বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতার জেরেই একসময়ে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ বহু কালজীয় সিনেমা তৈরি করতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
Published : 09 Aug 2024, 09:44 PM
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বর্ষিয়ান কমিউনিস্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকার্ত টালিগঞ্জের অভিনয় শিল্পীরা।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রুপা গাঙ্গুলি, জিতু কমল থেকে শুরু করে আরো কয়েক অভিনয় শিল্পী মনে করেন, এই নেতার প্রয়াণের সাথে সাথে বিদায় হয়েছে রাজনীতির এক অধ্যায়ের। তাদের স্মৃতি কথনে উঠে এসেছে এই রাজনীতিকের কর্ম ও যাপিত জীবনের কিছু অংশ।
শোকে ভাসছেন পরিচালক গৌতম ঘোষসহ আরো কয়েকজন নির্মাতা। পরিচালকদের ভাষ্য, বুদ্ধদেবের তার হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল কলকাতার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘নন্দন’।
এই রাজনীতিকের পৃষ্ঠপোষকতার জেরেই একসময়ে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার থেকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ বহু কালজীয় সিনেমা তৈরি করতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
ফেইসবুকে এই রাজনীতিকের ছবি শেয়ার করে প্রসেনজিৎ লিখেছেন,‘‘একজন সত্যিকারের ভালো, গুণী মানুষ চলে গেলেন।”
নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। আমি হাসপাতালে দেখতেও গিয়েছিলাম।’’
ঋতুপর্ণা জানান, তার বিয়েতে একই সঙ্গে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব উপস্থিত হয়েছিলেন। অভিনেত্রীর কথায়,‘‘আমাকে দুজনেই আশীর্বাদ করেছিলেন।’’
ঋতুপর্ণার ভাষ্য, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিরা বিরল। তাঁদের ত্যাগ, মানসিকতা, শিক্ষা আমাদের সমাজকে সব সময় সমৃদ্ধ করেছে। বুদ্ধদেব প্রয়াত হলেও তার কাজ মানুষ মনে রাখবেন। নিজের আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। আমি তাঁকে প্রণাম জানাই।’’
অভিনেতা কৌশিক সেন বলেছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যতটা না রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি সংবেদশীল একজন মানুষ।
“রাজনৈতিক ভাবে ‘ভদ্র’ মানুষটা চলে গেলেন বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি বলেন।
তিনি বলেন, “ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান যা পরিস্থিতি তা অবশ্য সৌভাগ্যক্রমে উনি কম দেখতে পেয়েছেন, কম শুনতে পেয়েছেন। তার জন্য যা নিঃসন্দেহে শান্তিজনক।“
প্রবীণ এই রাজনীতিকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতি তুলে ধরে বুদ্ধদেব বলেন, “চলচ্চিত্র উৎসব সংক্রান্ত কথা হয়েছে বহুবার। হাসতেন, কথা বলতেন, মজা করতেন। আমার মনে আছে, টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে একবার একটি বৈঠকে তাকে অনেক সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। উনি শুনলেন শান্ত ভাবে। রাগ, মেজাজের লেশটুকু নেই। সকলের কথা শুনে আশ্বস্ত করেছিলেন, সমস্যা সমাধানে তৎপর হয়েছিলেন।”
বুদ্ধদেবের সাদাসিধে জীবন যাপন নিয়ে প্রশংসা করে অভিনেত্রী বলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রী অনেক পুলিশ, বাউন্সার নিয়ে ঘুরবেন, এমনটাই জানি আমরা। কিন্তু তাকে দেখে কোননো দিনই মনে হয়নি, উনি মুখ্যমন্ত্রী। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা সাদামাটা মানুষ।”
“আমার কাছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মানে পশ্চিমবঙ্গের তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে দেওয়ার আর একটি নাম”, প্রয়াত এই বাম নেতাকে এই ভাষাতেই তুলে ধরেছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র।
তিনি বলেন, “তার আন্তরিক প্রচেষ্টা আজীবন স্মরণ করার মত। যদিও রাজ্যবাসী সেটা বুঝতে পারেনি। এই না বুঝতে পারাটা রাজ্যের জন্য বড় ক্ষতি।”
শোকাহত অভিনেতা জিতু কমল আবেগঘন পোস্ট দিয়েছে ফেইসবুকে। নেতার মৃত্যুতে সিপিএম ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই অভিনেতা। পোস্টে বুদ্ধদেবকে এই অভিনেতা বন্ধু, পথপ্রদর্শক এবং ঈশ্বর হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
এরই সঙ্গে জিতু জানিয়েছেন, এর পর থেকে তাকে যদি কেউ কমরেড বলে সম্বোধন করেন, তা হলে তিনি আপত্তি জানাবেন।
জিতুর কথায়, “দয়া করে একটি বারের জন্য অনুমতি চাইবেন।”
নিজেকে আর বামপন্থি হিসেবে উল্লেখ করতে নারাজ জিতু। ‘অপরাজিত’ খ্যাত অভিনেতা লেখেন, “সিপিআইএম রইলাম না আর, বুদ্ধপন্থি বলে রইল আমার পরিচয়।”
সিনেমাপ্রেমী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে ঋণী বলে জানিয়েছের পরিচালক গৌতম ঘোষ।
গৌতমের কথায় জানা গেল সত্তরের দশক থেকেই প্রয়াত রাজনীতিকের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। গৌতম যখন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমাটি তৈরি করছেন, তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী।
“ এই সিনেমা তৈরির নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বুদ্ধদেব বাবু। আমাকে সাহস জুগিয়ে বলেছিলেন এই সিনেমা তোমাকে তৈরি করতেই হবে। তার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা করব।
“কপি রাইটের সমস্যাও নিজেই মিটিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। এমনকী পদ্মা নদীতে শুটিং করার জন্য যে অনুমতির দরকার ছিল, সেটাও তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলে নিজে ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।”
গৌতম ঘোষ জানান, “বাংলায় যখন প্রথম ফিল্ম সোসাইটি তৈরি হল, তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই আমাকে ফাউন্ডার চেয়ারম্যান পদে বসালেন।