টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না গায়ক আকবরের

“ঘরের ফার্নিচারও বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রি করার মত আর কিছু নাই। এখন কারো কাছে টাকা ধার করার মত অবস্থায়ও নেই,” বললেন আকবরের স্ত্রী।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 07:42 AM
Updated : 30 Sept 2022, 07:42 AM

টাকাপয়সার টানাটানিতে ‘ইত্যাদির’ গায়ক আকবর আলীকে ছাড়তে হয়েছে হাসপাতাল; বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর সাধারণ চিকিৎসা চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। 

কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আকবরকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে দুই দফায় তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই গত সোমবার তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা গ্লিটজকে বলেন, তার স্বামীর পায়ে ‘পচন’ ধরেছে। চিকৎসকরা তার পা বাঁচানোর জন্য অস্ত্রপোচার করে পচন ধরা জায়গার কিছু অংশ বাদ দিয়েছেন।

কিন্তু ভবিষ্যতে পচন বাড়লে পা কেটে ফেলতে হতে পারে। হাড় এবং সেখান থেকে শরীরের অন্য অংশে সংক্রমণ ছড়ালে আকবরের জীবন শঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে জানালেন তার স্ত্রী।

বাসা থেকেই যতটুকু সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ফাতেমা বলেন, “প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। এত টাকা কোথায় পাব? ঘরের ফার্নিচারও বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রি করার মত আর কিছু নাই। এখন কারো কাছে টাকা ধার করার মতো অবস্থায়ও নেই।

“অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। কার কাছে টাকা চাইব? কোনো উপায় দেখছি না, এজন্য বাসায় নিয়ে এসেছি। যন্ত্রণায় ছটফট করছে, সেটা দেখেও কিছু করতে পারছি না। খুব অসহায় লাগছে।”

সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার চেষ্টা করেছেন কি না প্রশ্নে কানিজ ফাতেমা বলেন, “সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার মুখও তো আমাদের নাই। সরকার তো আর্থিক সহযোগিতা করেছে। এখন আর কীভাবে সাহায্য চাই? কোন মুখে সাহায্য চাইব? কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না, কীভাবে কী করব!”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকবরের চিকিৎসার জন্য এর আগে ২২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেন, সেই অনুদানের অর্থেই এতদিন আকবরের চিকিৎসা চলেছে। তবে সেই সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারলে চিকিৎসা করানো সহজ হত বলে মনে করছেন কানিজ।

“২২ লাখ টাকা থেকে প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ আমরা পাই। সেই ১৬ হাজার টাকা তো ২/৩ দিনেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর অনুমতির জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, এটা নাকি ভাঙানোর সুযোগ নাই। এখন এই সঞ্চয়পত্র যদি ভাঙানো যেত, তাহলে চিকিৎসা করাতে পারতাম। সঞ্চয়পত্র থেকেও তো আমাদের কোনো কাজে লাগতেছে না।”

Also Read: ইত্যাদির সেই আকবরের অবস্থার অবনতি, চিকিৎসা চালাতে হিমশিম

Also Read: গুজব ছড়াবেন না, অনুরোধ গায়ক আকবরের স্ত্রীর

ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকেন আকবর। ২০০৩ সাল থেকেই ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। কিন্তু বছর পাঁচেক ধরে কিডনির সমস্যা বেড়ে যায়। তখন থেকে স্টেজ শো বাদ দিতে হয়েছে তাকে।

গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে।

প্রথাগত পদ্ধতিতে গান না শিখলেও আকবরের ভরাট কণ্ঠের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন তিনি।

২০০৩ সালে যশোর এম এম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেই গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বাগেরহাটের এক ব্যক্তি হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লিখে এই গায়কের কথা জানান। এরপর ‘ইত্যাদি’ কর্তৃপক্ষ আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

ওই বছর ‘ইত্যাদিতে’ কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে’ গানটি আলোচনায় নিয়ে আসে আকবরকে।  পরে ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটিও জনপ্রিয়তা এনে দেয় এই শিল্পীকে।