখবর রাখেন বলে জানালেন মাসুদ আখতার; বাংলাদেশের সাহিত্যকে খুবই শক্তিশালী বলে বিবেচনা করেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এম.এস সাথিয়্যুকে নিয়ে ‘কাহান কাহান সে গুরুজে’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। কাজ করছেন টিভি নাটকে।
হালের নেটফিক্সের ওয়েব সিরিজেও দেখা গেছে তাকে; সুজয় ঘোষের ওয়েব সিরিজ ‘টাইপরাইটার’-এ অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৭৯ সাল থেকে ইন্ডিয়ান পিপল’স থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।