বিবিএসের কাজে অসন্তুষ্টিই বেশি: জরিপের ফল

সরকারি সংস্থাটি প্রথমবারের মত চালানো জরিপে জানতে চেয়েছিল, তাদের তথ্য উপাত্ত নিয়ে অন্যরা কী ভাবে। উঠে এসেছে, ‘তথ্যের মান ভালো’। তবে যথেষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে না তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 03:36 PM
Updated : 15 March 2023, 03:36 PM

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যেসব তথ্য সরবরাহ করছে তা চাহিদার তুলনায় কম বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

বিবিএস এর নিজেদের করা ওই জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতাই তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন।

এই অসন্তুষ্টির কারণ হচ্ছে, বিবিএস কাজ করে সীমিত সংখ্যক বিষয় নিয়ে। তবে গবেষণা বা নীতি নির্ধারণী অন্য কাজে জড়িতরা চান আরও বিস্তৃত পরিসরের তথ্য উপাত্ত। কিন্তু তা দিতে পারছে না সরকারি এই সংস্থাটি।

অবশ্য বিবিএস যেসব বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন দেয়, তা নিয়ে অসন্তুষ্টি কমই পাওয়া গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০০ জনের ৮৫ জনই বলেছেন, বিসিএস যেসব তথ্য উপাত্ত দেয়, তার মান নিয়ে তাদের আপত্তি নেই।

বিবিএস এর ‘ইউজার স্যাটিফিকশন সার্ভে ২০২২’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য এসেছে। প্রথমবারের মত এই জরিপটি করেছে সংস্থাটি।

২০২২ সালের ২৭ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান এবং ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তিকে ফরম দেয় বিবিএস। জবাবসহ ফিরে এসেছে ৫৮০টি।

উত্তরের ১৬৫টি ফরম এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে গবেষক, শিক্ষক, ছাত্র সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন ১৬০ জন। ৩৫টি গণমাধ্যম, ৪০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জরিপটি করা হয়েছে যে প্রকল্পের অধীনে, তার পরিচালক দিলদার হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, “বিবিএস বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের প্রয়োজন ও নীতি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে। আবার বিবিএসের এসব তথ্য উপাত্ত নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের নীতি কৌশলে ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ বিবিএস এর জরিপ থেকে বের হয়ে আসা উপাত্তগুলো নিয়ে গবেষণা এবং নীতি নির্ধারণে ব্যবহার হয়।

“সরকারি পরিসংখ্যানের উন্নয়ন, ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে ব্যবহারকারীদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ এবং ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিবিএস এর তথ্য উপাত্ত নিয়ে সন্তুষ্ট কি না জানার জন্যই মূলত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।”

বিবিএসের তথ্যের ‘মান ভালো’

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরে পরিচালক দিলদার বলেন, “বিবিএস এর উপাত্ত ব্যবহারকারীগণের মধ্যে প্রায় ৮৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যবহারকারী বিবিএস এর তথ্য উপাত্ত সার্বিভাবে ‘সন্তোষজনক’ বলে জানিয়েছেন।

এর মধ্যে ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ ‘খুব ভালো’ এবং ৭২ দশমিক ৯৯ শতাংশ ‘সার্বিকভাবে ভালো’ বলে মত দিয়েছেন।

বিবিএস থেকে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সন্তুষ্টির মাত্রা বিবেচনায় ৬৭ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যবহারকারী সন্তুষ্টির কথা বলেছেন।

তাহলে বেশিরভাগের অসন্তুষ্টির কারণ কী? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় দিলদার বলেন, “জরিপে বিবিএস যে পরিমাণে বা যত ধরনের তথ্য সরবরাহ করছে, সেই পরিমাণ তথ্য নিয়ে ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট কি না- এ রকম একটা প্রশ্ন ছিল। এর উত্তরে ব্যবহারকারীদের ৬৫ শতাংশ অসন্তুষ্ট এবং ৩৫ শতাংশ সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন।”

দিলদার বলেন, ব্যবহারকারীরা কোন মাধ্যমে বিবিএস তথ্য নিয়ে থাকেন এই প্রশ্নের উত্তরে ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ ব্যবহারকারী বলেছেন তারা বিবিএস-এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।

প্রায় ৩৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা গত ২৪ মাসে প্রায় ২ থেকে ৫ বার বিবিএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ব্যবহারকারীদের ৭০ দশমিক ০৯ শতাংশ বিবিএসের পরিসংখ্যানকে ‘উপযোগী’ এবং ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ‘খুবই উপযোগী’ হিসেবে মত প্রকাশ করেন।

জরিপের সমালোচনায় প্রতিমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমই এই জরিপের সমালোচনা করেছেন। তার দৃষ্টিতে, ‘কম নমুনা’  নিয়ে এই জরিপ চালানো হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভুটানের মত দেশে এই রকম জরিপে ৮৬০টির বেশি নমুনা গ্রহণ করা হয়। সেই হিসাবে আমাদের নমুনা কম হয়েছে। পরের জরিপগুলোতে নমুনা আরও বাড়ানো উচিত।”

ভবিষ্যতে জরিপের পরিসর আরও বাড়বে, এমন প্রত্যাশার কথাও জানিয়ে রেখেছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, “সরকারি উপাত্তের ওপর ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি এই জরিপের মূল পাওয়া। ব্যবহারকারীরা বিবিএস এর ডেটা যে নির্ভরযোগ্য মনে করে, তাও আমরা জানতে পারলাম।

“বিশেষ করে এই জরিপের মাধ্যমে তথ্যের জন্য বিবিএস এর দরজা যে কারও জন্য বন্ধ নয়, সেটাও ব্যবহারকারীরা জানতে পেরেছেন।”