“যতদূর সম্ভব শুদ্ধ আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটিই আমার অর্জন,” বলেন তিনি।
Published : 02 Jun 2024, 12:04 AM
সন্ধ্যার এক আয়োজনে মঞ্চে উঠলেন সৈয়দ আব্দুল হাদী; আগেই বলেছিলেন গান করবেন না, কিন্তু না গেয়ে থাকতেও পারলেন না।
জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী বলছিলেন, “এখন যে আমি গান করছি না, বা এই মঞ্চেও আমি গান গাইব না বলেছি…, তার কারণ হল, গানে আমি ফাঁকি দিতে চাই না। ফাঁকি দিয়ে আর যাই হোক, গান হয় না।”
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে আব্দুল হাদীকে সংবর্ধনা দিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন 'শুদ্ধমঞ্চ'; 'আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে' শিরোনামে ওই আয়োজন করে সংগঠনটি।
সংবর্ধনার মঞ্চে উঠে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে আব্দুল হাদী বলেন, “আমাকে যখন কোনো সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়, আমি সাধারণত রাজি হই না। কারণ, আমাকে সংবর্ধনা দেওয়ার কারণ কী? জীবনে তো রবীন্দ্রনাথের মত মহৎ কিছু করতে পারিনি। কাজেই আমাকে তো সংবর্ধনা দেওয়ার কিছু নেই।
“তবে একটি কাজ সারাজীবন মন দিয়ে করার চেষ্টা করেছি, সেটা হল গান। আজীবন গান গাওয়ার চেষ্টা করেছি। যতদূর সম্ভব শুদ্ধ আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটিই আমার অর্জন।”
ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে গান শুনিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই শিল্পী বলেন, “আমার জীবনে অনেক কিছুতেই ফাঁকি দিয়েছি, চাকরিতে বা পড়ালেখায় অনেক ফাঁকি দিয়েছি। কিন্তু একটা জায়গায় আমি কখনই ফাঁকি দেইনি, তা হল গান।”
প্রথমে মঞ্চে গানের আগ্রহ না থাকার কথা জানালেও যখন 'এ মণিহার আমার নাহি সাজে' গানটি শুরু করেন, মিলনায়তনজুড়ে দর্শক তখন করতালিতে শুভেচ্ছা জানান এ শিল্পীকে।
অনুষ্ঠানে তার হাতে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দেয় শুদ্ধমঞ্চের শিল্পীরা। সৈয়দ হাদীর জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনান তারা। পরে গান, আর গল্প আড্ডায় নানা কথা বলেন ষাটের দশকের এই শিল্পী।
ষাটের দশকে 'কিছু বলো' গানের মাধ্যমে বেতারে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন আব্দুল হাদী। মঞ্চে এক শিল্পী যখন সেই গানটি শোনাচ্ছিলেন, আব্দুল হাদী তখন গুনগুন করে সুর মেলাচ্ছিলেন। গান নিয়ে স্মৃতিকথাও তুলে ধরেন তিনি।
১৯৪০ সালের পয়লা জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ হাদী শৈশব-যৌবন কাটিয়েছেন তার দাদার আগরতলার বাড়িতে। তার দাদা আগরতলা কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। সৈয়দ হাদী ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা নেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ‘ইয়ে ভি এক কাহানি’ ছবিতে কণ্ঠদিয়ে জনপ্রিয়তার সিঁড়ি খুঁজে পান। এরপর আর থেমে থাকেননি। অসাধারণ সঙ্গীত পরিবেশনার জন্যে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মাননা পেয়েছেন। ২০০০ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে থাকা তার একক গানের অ্যালবামগুলো হচ্ছে- একবার যদি কেউ, পৃথিবীর পান্থশালায়, একদিন চলে যাব, কথা বলব না, মেঘের পালকি, যখন ভাঙল মিলন মেলা, নিয়তি আমার, হাজার তারার প্রদীপ ইত্যাদি।
তার সাড়া জাগানো গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আছেন আমার মুক্তার, আমি তোমারি প্রেম ভিখারি, চোখ বুজিলেই দুনিয়া আন্ধার, চোখের নজর, চলে যায় যদি কেউ, একবার যদি কেউ ভালোবাসত, এমনও তো প্রেম হয়, যেও না সাথী, জন্ম থেকে জ্বলছি, কী করে বলিব, কেন তারে আমি ভালোবেসেছিলাম, সতি মায়ের সতি কন্যা, তোমাদের সুখের নীড়ে, কারো আপন হইতে, যে মাটির বুকে, কথা বলব না বলেছি, জানি তুমি চলে যাবে, সখী চল না জলসা ঘরে, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুদ্ধমঞ্চের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাঈদুল হাসান বলেন, “শুদ্ধমঞ্চ সুফিয়া কামাল, কলিম শরাফী, সুধীন দাসসহ অনেক কীর্তিমান শিল্পীকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। তারই পরিক্রমায় এবার সম্মাননা জানাচ্ছে কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীকে।
“আমাদের আধুনিক বাংলা গানের ভোর হয়েছে যে কয়েকজনের হাত ধরে, তাদের মধ্যে অন্যতম সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী।”
পুরনো খবর-
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ‘আজীবন সম্মাননা’ পেলেন আব্দুল হাদী