‘মনোলোক’ পড়ে আছে সেন্সর বোর্ডে, নির্মাতার প্রশ্ন

সেন্সর বোর্ড সিনেমাটি না দেখেই এর রাজনৈতিক চরিত্রগুলোর সংলাপের দালিলিক প্রমাণ চেয়েছে, বলছেন নির্মাতা।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 03:44 AM
Updated : 24 May 2023, 03:44 AM

জমা দেওয়ার সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে ‘মনোলোক’ সিনেমাটি দেখানো হয়নি, এমনকি প্রদর্শন তালিকাতেও সিনেমাটির নাম রাখা হয়নি।

তবে সিনেমা না দেখেই এর রাজনৈতিক চরিত্রগুলোর সংলাপে ব্যবহৃত তথ্যের ‘দালিলিক’ প্রমাণ তুলে ধরতে সেন্সর বোর্ড চিঠি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এর নির্মাতা শহীদ রায়হান।

‘হাব মিডিয়া ইউকে’ প্রযোজিত ‘মনোলোক’ সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন পরিচালক শহীদ রায়হান।

তিনি গ্লিটজকে জানিয়েছেন, ছাড়পত্র পেতে সেন্সরবোর্ডে ‘মনোলোক’ জমা দেওয়া হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি।

“এই পর্যন্ত চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের প্রদর্শন তালিকায় স্থান পায়নি। ফলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে চলচ্চিত্রটি ছাড়পত্রের জন্য প্রদর্শিত হয়নি।”

এ বিষয়ে জানতে বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কি না- জানতে চাইলে রায়হান বলেন, “সেন্সর বোর্ডের সম্মানিত সদস্যদের কাছে যখন জানতে চেয়েছি, তারা আমাকে বলেছেন সিনেমাটি এখনও প্রদর্শন তালিকায় দেওয়া হয়নি। যে কারণে সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এখনও সিনেমাটি দেখেননি।”

রায়হান আরও জানান, গত ১৭ এপ্রিল সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনউদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠি তিনি পেয়েছেন।

“তারা সিনেমাটি প্রিভিউ করেননি। কিন্তু ওই চিঠিতে ‘মনোলোক’-এ ব্যবহৃত রাজনৈতিক চরিত্রগুলোর সংলাপে ব্যবহৃত তথ্যগুলোর বিধিসম্মত দালিলিক প্রমাণ তাদের দপ্তরে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। চলচ্চিত্রটি না দেখিয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড’র নীতিমালা বহির্ভূত কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।”

ওই চিঠির পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গত ২৫ এপ্রিল ‘দালিলিক’ প্রমাণ হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, গবেষণা রিপোর্টের প্রকাশিত কপিসহ ৭৪টি প্রকাশিত ও প্রচারিত আর্টিকেলের প্রিন্টেড কপি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরাবর উপস্থাপন করেন বলেও জানান শহীদ রায়হান।

এই বিষয়ে জানতে চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহ এবং উপপরিচালক মো. মঈনউদ্দীনের সঙ্গে গ্লিটজ যোগাযোগ করেছিল। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সেন্সর বোর্ডের একজন কর্মকর্তা গ্লিটজকে বলেন, “চলচ্চিত্রটি যেহেতু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ রাজনৈতিক নানা ঐতিহাসিক ঘটনা এবং চরিত্র রয়েছে। তাই সেসব ঐতিহাসিক চরিত্রের দালিলিক প্রমাণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে দিতে বলা হয়েছে। তারা সেগুলো দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু সময় লাগছে।“

কিন্তু প্রিভিউ না করে সেন্সরবোর্ড সিনেমাটিতে থাকা চরিত্রগুলোর সংলাপের দালিলিক প্রমাণ চাইতে পারেন কী না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে নির্মাতার অভিযোগ থাকলে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। তারপর সাংবাদিকদের জানাতে পারতেন। কিন্তু এখনই কেন সাংবাদিকদের বিষয়টি জানাতে গেলেন।”

মন্ত্রণালয়ে কোনো অভিযোগ করেছিলেন কি না- জানতে চাইলে নির্মাতা রায়হান বলেন, “মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আমি দেখা করে কথা বলেছি, লিখিত কোনো অভিযোগ করিনি। সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের সাথেও কথা বলেছি। উনাকে বলেছি, আপনারা সিনেমাটি প্রিভিউতে দেন। বোর্ড সদস্যরা প্রিভিউ করে যদি সিনেমাটি বাতিল করে দেন, সেটা আমাকে জানান। তিনি শুধু বলেন, দেখছি।”

সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয়েছে জানিয়ে রায়হান বলেন, “সিনেমাটি প্রদর্শন তালিকাতেই দেওয়া হয়নি। তালিকায় থাকলে তো বোর্ড সদস্যরা সেটি দেখবেন। তারা আমাকে জানিয়েছেন, তারা এখনও সিনেমাটি দেখেননি। কারণ সিনেমাটি বোর্ডের প্রদর্শন তালিকায় দেওয়া হয়নি।”

সিনেমাটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে শহীদ রায়হান বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অচেতন মনে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক প্রবাহ এবং স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের কাল্পনিক বিশ্লেষন ‘মনোলোক’ চলচ্চিত্র।

“বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার চিন্তালোকে লালিত বাংলাদেশ.. বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ড আর ত্যাগের মহিমায় আবর্তিত ‘মনোলোক’ চলচ্চিত্র।”

এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন নিপুণ আক্তার, ফজলুর রহমান বাবু, দিপা খন্দকার, সমু চৌধুরী, মোহাম্মদ বারী, এ কে আজাদ সেতু, জয়িতা মহালনবিশ, নেয়াজ তারেক মাসুদ মহিউদ্দিন, আশরাফুল আশীষ, আরিয়ান, সংগীতা চৌধুরীসহ অনেকে।