প্রায় দুই দশক আগে একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ, যাতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টম হ্যাংকস। ‘দ্য টার্মিনাল’ নামে ওই সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
যে ব্যক্তির জীবন নিয়ে সেই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল, সেই মেহরান করিম নাসেরি শনিবার মারা যাওয়ার পর আলোচনায় ফিরে এসেছে ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে জন্ম নেওয়া নসেরি তার মাকে খুঁজতে গিয়েছিলেন ইউরোপে। কয়েক বছর কাটান বেলজিয়ামে; কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ অনেকগুলো দেশ তাকে বহিষ্কার করে। এরপর তিনি ফ্রান্সে যান, সেখানে শার্ল দ্যু গল বিমানবন্দরের টার্মিনালকে বানিয়ে ফেলেন ঘরবাড়ি।
যে বেঞ্চে তিনি থাকতেন, তার চারপাশ ঘিরে থাকা ট্রলিতে কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় জিনিস রাখতেন তিনি। দিন কাটাতেন জীবন সম্বন্ধে নোটবুকে লেখালেখি করে, বই আর খবরের কাগজ পড়ে।
তার সেই কাহিনী শোনেন হলিউডের চলচ্ত্রি নির্মাতা স্পিলবার্গ; আর তা থেকে টম হ্যাংকস ও ক্যাথরিন জেটা-জোনসকে নিয়ে বানান ‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমাটি।
নাসেরির ভূমিকায় সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাংকস। তবে তাকে ইরানের নয়, পূর্ব ইউরোপের একটি দেশের নাগরিক হিসেবে।
সিনেমায় বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন ভিক্টর নেভ্রস্কিরূপী হ্যাংকস, তবে তিনি আকাশে থাকতেই তার দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হলে সব দেশ তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাতে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে আটকে পড়েন হ্যাংকস।
সেখানে টার্মিনালে তার অদ্ভুত জীবনযাপনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক কেবিন ক্রুর সঙ্গে, যার ভূমিকায় অভিনয় করেন ক্যাথরিনা জেটা-জোনস।
স্পিলবার্গ ‘দ্য টার্মিনাল’ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছিলেন, “দ্য টার্মিনাল আমাদের হাসাতে পারে এবং কাঁদাতে পারে এবং বিশ্বের সুন্দর দিকগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারে।”
তবে শুটিং করতে গিয়ে বেশ জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল স্পিলবার্গকে। পামডেল বিমানবন্দরে বড় একটি হ্যাঙ্গারের ভেতরে সম্পূর্ণ সেট ফেলতে হয়েছিল তাকে। আর বেশিরভাগ বাইরের দৃশ্য ছিল মন্ট্রিয়াল-মিরাবেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।
৬ কোটি ডলার বাজেটের ‘টার্মিনাল’ বিশ্বব্যাপী আয় করে ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সিনেমার প্রয়োজনে নাসেরির জীবন কাহিনীর স্বত্ব কিনেছিলেন স্পিলবার্গ। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য গার্ডিয়ানে খবর এসেছিল, নাসেরি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার পেয়েছেন।