ফরাসি সংগীতশিল্পী এদিথ পিয়াফের বিখ্যাত গান ‘হিম টু লাভ’ গানটি গেয়েছিলেন ডিওন।
Published : 28 Jul 2024, 11:20 AM
“যদি আমি দৌড়াতে না পারি, আমি হাঁটব, আর যদি হাঁটতেও না পারি, হামাগুড়ি দেব, তবুও আমি থামব না’- মাসখানেক আগে এই কথাগুলো বলেছিলেন স্নায়ুরোগে আক্রান্ত সংগীতের তারকা সেলিন ডিয়ন। সেই গায়িকাই হেঁটে মঞ্চে উঠে সুরের লহর তুলে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজন মাতিয়ে দিলেন।
প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে শুক্রবারের ওই আয়োজনে শ্রোতা-দর্শকদের সামনে দারুণ বিস্ময় নিয়ে হাজির হন টাইটানিক সিনেমার ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানের শিল্পী ডিয়ন।
সিএনএন লিখেছে, ডিয়নের এই প্রত্যাবর্তন হয়েছে রাজসিক। সাদা গাউনের রুপালি আভা ছড়িয়ে ডিয়ন যখন মঞ্চে পা রাখেন, তুমুল করতালিতে তখন কান পাতা দায়। উঠে দাঁড়িয়ে শিল্পীকে অভিবাদন জানান তার অনুরাগীরা।
ডিয়ন ‘দুর্দান্ত ফর্মে’ ছিলেন মন্তব্য করে সিএনএন লিখেছে, শোনা গিয়েছিল কানাডিয়ান সুপারস্টার লেডি গাগার সঙ্গে দ্বৈত গানে পাওয়া যাবে এই শিল্পীকে। কিন্তু তা হয়নি।
ঠিক চার বছর পর মঞ্চে ফিরে একাই গেয়েছেন গ্র্যামিজয়ী ডিয়ন। শেষবার তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে মঞ্চে পাওয়া গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে।
ডিওন ফরাসি সংগীতশিল্পী এদিথ পিয়াফের বিখ্যাত গান ‘হিম টু লাভ’ গানটি পরিবেশন করেন।
ওই সন্ধ্যায় দর্শকদের সারিতে বসা প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ দর্শক-সবারই মনোযোগ ছিল কেবল ডিয়নের দিকে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “ডিয়ন একজন কানাডিয়ান আইকন, দুর্দান্ত শিল্পী। এই পারফরমেন্সে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। আপনাকে মঞ্চে দেখে খুব ভালো লাগছে।”
সোশাল মিডিয়ায় ইতালীয় গায়িকা লরা পাউসিনি লিখেছেন, “প্রিয় ডিয়নকে মঞ্চে গাইতে থেকে আমার শরীর কাঁপছিল, আমি কাঁদছিলাম।”
অনুষ্ঠান শেষে এক্সে ডিয়ন লিখেছেন, “প্যারিস অলিম্পিকে গান গাইতে পেরে আমি সম্মানিত। আমার প্রিয় শহরে গানের মঞ্চে ফেরার ঘটনা আমার জন্য আনন্দের।”
চার দশকের বেশি সময় ধরে পপ ও রক ঘরানার গানে জনপ্রিয় ৫৬ বছর বয়সী ডিয়ন। তবে ১৯৯৭ সালে নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের কালজয়ী সিনেমা ‘টাইটানিক’র থিম সং গেয়ে তিনি পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার শিখরে।
২০২২ সালে ডিসেম্বরে খবর আসে, দুরারোগ্য এক অসুখে ভুগছেন এই শিল্পী। সে সময় কয়েকটি কনসার্ট বাতিল করে ডিয়ন বলেছিলেন, তিনি ‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়েছে। স্লায়ুর ওই অসুখের ধাঁচটা এমন যে, যা প্রতি ১০ লাখে একজনের হয়। ওই রোগ তাকে স্বাভাবিকভাবে চলতে, গাইতে বাধা দিচ্ছে।
‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোম’ মানুষের স্নায়ু ও মস্তিষ্কের উপরে প্রভার ফেলে। অসুস্থতার জন্য গত বছর ‘কারেজ ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ বাতিল করেন ডিয়ন। তবে ওই সময়ের পর থেকে কয়েকবার তিনি ইনস্টগ্রামে বলেছেন, তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন।
ডিয়ন বলেছিলেন, “দুর্ভাগ্যবশত আমার দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করেছে অসুখটি, কখনও কখনও আমার হাঁটতে-চলতে সমস্যা হয়। এবং যেভাবে গান গেয়ে আমি অভ্যস্ত, সেভাবে পারছি না।”
গত ২৫ জুন অ্যামাজন প্রাইমে ডিয়নকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘আই অ্যাম: সেলিন ডিওন’ মুক্তি পেয়েছে। সেখানে স্টিফ পারসন সিনড্রোমের সঙ্গে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা বলেছেন ডিওন।
অসুস্থ সেলিন ডিয়নের 'ওয়ার্ল্ড ট্যুর' বাতিল
তিনি বলেন, গাইতে গেলে মাঝেমধ্যে মনে হয় কেউ যেন তার শ্বাসরোধ করেছে। অসুখের কারণে পেট, মেরুদণ্ড এবং পাঁজরসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে খিঁচুনি হত। তবে ওই তথ্যচিত্রে ডিওন বলেছিলেন, তিনি গানে ফিরে আসার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
চার দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন ডিয়ন। তার তার গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে আছে ‘দ্য পাওয়ার অব লাভ’, ‘থিঙ্ক টোয়াইস’, ‘বিকজ ইউ লাভড মি’, ‘ইটস অল কামিং ব্যাক টু মি নাউ’সহ আরো কয়েকটি।
ডিয়ন ছাড়াও উদ্বোধনী আয়োজনে পপ তারকা লেডি গাগাসহ আরও কয়েকজন সংগীত পরিবেশন করেন।