নতুন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রায় ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2023, 02:07 PM
Updated : 11 May 2023, 02:07 PM

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার যে এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে জোগান দেওয়া হবে ৬৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি উৎস থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে বাকি ৩৬ শতাংশ বা ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়াও বৈঠকে আগামী অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রায় ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। সবমিলে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মান্নান বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, কর্মসৃজন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পসমূহ, দারিদ্র বিমোচন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নতুন এডিপির আওতায় ১ হাজার ৩০৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১১৮টি, সমীক্ষা প্রকল্প ২২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৮৯টি প্রকল্প।

Also Read: অনুমোদনের অপেক্ষায় নতুন এডিপি, সর্বোচ্চ বরাদ্দ রূপপুরে

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বরাদ্দের বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগকে, প্রায় ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

রেলপথ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের প্রায় ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ১৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে প্রায় ৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং সেতু বিভাগকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বা এডিপির ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এই ১০ মন্ত্রণালয়কে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের প্রায় ৭৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

খাতভিত্তিক বরাদ্দের তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত বলেন, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ প্রায় ৭৫ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে- প্রায় ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা খাতে।

এছাড়া গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাতে প্রায় ২৭ হাজার ৪৬ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাত ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বা প্রায় ৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।

শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাত পেয়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ বা ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। 

এই দশটি খাতে প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা নতুন এডিপির প্রায় ৯২ দশমিক ৩০ শতাংশ।