কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরব ভারতের শিল্পীরাও

“ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন” লিখেছেন কবীর সুমন।

সংগীতশিল্পী কবীর সুমন ও অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গোটা দেশ যেমন পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছে তেমনি নাটক-সিনেমা জগতের তারকারাও ফেইসবুকে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলেন ভারতের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী কবীর সুমন ও কলকাতার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।

চলমান আন্দোলনে সহিসংতা বন্ধে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে ফেইসবুকে কবীর সুমন লিখেছেন, "আমি ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তার বিষয়-আশয়ে নাকগলানোর অধিকার আমার নেই। সেটা করতে চাইও না। তবু বাংলাদেশের অনেকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা ভুলে থাকতেও পারছি না। ভুলবই বা কেন?"

মন থেকে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে এই সংগীতশিল্পী লিখেছেন, "ছবি দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটু আগেই দেখলাম। মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। নেপথ্যে শোনা যাচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের “কারার ঐ লৌহকপাট/ভেঙে ফেল্ কর রে লোপাট”! মনে হচ্ছে গানটি এডিট করে বসানো হয়েছে ভিডিওর সঙ্গে। ঠিক কাজই করা হয়েছে। কত সময়ে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমার গানের লাইন লিখে দিয়েছেন দেওয়ালে। পশ্চিমবঙ্গে সে তুলনায় কিছুই দেখিনি। বলতে দ্বিধা নেই, মনে মনে আমি বাংলাদেশেরও নাগরিক।"

তিনি আরও লিখেছেন, "আমার জীবনের সেরা কাজ এবং আমার জীবনসায়াহ্নের প্রধান কাজ বাংলা খেয়াল বাংলাদেশে চর্চা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শিল্পী মরহুম আজাদ রহমান বেশ কিছু বাংলা খেয়াল রচনা করে গিয়েছেন বিভিন্ন রাগে। বাংলা ভাষা আর বাংলা খেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমি বাঁধা ভালোবাসার বন্ধনে। গতবার ঢাকায় গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যে সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি, তা ভারতে পেয়েছি ক’বার?"

বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে সহিংসতাকে ইঙ্গিত করে কবীর সুমন লিখেছেন, "এহেন আমি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন। আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হল এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তা-ও তো ঠিকমত জানি না। তা-ও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাংলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা-হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম, শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন। আর কী বলি! আমি তো সশরীরে যেতে পারছি না ঢাকায়। পারলে যেতাম। রাস্তায় বসে পড়ে সকলকে শান্তি রক্ষার জন্য আহ্বান করতাম।’

পোস্টের শেষভাগে তিনি লিখেছেন, “হানাহানি বন্ধ হোক। বন্ধ হোক উল্টোপাল্টা কথা বলা। বাঁচুক বাংলাদেশ। বাঁচুন বাংলাদেশের সবাই। জয় বাংলাদেশ, জয় মুক্তিযুদ্ধ, জয় অসংখ্য বাংলাদেশির শাহাদাত ও অপূরণীয় ক্ষতিস্বীকার। জয় বীরাঙ্গনার। জয় বাংলা ভাষার।”

এই স্টাটাসের দুই ঘণ্টা পর একটি কবিতাও পোস্ট করেছেন কবীর সুমন।

অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি তুলে ধরে লিখেছেন, "এই তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয় না, মা'ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি, কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীরনগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছগুলোও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘগুলোও।"

তিনি আরও লিখেছেন, "কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ। এমন এক আপ্যায়নপ্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, অমন সুন্দর করে সারা রাস্তাজুড়ে ভাষার আল্পনা আর কোথায় দেখব? নয়নজুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব।"

আলো আসুক- এমন প্রত্যাশা করে অভিনেত্রী লিখেছেন, "আজ ভীষণ অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো- সেই আমাদের আলো/আলো হোক/ভাল হোক সকলের।”

বাংলাদেশের 'আলতাবানু জোসনা দেখেনি' সিনেমায় দেখা যাবে স্বস্তিকা মুখার্জিকে। খুব শিগগির সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে বলে জানান সিনেমার নির্মাতা হিমু আকরাম।