ধর্ষকদের ‘শিক্ষা দিতে’ গিয়ে অনন্ত জলিল দুষলেন নারীর পোশাককে

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী প্রতিবাদের মধ্যে ধর্ষকদের ‘শিক্ষা দিতে’ এক ভিডিও বার্তায় হাজির হয়ে উল্টো মেয়েদের ‘অশালীন পোশাককে’ দায়ী করে নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 08:44 AM
Updated : 11 Oct 2020, 10:26 AM

শনিবার নিজের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই ভিডিও বার্তায় তিনি ‘ভাই হিসেবে’ নারীদের ‘শালীন’ পোশাক পরার আহ্বান জানান।

অনন্ত জলিল বলেন, “তোমাদের অশালীন ড্রেসের কারণে তোমাদের ফিগারের দিকে তাকিয়ে বিভিন্নভাবে মন্তব্য করে এই বখাটে ছেলেরা এবং র‌্যাপ (রেপ) করার চিন্তা তাদের মাথায় আসে।”

এই চিত্রনায়ক বলছেন, “শালীন ড্রেস পরলে যারা বখাটে ছেলে যাদের মাথায় ধর্ষণের চিন্তা-ভাবনা আসে, তারাও কোনও এই ধরনের চিন্তা করবে না। শ্রদ্ধার সঙ্গে তোমার দিকে তাকাবে। এবং তাকিয়ে থাকার পর চোখ নিচের দিকে নিয়ে তোমাকে সম্মান জানাবে।”

তার এমন মন্তব্য নিয়ে ফেইসবুক এখন সমালোচনায় মুখর।

জাস্টিন অ্যান্থনি নামের একটি আইডি থেকে ওই ভিডিওতে একজন মন্তব্য করে জানতে চেয়েছেন- “মাদ্রাসার যে ছাত্রটাকে বলাৎকার (ধর্ষণ) করা হয়েছে, তার পোশাকে কি প্রবলেম ছিল? চতুর্থ শ্রেণি ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া বাচ্চা মেয়েগুলোর পোশাকে কি অনেক সমস্যা ছিল?”

ভায়োলেট হালদার নামের আরেক আইডি থেকে আরেকজন লিখেছেন, “৩/৪ মাস বয়সী শিশু এবং বৃদ্ধা নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, এর জন্য পোশাক কেমন করে দায়ী হতে পারে? ছেলে শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তার জন্যও কি পোশাক দায়ী? পোশাকের চেয়েও ধর্ষণের ইতিহাস অনেক পুরাতন। আপনি আপনার মগজে শান দিন।”

অনন্ত জলিলের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সৈয়দ ইসমত তোহা লিখেছেন, “পোশাকের সাথে ধর্ষকের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আপনার কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত নই। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে আইনের কঠোরতা, প্রকাশ্যে ফাঁসি, দ্রুত আদালতে বিচারকার্য সম্পন্ন করে ফাঁসির ব্যবস্থা করা, জামিন নাকচ করা এবং উচ্চ আদালতে আবেদনের সুযোগ রহিত করতে হবে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মেয়াদ এক সপ্তাহ মাত্র হতে হবে।”

নারীরা কী ধরনের ‘শালীন’ পোশাক পরবেন তার একটি ব্যবস্থাপত্রও সোয়া ৬ মিনিটের ওই ভিডিও বার্তায় দিয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে অভিনেতা বনে যাওয়া অনন্ত জলিল।

“মডার্ন ড্রেস যেটা হবে, সেটাতে তোমার ফেইসটা দেখা যাবে, যেটা আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দিয়েছেন। কিন্তু বডিতে শালীন ড্রেস পরতে হবে। যে ড্রেসটা পরলে তোমাকে ভালো লাগবে।

“ছেলেদের মত একটা টি-শার্ট পরে তোমরা রাস্তায় বের হয়ে যাও। মডার্ন মেয়ে তুমি। ইজ্জত শেষ হলে যখন বাসায় যাও তখন আত্মহত্যা করো, আর যদি আত্মহত্যা নাও করো, মানুষের সামনে আর মুখ দেখাতে পারো না। “

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

আর এই আট মাসে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।

ওই প্রতিবেদন বলছে, ধর্ষণের ভিকটিমদের মধ্যে ৬৮ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে। আরও ১৩৯ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।

তবে অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার ওই প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে।

‘ধর্ষকদের শিক্ষা দিলেন অনন্ত জলিল’ শিরোনামে ওই ভিডিওবার্তার শুরুতে অনন্ত জলিল ধর্ষকদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের সামনে তোমাদের স্ত্রী কন্যাকে যদি কেউ র‌্যাপ (রেপ) করে, তাহলে তোমার কেমন লাগবে? তুমি তো একটা অমানুষ, তোমার ভালোই লাগবে মনে হয় না? না হলে তো অন্যের মেয়েকে, অন্যের মা বোনকে র‌্যাপ (রেপ) করতে পারতে না। তোমার যে মনুষত্ব সেটা তো মরে গেছে।”

আর ভিডিও বার্তার শেষ দিকে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর আছে আর্জি জানান এই চলচ্চিত্র অভিনেতা। 

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনি আমাদের অভিভাবক। আপনাকেই শক্ত হাতে এসব অমানুষের মৃত্যুদণ্ডের আইন ও বাস্তবায়নের সুব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আপনার দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে, আপনি কখন নির্দেশনা দেবেন।”