জলের গানের সদস্য ও প্রাচ্যনাটের নাট্যকর্মী এবি সিদ্দিকী বলেন, “হিন্দু ধর্মের বলে রাহুল দা'র বাড়িতে হামলা হয়েছে, এই কথাটি মিথ্যা।”
Published : 13 Aug 2024, 07:29 PM
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্প স্থাপনায় হামলার মধ্যে আক্রান্ত হয় সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়িও।
এই ঘটনাকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ বললেও রাহুল আনন্দের পরিবার এবং তার ব্যান্ডদল ‘জলের গানের’ সদস্যরা বলছেন, এটি কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা ছিল না।
“৩২ ধ্বংস করার উন্মাদনায় আমার ঘর পুড়ে গিয়েছে,” বলেছেন রাহুলের স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা।
তবে সেদিনও কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছিল এবং তারা চেয়েছিল অন্যদের বুঝাতে। কিন্তু কেউ কারও কথা শোনার মতো অবস্থায় ছিল না বলে জানান শুক্লা।
জলের গানের সদস্য ও প্রাচ্যনাটের নাট্যকর্মী এবি সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হিন্দু ধর্মের বলে রাহুল দা'র বাড়িতে হামলা হয়েছে, এই কথাটি মিথ্যা। ধানমণ্ডি ৩২ এর রাস্তার শুরু থেকে সকল বাড়ি আক্রমণ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। এইরকম বিপদ যার মাথার উপর দিয়ে যায় স্বাভাবিকভাবে তার বারংবার স্ট্যাটাস দিয়ে জানানোর মন মানসিকতা থাকে না।”
বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকের অনেক রকম অনুসন্ধিৎসূ প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এমন ঘটনা যার ওপর দিয়ে ঘটে যায় কিংবা যারা এই ধরনের বিপদের ভেতর দিয়ে যায়, তারা স্বাভাবিক মানুষের মত এতকিছু চিন্তা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ স্টেটমেন্ট দিতে পারেনা। এই বিপদগ্রস্ত সময় যেকোনো মানুষের মতো রাহুল দা'ও মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিভ্রান্তি আর না বাড়ানোর জন্য সকলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ থাকল।”
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের পাশেই একটি বাড়িতে থাকতেন রাহুল আনন্দ। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং আশপাশে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়।
ওই সময় আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় রাহুলের বাড়িটিও। যে বাড়িটির একটি অংশে ছিল জলের গানের স্টুডিও এবং রাহুলের সংগ্রহে থাকা প্রায় হাজারখানেক বাদ্যযন্ত্র। যার মধ্যে তিন শতাধিক বাদ্যযন্ত্র ছিল রাহুলের নিজের হাতে বানানো, যেগুলোর মধ্যৌ কিছু আগুনে পুড়েছে আর বাকিগুরো লুট হয়েছে।
হামলার দিন সন্ধ্যায় ৩২ নম্বরে সরেজমিনে দেখা যায়- বাড়িটিতে আগুন জ্বলছে এবং কিছু লোক বাড়ির মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির এসিও খুলে নিয়ে যায় কেউ কেউ।
তাৎক্ষণিকভাবে রাহুল আনন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কিছু ছেলেপেলে এসে আমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলল, তাদের বললাম, আমি তো তোমাদের জন্যই গান করি। এই আন্দোলনেরও সমর্থক ছিলাম। তবুও আমার বাড়িতে কেন হামলা করছ? তারা বলল, ‘আপনারা বের হয়ে যান, না হলে বিপদ হবে’। পরে আমরা বেরিয়ে চলে আসি।”
রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুনের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকে ফেইসবুকেও পোস্ট লেখেন। শিল্পকলা একাডেমির সামনে ভাস্কর্য, শিল্পস্থাপনা ভাঙচুরের প্রতিবাদে সমাবেশও হয়। সেখানে রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলারও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর মধ্যে কেউ কেউ হামলাটিকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
তবে সেটি যে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ ছিল না, তার কথা উঠে এসেছে রাহুল আনন্দের স্ত্রীর কথায়।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করে ঊর্মিলা শুক্লা মঙ্গলবার ফেইসবুকে লিখেছেন, “বাইরে জনতার বিজয় মিছিলের চিৎকার। হঠাৎ দেখলাম পিছনের সবগুলো বাড়িতে আগুন। আমরা মুহূর্তেই দিশেহারা হয়ে পড়লাম। বুঝলাম ৩২ এর সবগুলো বাড়িতেই আগুন লাগানো হয়েছে।”
“আমাদের বাড়িটা সান্তুর রেস্টুরেন্টের পিছনে। পাশে আমাদের বাড়িওয়ালা আইনুল হক-এর তিনতলা বাড়ি, সেখানে প্রথম ভাঙচুর হয় ও আগুন দেয়। যখন সান্তুরের গেইট দিয়ে উল্লাসে জনতা ঢুকে পড়েছে আর সান্তুরে আগুন ধরাচ্ছে তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি করব। আমার যে ঘরভর্তি বাদ্যযন্ত্র। তাদেরকে বুঝানোর জন্য এগিয়ে গেলাম পরিবারের সবাই। তারা তখন ৩২ ধ্বংসের উল্লাসে কোনো কিছুই শোনার চেষ্টা করেনি।”
সেদিন ৩২ নম্বরের আরও অনেক বাড়িতেও আগুন-লুটপাটের ঘটনা ঘটে জানিয়ে শুক্লা বলেন, “একজন বলল- ১৪ বছরের রাগ। এই এলাকা ধ্বংস করবেই। বরং আপনাদেরকে আমরা সাবধানে বের করে দিচ্ছি। আপনারা এখান থেকে চলে যান। ৩২ ধ্বংস করার উন্মাদনায় আমার ঘর পুড়ে গিয়েছে। শুধু আমার নয় আমাদের বাড়ির মালিকের ঘরও পুড়েছে। আশপাশের আরও কিছু বাড়ি-ঘরও পুড়েছে।”