মিশা আমাকে প্রকাশ্যে অপমান করেছে: ওমর সানী

চিত্রনায়ক ওমর সানী গ্লিটজের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেছিলেন মুক্তির অপেক্ষায় থাকা নিজের অভিনীত চলচ্চিত্র ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ নিয়ে। মাঝখানে খানাখন্দে ভরা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আক্ষেপ করে আলাপচারিতার সমাপ্তি টানলেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে।  

সাইমুম সাদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2018, 04:40 PM
Updated : 2 June 2018, 07:47 PM

গ্লিটজ: ঈদে মুক্তি পাচ্ছে আপনার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’। দর্শকরা কী কারণে ছবিটি দেখতে হলে যাবে?

ওমর সানী: দর্শকদের প্রত্যাশার বড় একটা অংশজুড়েই থাকেন শাকিব খান। ছবিতে শাকিব খান আছেন। তারপরে মৌসুমী আছেন। উনারা সুপারস্টার। আমি আছি, বুবলি আছে। কাজী হায়াৎ সাহেব আছেন। উনারা চলচ্চিত্রের অলংকার।

এটি আঞ্চলিক ভাষার কমেডি-অ্যাকশন মুভি। হয়তোবা ছবিটি দেখে মজা পাবে পাবলিক। আমার মনে হয়, ঈদে দর্শকরা মজা পাওয়ার জন্যই সিনেমা হলে যায়।

ঈদের সিনেমা হিসেবে এই ধরনের চলচ্চিত্রকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উঠিত। পুরো সিনেমাটি দেখিনি এখনও। বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করেছি। পুরো সিনেমাটি দেখলে বিচার-বিশ্লেষণটা ভালোভাবে করতে পারতাম। শাকিবের গানগুলো দেখেছি। সবকিছু মিলিয়ে খারাপ হয়নি, ভালো হয়েছে অবশ্যই। আমার মনে হয় ছবিটি ভালো যাওয়ার কথা।

গ্লিটজ: এক চলচ্চিত্রে আপনি, মৌসুমী, শাকিব খান। সঙ্গে আছেন কাজী হায়াৎ, বুবলি। মাল্টিকাস্টিং চলচ্চিত্রগুলোতে চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে তারকাদের সবাইকে গুরুত্ব দেওয়া যায় না। এই ছবির ক্ষেত্রে কী ঘটেছে আসলে?

ওমর সানী: এটা আমার জন্য বলা দুরূহ। কারণ পুরো ছবিটি দেখিনি। তবে মনে হয় হয়তোবা উত্তম আকাশ কাজটা ভালোভাবেই পেরেছেন।

গ্লিটজ: আপনার চরিত্র নিয়ে কী বলবেন?

ওমর সানী: এতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মতো কিছু নেই। দর্শকরাই বিচার করবে। চলচ্চিত্রের যে অবস্থা এখন টিকে থাকাটাই বড় কথা। (হা হা) এভাবেই আছি আরকি!

গ্লিটজ: ছবিতে আপনি কি খল চরিত্রে কাজ করছেন?

ওমর সানী:
 অবশ্যই না। আমি খল চরিত্র সাত বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে আর কখনও খল চরিত্রে দেখবেন না।

গ্লিটজ: নায়ক থেকে খলনায়ক। সেখান থেকে আবার চরিত্র নির্ভর শিল্পী। ভিন্ন ভিন্ন পথে যাত্রার কারণ কী?

ওমর সানী: নায়ক-খলনায়ক বলে কোনো কথা নেই। প্রথম দর্শনেই যদি নামের মতো খলনায়ক শব্দটা টাইটেল হয়ে যায় তাহলে ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় খলনায়কের নাম শাহরুখ খান। প্রথম ছবিতেই খলনায়ক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। অমিতাভ বচ্চনও এ ধরনের চরিত্রে কাজ করেছেন।

অভিনয়টাই বড় কথা। আমিই বোধহয় একমাত্র শিল্পী যে, ৫০-৬০টা ছবিতে খলনায়ক হিসেবে কাজ করেছি। যেটা নাকি বিরল ঘটনা, অবাক করার মতো।

তারপর অনেক হিরোই এই ধরনের কাজ করেছেন। কিন্তু এই অবস্থায় যেতে পারেনি। কিন্তু কেউ না কেউ হয়তো যাবে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।

গ্লিটজ: চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কথিত ফ্রেমে আপনি এখন আর ‘নায়ক’ নন। দেশের বাইরে চরিত্র নির্ভর চলচ্চিত্র হলেও মোটাদাগে বাংলাদেশের বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই ‘নায়ক’নির্ভর। পেশা হিসেবে অভিনয়কে ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?  

ওমর সানী: আসলেই আমাদের বয়সী অভিনয় শিল্পীদের চরিত্র একেবারেই হচ্ছে না। নব্বইয়ের দশকে কিন্তু হত। অভিনয়টা চ্যলেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ভালোবাসার জায়গা থেকে থাকছি।

গ্লিটজ: এই সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ওমর সানী: মাদ্রাজের ছবির ক্যাটাগরিতে সবাই তো চলে। এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজেদের গল্প তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষদের গল্পের ছবি তৈরি করতে হবে। বিদেশি গল্প অবলম্বনে যত দিন ছবি বানানো বন্ধ না হবে ততদিন চলচ্চিত্রের কিছু হবে না।

গ্লিটজ: সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কী অবস্থা দেখছেন?

