তার মিডিয়া ম্যানেজার আল আরাবী রোববার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিডিও থেকে ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে সেটি আবার প্রকাশ করা হবে। ভিডিওতে কারেকশনের ব্যাপারটাও লিখে দেব।”
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী প্রতিবাদের মধ্যে শনিবার রাতে নিজের ফেইসবুক পেইজে ‘ধর্ষকদের শিক্ষা দিলেন অনন্ত জলিল’ শিরোনামে ওই ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন অনন্ত জলিল।
‘ভাই’ হিসেবে নারীদের ‘শালীন’ পোশাক পরার আহ্বান জানিয়ে তিনি সেখানে বলেন, “তোমাদের অশালীন ড্রেসের কারণে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকিয়ে বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে এই বখাটে ছেলেরা এবং র্যাপ (রেপ) করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে।
“শালীন ড্রেস পরলে যারা বখাটে ছেলে যাদের মাথায় ধর্ষণের চিন্তা-ভাবনা আসে, তারাও কোনও এই ধরনের চিন্তা করবে না। শ্রদ্ধার সঙ্গে তোমার দিকে তাকাবে। এবং তাকিয়ে থাকার পর চোখ নিচের দিকে নিয়ে তোমাকে সম্মান জানাবে।”
তার ওই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয় ফেইসবুক।
জাস্টিন অ্যান্থনি নামের একটি আইডি থেকে ওই ভিডিওতে একজন মন্তব্য করে জানতে চান- “মাদ্রাসার যে ছাত্রটাকে বলাৎকার (ধর্ষণ) করা হয়েছে, তার পোশাকে কি প্রবলেম ছিল? চতুর্থ শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া বাচ্চা মেয়েগুলোর পোশাকে কি অনেক সমস্যা ছিল?”
অনন্ত জলিলের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সৈয়দ ইসমত তোহা লেখেন, “পোশাকের সাথে ধর্ষকের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আপনার কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত নই। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে আইনের কঠোরতা, প্রকাশ্যে ফাঁসি, দ্রুত আদালতে বিচারকার্য সম্পন্ন করে ফাঁসির ব্যবস্থা করা, জামিন নাকচ করা এবং উচ্চ আদালতে আবেদনের সুযোগ রহিত করতে হবে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মেয়াদ এক সপ্তাহ মাত্র হতে হবে।”
নারীরা কী ধরনের ‘শালীন’ পোশাক পরবেন তার একটি ব্যবস্থাপত্রও সোয়া ৬ মিনিটের ওই ভিডিও বার্তায় দেন ব্যবসায়ী থেকে অভিনেতা বনে যাওয়া অনন্ত জলিল।
“মডার্ন ড্রেস যেটা হবে, সেটাতে তোমার ফেইসটা দেখা যাবে, যেটা আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দিয়েছেন। কিন্তু বডিতে শালীন ড্রেস পরতে হবে। যে ড্রেসটা পরলে তোমাকে ভালো লাগবে।
“ছেলেদের মত একটা টি-শার্ট পরে তোমরা রাস্তায় বের হয়ে যাও। মডার্ন মেয়ে তুমি। ইজ্জত শেষ হলে যখন বাসায় যাও তখন আত্মহত্যা করো, আর যদি আত্মহত্যা নাও করো, মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারো না।”
ওই ভিডিও এবং ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের সমালোচনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকলে রোববার দুপুরের পর তা সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে অনন্ত জলিলের মিডিয়া ম্যানেজার বিষয়টিকে ‘আনফরচুনেট’ ও ‘মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ওই ভিডিওবার্তার শুরুতে অনন্ত জলিল ধর্ষকদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের সামনে তোমাদের স্ত্রী কন্যাকে যদি কেউ র্যাপ (রেপ) করে, তাহলে তোমার কেমন লাগবে? তুমি তো একটা অমানুষ, তোমার ভালোই লাগবে মনে হয় না? না হলে তো অন্যের মেয়েকে, অন্যের মা বোনকে র্যাপ (রেপ) করতে পারতে না। তোমার যে মনুষত্ব সেটা তো মরে গেছে।”
আর ভিডিও বার্তার শেষ দিকে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর আছে আর্জি জানান এই চলচ্চিত্র অভিনেতা।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনাকেই শক্ত হাতে এসব অমানুষের মৃত্যুদণ্ডের আইন ও বাস্তবায়নের সুব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আপনার দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে, আপনি কখন নির্দেশনা দেবেন।”