‘ধারণার চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে’ প্রাণিকুল

স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ ও কীটপতঙ্গের মত ৭০ হাজার প্রজাতি বিশ্লেষণ করে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 04:50 AM
Updated : 24 May 2023, 04:50 AM

বিশ্বে মুক্ত পরিবেশে টিকে থাকা প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা যে কমে আসছে, সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণার পর তারা বলছেন, পরিস্থিতি তাদের আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগজনক।

ওই গবেষণার বরাতে সিএনএন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মানুষ তার সভ্যতা গড়ার কর্মকাণ্ডে বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে পৃথিবী থেকে মুছে দিয়েছে, আরও অনেক প্রজাতিকে ফেলে দিয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। এ গ্রহের প্রায় অর্ধেক প্রজাতির জনসংখ্যা এখন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলছেন, পৃথিবীর ইতিহাস ষষ্ঠবারের মত একটি গণবিলুপ্তির অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, আর এবার এর পেছনে মানুষই দায়ী।

খামার, শহর-নগর আর রাস্তাঘাট নির্মাণ বিশ্বে বন্যপ্রাণীর আবাস্থল ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরির্ব্তনও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা যত বাড়ছে, বন্যপ্রাণীর ওপর এর বিরূপ প্রভাবও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ ও কীটপতঙ্গের মত ৭০ হাজার প্রজাতির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন গবেষকরা। প্রাণী জগতে এসব প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে না কমছে, নাকি স্থির অবস্থায় আছে- সেটি জানতেই এ গবেষণা করেন তারা।

বায়োলজিক্যাল রিভিউ জার্নালে সোমবার প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৮ শতাংশ প্রজাতির জনসংখ্যা কমছে। সেখানে মাত্র ৩ শতাংশের সংখ্যা বাড়ছে।

গবেষণা দলের সহ-লেখক বেলফাস্টের কুইন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ড্যানিয়েল পিনচেরা-ডনোসো জানান, তাদের গবেষণার ফলাফল ‘ভয়াবহ সতর্ক বার্তা’ দিচ্ছে।

সিএনএনকে তিনি বলেন, অল্প সংখ্যক প্রজাতির ওপর চালানো অন্যান্য গবেষণাতেই দেখা গিয়েছিল, বন্যপ্রাণীর চলমান ‘অস্তিত্ব সংকট’ সাধারণ ধারণার চেয়ে বেশি গুরুতর।

“আর আমাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বণ্যপ্রাণী বিলুপ্তির ওই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা পুরো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই সত্যি।”

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যে ক্ষয়ের মাত্রা কতটা প্রকট, এ গবেষণা তার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে বলে জানান পিনচেরা-ডনোসো।

তিনি বলেন, কয়েক দশক ধরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বন্যপ্রাণীগুলোকে ‘সংরক্ষিত’ ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে আসছে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। এই প্রক্রিয়ায় আইইউসিএন তাদের রেড লিস্টে ২৮ শতাংশ প্রজাতিকে বিলুপ্তির হুমকির তালিকায় যুক্ত করেছে।

নতুন এই গবেষণার মূল্যায়নে বলা হয়েছে, আইইউসিএন এর রেড লিস্টে ‘ঝুঁকিহীন’ শ্রেণিতে থাকা ৩৩ শতাংশ প্রজাতিও ক্রমশ কমতে কমতে বিলুপ্তির ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে।

স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গ প্রজাতি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে উভচর প্রজাতি সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগবালাই আর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাসহ নানা হুমকির মুখে রয়েছে সেগুলো।

তবে গবেষণায় স্বস্তির খবর রয়েছে মাছ আর সরীসৃপের ক্ষেত্রে। এগুলোর অনেক প্রজাতির জনসংখ্যা কমার পরিবর্তে এখনও স্থির অবস্থায় রয়েছে।

এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত না থাকা যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রেন্ডন গডলি সিএনএনকে বলেন, “বন্যপ্রাণী ও জীবের জনসংখ্যা হ্রাস সম্পর্কে এই গবেষণা নতুন অন্তর্দৃষ্টি দিচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, যেখানে বিশ্বের সকল মেরুদণ্ডী ও পতঙ্গ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।”