ওমর সানী: অবস্থা খুবই খারাপ। আর ভবিষ্যতে বলব, ‘ইন্নাল্লাহা মা সাবেরিন’। দেখা যাক সামনে কী হয়।

গ্লিটজ: ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখের সময় বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে বিদেশি চলচ্চিত্র দেখানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

ওমর সানী:
 ঈদের মধ্যে বিদেশি ছবি কেন চলবে? আমাদের তো নিজস্ব ছবি আছে। আমি এটার সঙ্গে একমত না। শাকিব খান আমাদের হিরো, ইন্ডিয়ান হিরো না কিন্তু। আমরা শাকিব খানকে নিয়ে গর্ব করি। ওকে ফাইন। কিন্তু তার অভিনীত ‘ভাইজান এলোরে’ বিদেশি ছবি। এই ছবি কেন দেশে রিলিজ হবে? শাকিবের আরেকটি ছবি ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ বাংলাদেশের ছবি। ওদের দুর্গা পূজায় কেন চলবে?

গ্লিটজ: কিন্তু এর আগে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।

ওমর সানী: শুনেছি আমি। যার যার স্বার্থে সে চলে। যার ব্যথা সে বোঝে। আপনার জ্বর এলে আপনাকেই ঔষুধ খেতে হবে। উনার সিনেমা হল চালাতে হবে সে কারণেই হয়ত বলছেন।

আমি যদি ব্যবসায়ী হতাম তাহলে আমারও তাই হত। আমি কাকে দোষারোপ করব? তবুও নওশাদ ভাইকে বলব, লোকাল ছবিগুলোই চালানো উচিত। উনি তো আমার বড় ভাইয়ের মতো। এটা ওনার কাছ থেকে আশা করব।

গ্লিটজ: নির্বাচনের পর থেকেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সঙ্গে আপনার ও মৌসুমীর দুরত্ব বেড়েছে। গতকালের শিল্পী সমিতির ইফতার ঘিরে নতুন সংকটের আভাস দিয়েছেন ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। সমস্যা মিটেছে কি?

ওমর সানী: সমাধান কিছুই হয়নি। ইফতার হয়েছে। আমরা খাওয়াটা খাইনি। এটাই সমাধান। এমনও না যে, উনারা ইফতার পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি তো বলি, ভাই কেন তোরা আমাদের এতো জ্বালাস? আমরা একটু খেলে কি তোদের ইফতার কমে যাবে? আমরা ইফতারে যদি না যাই তাহলে সব শিল্পীরা মনে করবে, মৌসুমী-ওমর সানী আমাদের সঙ্গে চলাফেরা করে না। আমরা যেন চলতে না পারি এই কারণেই হয়ত আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয় না।

...ইফতার নিয়ে কেন নাটক করব? বললেই হত, সানী ভাই ভুল হয়ে গেছে। বোধ হয় কার্ডটা যায়নি। ক্ষমা চেয়ে নিলাম।

গ্লিটজ: শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে আপনার একাধিকবার বাকযুদ্ধের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।

ওমর সানী: আমরা চাচাতো ভাই ছিলাম, এখন ফুফাতো ভাই হয়ে গেছি। আজকে এক সাংবাদিক আমাকে বলল, ইফতারের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে, মিশা নাকি আমার ব্যাপারে বলেছে, ‘ও তো হেরে গেছে। এ কারণে পাগল হয়ে গেছে।’ এসব শব্দ শোনার পর ওর সঙ্গে কীভাবে বসবাস করব?

আমি যদি পাগল হয়ে থাকি তাহলে যারা কার্ড পায়নি তারাও পাগল হয়ে গেছে। এটা শিক্ষিত মানুষের শব্দ? আমি কিন্তু ওর প্রশংসা করেছি। কিছু মানুষ কসমেটিক্স সার্জারি করেও কোনো সময় লাভ হয় না। বুঝতে পারছেন? (হা হা)

গ্লিটজ: কিন্তু মিশা সওদাগর তো আপনার ভালো বন্ধু ছিলেন। আপনাদের বিবাহবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা গেছে। সম্পর্কের জটিলতা বাড়ল কীভাবে?

ওমর সানী: ফাটলের কথা অনেক দীর্ঘ।..নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ওর নির্বাচন করার কথা ছিল না। হুট করে দাঁড়িয়ে গেছে। একদিন আমিন খানের বাসার নিচে প্রকাশ্যে প্রচণ্ড রকমের অপমান করে আমাকে। বলে, ‘তুই কোন আমলে স্টার ছিলি? কোন আমলে প্রথম সারির হিরো ছিলি?’

এতে আমি খুব অসন্তুষ্ট হয়েছি। এই বিষয় নিয়েই ওর সঙ্গে আমার দূরত্ব। শুধু তাই নয় ও মৌসুমীকে ‘বুড়ি’ বলেছে। এটা কি কোনো শব্দচয়ন?